সচিবকে অর্ধডজনবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরও নীতিমালা হয়নিঃ কাদের

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে কমপক্ষে অর্ধডজনবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরও সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে নীতিমালা হয়নি।

সোমবার (৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং দফতর প্রধানের সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সম্প্রতি আমি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ১০টি জোন, বিআরটিসি, বিআরটিএ, ডিটিসিএসহ প্রধান প্রধান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বিষয়ক সভায় সবার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কথা বলেছি। এর অংশ হিসেবে আজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসলাম।

মন্ত্রী বলেন, আমি যে বিষয়গুলো সবসময় বলে আসছি বা পর্যালোচনা সভাগুলোতে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলাম, সেগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি কতটুকু তা সচিব সাহেব জানাবেন। যেহেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দফতর প্রধানরা উপস্থিত আছেন, তাই কিছু বিষয়ে আমি আবারও কিছু কথা বলতে চাই।

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ঢাকা এয়ারপোর্ট সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়টি নিয়ে কতবার বলেছি। অর্ধযুগ প্রায় শেষ হতে চলেছে, কিন্তু নীতিমালার কাজ শেষ হয়নি। একটি নীতিমালা করতে কত বছর লাগে, এমন একজন দক্ষ কর্মকর্তা কি এই বিভাগে নেই? সচিব সাহেবকে কমপক্ষে অর্ধডজনবার আমি স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। আমি জানি না আপনাদের নির্দেশনাগুলো যখন দেই, তখন নোট নেন কি-না। এ বিষয় নিয়ে আর বলতে চাই না। আপনাদের বিবেকের কাছেই প্রশ্ন রাখলাম।

তিনি বলেন, প্রথমত আমি সড়কের কাজের গুণগত মানের কথা বলেছিলাম। এটি এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কাজের মান নিয়ে ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা আর দায় এড়াতে পারবেন না। যারা মনিটরিংয়ে থাকবেন তাদেরও দায়বদ্ধ করতে হবে। এ নিয়ে আমি একটি নির্দেশনা জারির কথা বলেছিলাম সচিব সাহেবকে।

এরপর আসুন নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করা। অভিযোগ আছে প্রকৌশলী ঠিকাদার যোগসাজশে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সময়মতো কাজ শেষ করে না ব্যয় বাড়ানোর জন্য। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা নষ্ট হয়, অর্থের অপচয় তো হয়ই। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মধ্যমেয়াদি বাজেট পরিকল্পনা। এ বিষয়টিকে সিরিয়াসলি দেখতে হবে।

অনেকে প্রকল্পের ধীরগতি বা সময়মতো শেষ না হওয়ার জন্য ভূমি অধিগ্রহণে অহেতুক বিলম্বের কথা বলেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ কথার সত্যতা অনেক জায়গায় আমি পেয়েছি। আবার প্রকল্প পরিচালকের যতটা অ্যাক্টিভলি কাজ করার কথা, সমন্বয় করার কথা, সেখানেও একটা ঘাটতি রয়েছে। তাই আমি এ বিষয়ে একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশনা দিচ্ছি।

তিনি বলেন, এরপর আসুন কর্মকর্তা প্রকৌশলীদের ফিল্ড ভিজিট এবং প্রকল্প এলাকায় অবস্থান। অনেকে ভুলে থাকতে চান যে, তার কাজ মাঠ পর্যায়ে। সবাই ঢাকায় থাকতে ভালোবাসেন। এই বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা জারির কথা বলেছিলাম। যেখানে কর্মস্থল সেখানে অবস্থান, এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।

মহাসড়কে সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘চার লেনের নতুন সড়ক হচ্ছে, কিন্তু সড়কের দিকে তাকানো যায় না। ফেস্টুন, ব্যানার ঝুলে পড়েছে। বহুদিন আগের ব্যানারও সড়কপথে দেখতে পাই। সাইন-সিগন্যালও কোথাও কোথাও ঠিক মতো নেই। আমি যেদিকে ভিজিটে যেতাম, দেখতাম সেখানে একটা দুইটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, পাশে চুলায় আগুন জ্বালিয়ে রাখে। আমি ফিরে আসি তো আর কেউ নেই। আমি রাজনীতির মানুষ, এসব বুঝতে আমার অসুবিধা হয় না।’

‘মহাসড়ক, সড়কের বিভাজক পরিষ্কার রাখতে হবে, ব্যানার-ফেস্টুন রাখা যাবে না। কেউ বাধা দিলে আমাকে জানাবেন। যে বিভাগের সড়ক অপরিষ্কার থাকবে, সেই নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায় নিতে হবে। এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দিন।’

তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের ওপর ময়লার ভাগাড়। মোগড়াপাড়া, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, নবীনগর, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশন আর পৌরসভা ময়লা ফেলে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে পাশে চলা যায় না। বিদেশিরাও এ সকল সড়ক ব্যবহার করে। তখন তাদের ইম্প্রেশনটা কেমন হয়- আপনারা কী একবার ভেবে দেখেছেন?’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি নির্দেশনা দিয়েছিলাম সচিব সাহেবকে পরিবেশ অধিদফতরসহ পার্শ্ববর্তী সকল সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাকে নিয়ে বসতে। বসেছেন কি-না জানি না, আমি জানতে পারিনি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা শহরের অনেক স্থানে সড়কের জায়গা আছে, তাই বলে কি ভবনের পর ভবন তুলতে হবে? পুরো শহরজুড়ে সড়কের অফিস। যত প্রকল্প তত ভবন। বেইলি রোড, মিরপুর, উত্তরা, শ্যামলী, এলেনবাড়ি, তেজগাঁও—কোথায় নেই? তাহলে এত বড় সড়ক ভবন কেন? ডিটিসিএ’র এত বড় ভবন কেন? আমি প্ল্যানিং শাখাকে বলছি, আর কোনো অযৌক্তিক ভবন প্রকল্পে ধরা যাবে না। সড়ক ভবনের দুটি ফ্লোর বা একটি ব্লক প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত রাখুন। সেই ব্লকে থাকবে প্রকল্পের অফিস।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিএ’র কথা কী বলব! সকল অর্জন এক ড্রাইভিং লাইসেন্সের কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ । প্রতিদিন শত শত রিকোয়েস্ট, আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে বলবো দ্রুত কার্ড সংগ্রহ করুন। প্রথমে অল্প কিছু হলেও সরবরাহ দিন। ব্যাকলগ যা আছে তা ক্লিয়ার করুন। অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। সেবাসমূহ অনলাইনে যাওয়ায় সেবা গ্রহণে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করি।’

তিনি বলেন, ডিজিটাল ফিটনেস পরীক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করতে বিভাগীয় পর্যায়ে পিআইসি (গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষায় স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা) স্থাপনের উদ্যোগ নিন। বিআরটিএ নিয়ে কে কোথায় কী করছেন সব রিপোর্ট আমার কাছে আছে। আমি চেয়ারম্যানকে আবারও বলেছি, শক্ত হাতে হাল ধরুন। প্রধানমন্ত্রী চান এ প্রতিষ্ঠানটি সত্যিকার অর্থে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হোক। বিআরটিএ যেন হয়রানির কারণ না হয়।

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার এবং চ্যালেঞ্জ। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের এখন বড় দুর্ভাবনা। মহাসড়কের ছোট এবং নন-মোটরাইজড যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়টি কঠোরভাবে কার্যকর করা জরুরি।

এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.