শীঘ্রই নগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা আসছে

0

গোলাম শরীফ টিটু, সিটি নিউজঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে কিসের নির্বাচন? প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে কী হবে? দ্রুত দল গোছাতে হবে। নতুন কমিটি করতে হবে। দলকে চাঙ্গা করতে হবে। স্কাইপে চট্টগ্রাম নেতাদের সাথে বৈঠকে এমন কথাই বললেন।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির কমিটি নিয়ে মতামত চাইলে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারীরা নির্বাচনের পরে কমিটি ভাঙ্গার অনুরোধ করলে তারেক রহমান ধমকের সুরে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

গত ৯ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত চলা স্কাইপে বৈঠকে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতাদের মধ্যে শাহাদাতপন্থী নেতারা ছিলেন অনেকটা অসহায় অবস্থায়। ফলে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে মহানগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচনের আগেই ঘোষণা হতে পারে দলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি। এতে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর সদস্য সচিব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক সূত্র।

বিএনপি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন সদস্যের ওই কমিটিতে ডা. শাহাদাত হোসেন সভাপতি, আবু সুফিয়ান সহ-সভাপতি ও আবুল হাসেম বক্কর সাধারণ সম্পাদক হন। এর এক বছর পর ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। দুই বছর মেয়াদের ওই কমিটির ইতোমধ্যে ৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ কারণে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও চসিক নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে যায়। কিন্তু করোনার কারণে চসিক নির্বাচন পিছিয়ে গেলে নতুন করে আলোচনায় আসে মহানগর বিএনপির কমিটি।

এ নিয়ে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত ৯ অক্টোবর শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ৫৫ জন নেতৃবৃন্দের সাথে লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে একটানা রাত দেড়টা পর্যন্ত ওই বৈঠকে প্রত্যেক নেতার সাথে লন্ডন থেকে স্কাইপে আলাদাভাবে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন ছাড়াও কাদের ওই কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা যায় সে ব্যাপারেও নেতাদের কাছ থেকে মতামত চান তিনি। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ নেতৃবৃন্দ নতুন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেন এবং সদস্য সচিব হিসেবে আবুল হাশেম বক্করের নাম প্রস্তাব করেন বলে জানা গেছে। একই সাথে আহ্বায়ক কমিটির পরিধি যথাক্রমে ৫১, ৬১ এবং ৭১ সদস্যের করারও প্রস্তাব করেন নেতারা।

সূত্র আরো জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে স্কাইপে ওই বৈঠকে মহানগর বিএনপির সভাপতি, সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগরীর ১৫ সাংগঠনিক থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে ৬৫ জন নেতাকর্মীর মধ্যে ৫৫ জন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত নগর বিএনপির সহসভাপতি আবু সুফিয়ান বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় অফিসে স্কাইপের মাধ্যমে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ। একই সাথে তারা আহ্বায়ক কমিটিতে ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব হিসেবে নাম প্রস্তাব করেন বলে।

আবু সুফিয়ান বলেন, আশা করছি চসিক নির্বাচনের আগেই নগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হতে পারে। নতুন আহ্বায়ক কমিটি তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করবে।

দলের যুগ্ম-সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন বলেন, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে গতিশীল করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মহানগর নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত দিয়েছেন। বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মূল জায়গায় রেখে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মতামত দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে নির্দেশনা দিয়ে ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তিন সদস্যের চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণা করেছিল দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। এক মাসের পরিবর্তে ১১ মাস সময় নিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ১৫১ সদস্যের স্থলে ২৭৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। নিজেদের ৪ বছর দুই মাস সময়ে আকবরশাহ ও ডবলমুরিং থানা কমিটি ঘোষণা করতে পারলেও অন্য থানাগুলো থেকে তিন থেকে পাঁচজনের কমিটি।

মেয়াদ শেষে কোতোয়ালী থানা কমিটি ঘোষণা দিয়েছিল নগর কমিটি। অন্যান্য চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদের কমিটি ঘোষণা করতে চাইলে তাদের সেই ক্ষমতায় লাগাম টানা হয় মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে। হাইকমান্ড থেকে শাহাদাত-বক্করের স্বাক্ষর ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে শুধু নিয়ম রক্ষার কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবার স্কাইপে বৈঠকে তাদের তুলাধূনা করে কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি সামনে এসেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.