সরকার কঠোর অবস্থানে দিশাহারা বিএনপি

0

জুবায়ের সিদ্দিকী, সিটি নিউজঃ বড় ধরনের কোনো অঘটন ছাড়াই ঢাকা-৫ এবং ১৮ আসনের উপ-নির্বাচন সম্পন্ন হলেও হঠাৎ বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও পাল্টাপাল্টি দোষারোপ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রেক্ষাপট বিবেচনা ও অডিওর সূত্র ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরাই যে এর সঙ্গে জড়িত, সেটা প্রমাণ করা সময়সাপেক্ষ।

এদিকে পুলিশের দায়ের করা মমলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসামি ও গ্রেপ্তার করায় অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বিএনপি। বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে সিরিয়াসভাবে নিয়ে সরকার এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে যেমন আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর, তেমনি আচমকা এ ধরনের নাশকতামূলক মামলায় নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার ও আসামি হওয়ায় বিএনপি দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। অনেকে আবার সরে আছেন মামলা বা পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য। বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দলীয় নেতকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএনপি দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সেটা সফল করা নিয়ে দলের শীর্ষ মহলই ভাবনায় পড়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনের অংশ নেয় নাশকতা করার জন্য। নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালান না, মানুষের কাছে যান না, ভোট চান না, নির্বাচনের দিন কেউ আসেন না, এজেন্টও দেন না। তাহলে মানুষ ভোট দেবে কীভাবে। তারা হেরে যাওয়ার জন্যই নির্বাচনে অংশ নেয়, যাতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াতে পারে। কিন্তু তাদের এই অশুভ পরিকল্পনা জনগণ জেনে গেছে।

বিএনপি-জামায়াতের এসব নাশকতামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত ১৪ মামলায় অন্তত ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ঢাকা ১৮ উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুক রহমানসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর অনেক নেতাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক কোনো কর্মসূচিতে সরকারের পক্ষ থেকে বাঁধা দেওয়া হবে না। তবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করা হবে। অগ্নিসংযোগ বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যারা মানুষের জানমালের ক্ষতি করে, তাদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাশকতাকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরাী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও তৎপর রয়েছে।

সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, এ ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করা হচ্ছে। জড়িতদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের অনেকেই এর আগেও বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।

শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু কথোপকথন পাওয়া গেছে। এতে শোনা যায়, ফলাফল মেনে নিতে পারেনি বলেই বিএনপি এমনটি (বাসে আগুন দেওয়া) করেছে। যেখানেই তারা পরাজিত হয়েছে, সেখানেই তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করেছে। তাদের গ্রেপ্তারে নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর রয়েছে। যারা নাশকতা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

একইদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাস পোড়ানোর ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে, সবই পুরানো এবং চেনামুখ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ফোনালাপের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছে পুলিশ। নির্বাচন ও আন্দোলনে জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি আবারও আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়ে প্রতিশোধ নিতে চাইছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির অতীত ষড়যন্ত্র তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হত্যা ও সন্ত্রাসের। নিকট-অতীতেও তারা পেট্রোল বোমা এবং আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যার মহোৎসব করেছিল। ২০১৩ সালে যাত্রীবেসে বাসে ওঠে গান পাউডার দিয়ে যেভাবে আগুন দিয়েছে, এবারও তারা সেভাবেই আগুন দিয়েছে।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করছে। শনিবার এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি কোনো সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। বিএনপি গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে বলেই এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এও বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে। অন্য কোনোভাবে সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তাও করে না। উপনির্বাচনের দিন রাজধানীতে নাশকতায় বাসে আগুন লাগানোর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করেন তিনি।

অপরদিকে, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনার পর তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। শুক্রবার ছাত্রলীগসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান সরকারি দলের নেতারা।

আর বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে দুই দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আজ এই কর্মসূচির শেষ দিন প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে কিছু কিছু জায়গায় করবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা ১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৯টি থানায় (পল্টন, মতিঝিল, বিমানবন্দর, উত্তরা পূর্ব, শাহবাগ, ভাটারা, কলাবাগান, তুরাগ ও বংশাল) ১৪টি মামলা রুজু করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের উত্তর পাশে কর অঞ্চল ১৫ অফিসের সামনে পার্কিং করা সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এরপর বিকাল ৩টার মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। মতিঝিল মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে অগ্রণী ব্যাংকের স্টাফ বাসে, রমনা হোটেলের সামনে চলতি গাড়ি ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহণ, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে দুপুর দেড়টার দিকে দেওয়ান পরিবহণ, বাংলাদেশ সচিবালয়ের উত্তর পাশে রজনীগন্ধা পরিবহণ এবং বংশাল থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় দিশারী পরিবহণ, পল্টন এলাকায় জৈনপুরী পরিবহণ, মতিঝিলের পূবালী পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন দোতলা বিআরটিসি বাস এবং ভাটারা কোকাকোলা মোড়ে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহণেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.