ফিরে দেখাঃ হেফাজতের তান্ডব-সচল হচ্ছে মামলা

0

জুবায়ের সিদ্দিকী, সিটি নিউজঃ বিগতদিনে ঢাকায় শাপলা চত্বরে হেফাজতের তান্ডবের স্মৃতি মানুষ এখনো ভূলতে পারেনি। হেফাজতের বক্তব্য নিয়ে চুলছেরা বিশ্লেষণ করে সমাজে সৃষ্টি হয়েছে নানা গুঞ্জন। সাম্রতিক সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধীতায় সরব হয়ে ওঠেন হেফাজত ইসলামের নেতারা। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নানা মুখী তর্কবিতর্ক হয়ে আসছে। এর মধ্যেই রাজধানীতে ঘটে যাওয়া হেফাজতের তান্ডবের মামলা তদন্ত আবার সচল করার কথা জানা গেল।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক তান্ডব চলে। সরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ফাঁড়ি ও গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, হামলা, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলে দিনভর নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। এসব ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সাত জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে দীর্ঘ সাড়ে সাত বছরে মাত্র একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৬২টির কার্যক্রম এতদিন স্থবির ছিল। এর মধ্যে ৫৩টিই ঢাকার মামলা। সেগুলো এখন সচল করছে পুলিশ। মামলাগুলোর তদন্ত গুরুত্ব দিয়ে ফের শুরু করা হচ্ছে।

১৩ দফা দাবি আদায়ে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ওই দিন দিনভর রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও বাগেরহাটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয় রাজধানীতে। এর সূত্র ধরে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও আশপাশ এলাকায় তা-বলীলা চালানো হয়। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মতিঝিল এলাকা। পরে মধ্যরাতে চালানো অভিযানে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হেফাজতকর্মীদের হটিয়ে দেয় বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম।

এসব ঘটনায় রাজধানীসহ সাত জেলায় ৮৩টি মামলা হয়। এগুলোয় তিন হাজার ৪১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৮৪ হাজার ৭৯৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এগুলোর মধ্যে শুধু বাগেরহাটেই দায়ের হওয়া মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশ বা প্রসিকিউটররা হত্যাচেষ্টা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আসামিদের দোষী প্রমাণ করতে না পারায় বাগেরহাটের মামলায় সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। বাকি মামলার মধ্যে ১৮টির তদন্ত চলছে এবং দুটির অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া স্থবির অবস্থায় রয়েছে বাকি ৬২টি মামলা। এসব মামলার বেশিরভাগই তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই মামলাগুলোই এখন সচল করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা হিসাব-নিকাশের কারণে হেফাজতে ইসলামকে ছাড় দেওয়া হয়। কেউ কেউ এর পেছনে গোপন সমঝোতাকেও দায়ী করে থাকেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো এতদিন স্থবির ছিল। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, যে মামলাগুলো আমাদের কাছে পেন্ডিং ছিল, সেগুলোর তদন্ত এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, মামলাগুলোর এখনো চার্জশিট দেওয়া হয়নি। তদন্তের স্বার্থে এখন এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।

হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। তাই এখন কিছু বলতে চাই না।

৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত হন পুলিশের এসআই শাহজাহান। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা জুনাইদ বাবুনগরীকে ৬ মে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে ২৯ মে তিনি জামিন পান। সম্প্রতি সংগঠনটির আমির নির্বাচিত হওয়া বাবুনগরী এখনো জামিনে আছেন।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.