প্রিয় মুজিব কোটঃ বাটপার-লুটেরাদের গায়ে

0

জুবায়ের সিদ্দিকী, সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এখন মুজিব কোটের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বিশেষ বিশেষ দিনে বা ছোটখাট যে কোন অনুষ্ঠান ও জনসমাবেশ হলেও নানা রং এর মুজিব কোট এর দেখা মেলে। মুজিব কোট এখন শুধু বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরাই পরিধান করেন না, এটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য গায়ে পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশু অপহরণকারী, প্রতারক, ক্যাসিনো বাণিজ্যের হোতা, ভূমিদস্যূ, টেন্ডাবাজ, চাঁদাবাজ, মানব পাচারকারী, সরকারী জমি দখলদার, আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, সরকারের বরাদ্ধের অর্থ লুটেরা, মাদক কারবারী, রংবাজ, চাটুকার ও ব্যাংক লুটেরা। এরা অসৎ উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সুনাম ও ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য শুধুমাত্র নিজেদের জাহির ও স্বার্থ সিদ্ধির জন্য গায়ে চাপিয়েছে প্রিয় মুজিব কোট।

অনুসন্ধানে জানা যায়নি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই কোটটি কবে থেকে পরতে শুরু করেছিলেন। মুজিব কোট মূলতঃ নেহেরু জ্যাকেটের একটি সংস্করণ। যা ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু পরতেন। অনেকের মতে বঙ্গবন্ধু ছয় বোতাম বিশিষ্ট এই কোটটি পরতেন। যা ১৯৬৬ এর ছয়দফা দাবীর সাথে সম্পর্কিত ছিল।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন আইনজীবি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ১৯৬৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই স্বতন্ত্র নকশার ৬ বোতামের পোশাকটি পরতে শুরু করেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর মুজিবকোর্ট পাকিস্তান আমলে খুব কম সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মী পরতেন। কারণঃ এতে করে পাকিস্তানী শাসকরা চিনে ফেলতেন কে কে মুজিবের অনুসারী। যারা অন্তরে মুজিবের আদর্শ ধারণ করতেন, বাংলার মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন তাদের নেতার মত নির্ভয় নিঃসংকোচ চিত্তে তারাই মুজিব কোট পরে রাস্তায় বেরুতেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর খুব কম সংখ্যক নেতা মুজিব কোট পরে বের হতেন। বর্তমানে তরুন প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মুজিব কোট। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করেন তারাও এই কোট ব্যবহার করছেন। বঙ্গবন্ধুর বক্তদের কাছে এই কোট ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার সামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবীর সাথে মুজিব কোট বঙ্গবন্ধুর আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আমারা যখন আজ আদালতের বারান্দায় দেখি, খুন, ধর্ষণের আসামী মুজিব কোট পরে হাজিরা দেয়। সাহেদ যখন মুজিব কোট পরে শ্রেষ্ঠ প্রতারক বনে যায়, শিশু অপহরণকারী নুর নাজমা আক্তার লোপা তালুকদার, যার নামে খুন, অপহরণ, শিশু পাচারের অভিযোগ আছে। তাদেরকেও মুজিব কোট পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই শুধু নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায় এখন এটাই মনে হয় এ এক সাহেদের লেডি ভার্ষণ।

সারাদেশে এমন হাজারো  সাহেদ, লোপারা মুজিব কোট এর অপব্যবহার করে করছে নানা জগন্য অপরাধ। বিভিন্ন দল থেকে এসে মুজিব কোটধারী হয়ে এখন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা। বঙ্গবন্ধুর পোষাককে বিকৃত করে ছবি পোষ্টার করে বিতর্কিত হয়েছিলেন চট্টগ্রামের এক সংসদ সদস্য। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদীরা এই মুজিব কোট ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করছে।

আওয়ামী লীগেকে এ ব্যাপারে এখনি কঠোর পদক্ষেপ ও ড্রেস কোড এর আইন করে মুজিব কোটকে অবব্যবহার করে কেউ যেন ফায়দা নিতে না পারে সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.