অপরাধ কমাতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই

0

সিটি নিউজঃ মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো অনেক এজেন্ডা। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। এ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এসডিজি অর্জনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ ইস্যুভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে অবদান রাখছে।

স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসাও এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশীদার। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সামাজিক সচেতনতার জন্য এনজিওসমূহ তৃণমূল পর্যায়ে খুব বেশী অবদান রাখছে। অপরাধ কমাতে সামাজিক সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম।

ইপসা’র উদ্যোগে ডয়েচে ভেলে একাডেমি’র সহযোগিতায় ‘কমিউনিটি কমিউনিকেশন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ফর সোশ্যাল এ্যাওয়ারনেস’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপরোক্ত মন্তব্য প্রদান করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজারে যা আছে তা অন্য জেলাতে নেই। কিন্তু কিছু ছোটখাটো সমস্যা অসংখ্য সম্ভাবনাকে ঢেকে রেখেছে। আমাদের সচেতনতার পাশাপাশি সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে হবে।

আজ অক্টোবর (১৪ অক্টোবর) সকালে কক্সবাজার অরুণোদয় স্কুলের সম্মেলন কক্ষে উদ্বোধনী সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সমুদ্র সৈকতের অঢেল সম্পদ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। কক্সবাজারে যে সব উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে তাতে দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বদলে যাবে।

তিনি বলেন, সামাজিক অসঙ্গতি ও অপরাধ নির্মূলে সামাজিক সচেতনতা দরকার। অধিকাংশ মানুষের মাঝে ন্যায়বোধ ও সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে সমস্যার সমাধান হবে। এগিয়ে যেতে হলে নতুন প্রজন্মকে নীতি নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের শিক্ষার গুরুত্ব দেন জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, এখানে সমস্যা আছে, ঠিক। কিন্তু সমস্যাগুলো ছোটভাবে দেখে সম্ভাবনাসমূহ বড় করে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। সামাজিক অনাচার, অপরাধগুলোকে প্রতিরোধ করতে নৈতিকতাকে আরো বেশি বলিয়ান করা দরকার। মূল্যবোধের বিষয়গুলো বেশি বেশি চর্চা করতে হবে।

ইপসা’র আঞ্চলিক প্রধান ও উপ-পরিচালক খালেদা বেগমের সভাপতিত্বে প্রকল্প উদ্বোধনীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ মাহবুবর রহমান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক মোঃ সহীদ উল্লাহ।

বক্তব্য দেন ডয়েচে ভেলে একাডেমির কো-প্রজেক্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম খান। ইপসার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইপসা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রজত বড়ুয়া রিকু, ফোকাল পার্সন মোহাম্মদ হারুন, ফিন্যান্স ম্যানজোর এনায়েত মওলা, উপজেলা ম্যানেজার আবিদুর রহমান সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুভেচ্ছা স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইপসা-ডয়েচে ভেলে একাডেমি প্রকল্পের ফোকাল পার্সন যীশু বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে “কমিউনিটি কমিউনিকেশন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ফর সোশ্যাল এ্যাওয়ারনেস” প্রকল্প স্মারকে স্বাক্ষর করেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। এরপর প্রকল্পের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিহাব জিসান।

তিনি জানান, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ ও সমাজকল্যাণমূলক সংবাদ পরিবেশনের দক্ষতা বৃদ্ধি, যুবকদের প্রশিক্ষণ বিশেষ করে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি, জীবন মান বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান, সচেতনতা তৈরী এবং ব্যাপক গণসচেতনতার জন্য সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন ইস্যুর উপর বিষয়ভিত্তিক নাটিকা, কথিকা, গল্পভিত্তিক আলোচনা তৈরী ও প্রচার করা। স্থানীয় পর্যায়ে রেডিওতে প্রচারের জন্য নির্মিত হচ্ছে ‘পালংয়ের হথা।’

উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, পেশাজীবি ও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় কোস্ট ট্রাষ্টের মোহাং জাহাঙ্গীর আলম, সলিডার সুইস’র বিজয় বিশ্বাস, অক্সফ্যাম’র আশুতোষ দে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের বশিরুল হক, সেভ দ্যা চিলড্রেন’র মোঃ শফিকুল ইসলাম, মেঘনা ফাউন্ডেশনের আবদুল্লাহ আল মামুন, রাজনৈতিক কর্মী আবুল কাশেম বাবুল, এপিপি এডভোকেট সাকী-এ-কাউছার প্রমূখ।

উল্লেখ্য যে, ইপসা ১৯৮৫ সালে আন্তর্জতিক যুব বর্ষে প্রতিষ্ঠা লাভ করে প্রায় ৩ যুগের অধিক কাল ধরে বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে এবং ২০১৭ সাল থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক (এফডিএমএন) বা রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

ইপসা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো’র নিবন্ধিত একটি বেসরকারি সমাজ উন্নয়ন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পাশাপাশি ইপসা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহযোগি সংস্থা হিসাবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কার্যক্রম এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ)’র প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সহযোগি সংস্থা হিসেবে সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইপসা জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ “United Nations Economic and Social Council (UN ECOSOC)” এর কনসালটেটিভ স্ট্যাটাস প্রাপ্ত একটি স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহযোগি সংস্থা হিসেবে ইপসা তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহার ও উন্নয়ন এবং তথ্য প্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের প্রবেশগম্যতা বিষয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইপসা ২০০১ সাল থেকে কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এ এলাকার স্থানীয় সংগঠন হিসেবে ইপসা ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক (এফডিএমএন) বা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ইপসা বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন ও মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। করোনা মহামারীর এ সময়ে কক্সবাজার জেলার উখিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও রামু উপজেলায় জরুরী মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় খাদ্য সহায়তা এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রদানের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.