পরিস্থিতি ভালো হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা যখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যে স্কুল খুলব, তখনই আবার নতুন করে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা এলো। কাজেই আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করেই ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি অবস্থা ভালো হয়, (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) খোলা হবে। যদি না হয়, আমরা তা করব না। কিন্তু আমরা মনে করি, বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তর ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা। তার কারণ স্কুল ছাড়া সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা—এটা যে কত কষ্টকর, এটা সত্যিই খুব দুঃখের। তারপরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে যে, ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’। অর্থাৎ আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে এখন ঘরে বসে অনলাইনে শিক্ষাগ্রহণ করার সুযোগ হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম, বিশেষ করে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই শিক্ষা কার্যক্রমটাও সেখানে প্রচার করা হচ্ছে, যার ফলে অন্তত ছেলেমেয়েরা একেবারে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না, কিছুটা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। সেইসঙ্গে আমরা মনে করি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।’

বিনামূল্যে বই বিতরণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি কখনো উন্নত হতে পারে না। আমরা জাতিকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চাই, দারিদ্রমুক্ত করতে চাই। আমি জানি, শিক্ষিত জাতি ছাড়া কখনো দারিদ্রমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা শিক্ষাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা অভিভাবক, তাদের (শিক্ষার্থীদের) ভার লাঘব করার জন্য আমরা বিনা পয়সায় বই বিতরণের কাজ শুরু করি ২০১০ সাল থেকে। সেসময় আসলেই এটা কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু তারপরও আমরা এটা শুরু করে দিয়েছি। সেইসঙ্গে আমাদের যে শিক্ষার্থীরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, তাঁদের জন্য ব্রেইল বই; এ ছাড়া আমাদের যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আছে, যেমন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী—তাদের ভাষায় আমরা বই বিতরণ করে যাচ্ছি, যাতে তারা মাতৃভাষায় শিক্ষা নিতে পারে।’

করোনাভাইরাসের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার সবচেয়ে সমস্যা ছিল করোনাভাইরাস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেরও একই অবস্থা। এ অবস্থার মধ্যেও পাঠ্যপুস্তক ছাপানো এবং বিতরণের ব্যবস্থা করা—এটা একটা কঠিন কাজ। সেই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ জানাই যে এ কাজটা আপনারা করতে পেরেছেন।’

‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে, একসঙ্গে যাতে বেশি সমাবেশ না হয়—সেদিকে লক্ষ্য রেখে ভাগে ভাগে বইগুলো বিতরণ করাই ভালো। কারণ সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলুক এটাই আমরা চাই,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, আগামীকাল ১ জানুয়ারি সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বই বিতরণ শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনদিন করে মোট ১২ দিন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণ করা হবে।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পয়লা জানুয়ারি বই উৎসব না হলেও বছরের শুরুতেই এসব শিক্ষার্থী বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। এবার ছাপা হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই।

অন্যদিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার বইয়ের প্রচ্ছদে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের পেছনের (ব্যাক পেজ) মলাটে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ সংযোজন করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে সর্বমোট পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য দুই কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৭১টি বই; তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছয় কোটি ৯৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৪টি বই। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ১৩ হাজার ২৮৮টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষায় শুধু বাংলা বইটি পাবে। এ বছর সাঁওতাল ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার নয় হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার কপি বই মুদ্রণ করার কাজ চলমান রয়েছে।

শিক্ষাকে মানসম্মত করার লক্ষ্যে এবং ঝরে পড়ার হার রোধ করতে ২০১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি বছর ১ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বই উৎসব’ করে আসছে। এবার বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে বই উৎসব করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা নতুন বইয়ের গন্ধ পাবে। গত ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর (২০২০ সাল) পর্যন্ত এই ১০ বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ বই সারা দেশে বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.