চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠন গ্রুপিং-দ্বন্ধে বিভক্ত
গোলাম শরীফ টিটু,সিটি নিউজ : গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব ও বিভিন্ন নেতার পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন। তৃনমুলে দলের বিশাল কর্মী বহিনী ও জনপ্রিয়তা থাকার পরও নেতাদের মেরুকরন রাজনীতির কারনে বিভিন্ন ইউনিটে বিরাজ করছে হতাশা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা।
দলের দু:সময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষীত নেতাদের মুল্যায়ন না করা এবং দলীয় পদ-পদবীতে না রাখায় ভাটা পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে। দলীয় সুত্র মতে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম ও সাধারন সম্পাদক হন শেখ আতাউর রহমান। কিন্তু গত ১১ মাসেও পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি সভাপতি-সাধারন সম্পাদক।
তবে নতুন কমিটি প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও তা অনুমোদন হয়নি। এর মধ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে প্রস্তাবিত কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী ও সুযোগসন্ধানীদের পদ-পদবী দেওয়ার অভিযোগ করেন জেলার ৮ নেতা। এর সত্যতা স্বীকার করেন,’ বিগত কমিটির নির্বাহী সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা শাহনেওয়াজ চৌধুরী।তিনি বলেন,’ যারা দলের দু:সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তাদেরকে দায়িত্¦ দিতে হবে। আমরা প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। নেত্রী মনোযোগ দিয়ে আমাদের অভিযোগ শুনেছেন’।
অপরদিকে ২০০৩ সালে মফিজ উদ্দিনকে সভাপতি ও শফিউল আজমকে সাধারন সম্পাদক করে উত্তর জেলা যুবলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। ২০১২ সালে সীতাকুন্ডের এস.এম আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও হাটহাজারীর এইচ.এম রাশেদুল আলমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক করা হয়।
বিগত ৮ বছর ধরে এ দুই নেতা উত্তরজেলা যুবলীগের সর্বেসর্বা। পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা না হওয়ায় হতাশা এখন যুবলীগের ত্যাগী নেতাদের মধ্যে। কেন্দ্র থেকে বিগত এপ্রিল মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসলেও করোনার কারনে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে। অনেক নেতার অভিযোগ, উত্তর জেলা যুবলীগের ২০০৩ সালে গঠিত কমিটির অনেক নেতা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। কেউ কেউ নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। ফলে তাদের মধ্যে যুবলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই। উত্তর জেলা যুবরীগের এক নেতা বলেন, ’কেন্দ্র যখনই চাইবে সম্মেলন করে পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তবে করোনাজনিত কারণে আপাতত সম্ভাবনা দেখছি না’। নেতাদের মতে, ইতিমধ্যে ৫টি ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। মিরসরাই ও ফটিকছড়িতেও দ্রুত কমিটি গঠন করা হবে। আবার ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংঘর্ষে সম্মেলন মাঝপথে পন্ড হয়। পরে একই বছরের ৫ মে মিরসরাই এর তানভির হোসেন তপুকে সভাপতি ও ফটিকছড়ির রেজাউল করিমকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি ঘোষনা করেন সোহাগ-জাকির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য এ কমিটি অনুমোদন দিলেও দীর্ঘ আড়াই বছরেও পুর্নাঙ্গ কমিটি হয়নি। পুর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কর্মসুচী পালন ছাড়া বড় ধরনের কোন সভা-সমাবেশ করতে পারেননি সংগঠনের নেতারা। এদিকে পুর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং খুড়ে খুড়ে খাচ্ছে ছাত্রলীগকে।
এরই মধ্যে গত শনিবার ১৭ অক্টোবর মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করে জেলা ছাত্রলীগ। নতুন কমিটিতে মাসুদ করিম রানাকে আহবায়ক করা হয়। কমিটির অন্যান্য আহবায়করা হলেন যুগ্ন আহবায়ক একরামুল হক সোহেল, আজাদ রুবেল, জাফর ইকবাল নাহিদ, আরিফুল ইসলাম, ফাহিমুল হুদা, মিথুন শর্র্মা ও সদস্য রিফাত হোসেন সাদ্দাম।
এ কমিটি ঘোষনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টা থেকে এই সংঘাতের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১০ জন নেতাকর্মী ও পথচারী আহত হয়। পদবঞ্চিতদের একাধিক নেতার অভিযোগ. ’উত্তর জেলা ছাত্রলীগ দুইজনের কাছে লিজ দেয়া হয়েছে। বড় নেতাদের দেয়া কমিটির নেতা ওরা। দলীয় একাধিক প্রবীন নেতাদের অভিমত,’ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে গতিশীলতা আনতে হলে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের পদায়ন করে পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনার বিকল্প নেই। না হয় ক্রমশ সংঘাত বাড়তে থাকবে।