ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারো অভিশংসিত হলেন 

0

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বিদায় বেলায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে অভিশংসিত হলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হলেন। তাও বিদায়ের মাত্র কয়েকদিন আগে। মার্কিন কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে অভিশংসিত হয়েছেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে স্থানীয় সময় বুধবার ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ২৩২টি ভোট পড়ে। অন্যদিকে, বিপক্ষে পড়ে ১৯৭টি ভোট। এর মধ্যে ১০ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন।

এদিকে, ট্রাম্পের বিদায়ের আগে সিনেটে কোনো অধিবেশন বসবে না। ফলে সিনেটে ট্রাম্প অভিশংসিত হলেও তিনি নির্ধারিত সময়েই, অর্থাৎ আগামী ২০ জানুয়ারি বিদায় নেবেন। তবে সিনেটে অভিশংসিত হলে ট্রাম্প আর কখনোই মার্কিন নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না।

হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশের বিরুদ্ধে এই সহিংসতাকে, এই সশস্ত্র হামলাকে উসকে দিয়েছিলেন। তাঁর অবশ্যই চলে যাওয়া উচিত। তিনি পরিষ্কারভাবে এবং বর্তমান সময়ে আমাদের রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক, যে রাষ্ট্রকে আমরা ভালোবাসি।

ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান জুলিয়ান কাস্ত্রো ট্রাম্পকে ভোটের লড়াইয়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবনে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মদদ ছিল অভিযোগ করে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সোমবার অভিশংসন প্রস্তাব আনেন ডেমোক্র্যাটরা। এই অভিশংসনের পক্ষ নেন একাধিক রিপাবলিকান সদস্যও।

এর আগে ২০১৯ সালে ট্রাম্পকে অপসারণে নিম্নকক্ষে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়। তবে উচ্চকক্ষ সিনেটের রায়ে তা বানচাল হয়ে যায়। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, হাউস সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেলে প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হবেন। কিন্তু, প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস ছাড়া করতে সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশের সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়।

এদিকে, ট্রাম্প এখন সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হবেন কি না, সেটিই দেখার বিষয়। ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে খোলাখুলি অবস্থান না নিলেও তাঁর পদত্যাগ কিংবা অপসারণকে সমর্থন করছেন বেশ কয়েকজন সিনেটর। তবে, সিনেটে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরের ভোট পেতে হবে।

গত ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনের বিজয় কংগ্রেসে অনুমোদনের দিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকেরা। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। সেদিন ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরো বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যে ১০ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট তারা যা বলেনঃ

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ওই ১০ রিপাবলিকান সদস্য হলেন নিউইয়র্কের জন কাটকো, ইলিনয়ের অ্যাডাম কিনজিনগার, ওয়াশিংটনের জেমি হেরেরা, ওয়াশিংটনের ড্যান নিউহাউজ, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেভিড ভ্যালেদাও, মিশিগানের পিটার মেইজার, সাউথ ক্যারোলাইনার টম রাইস, মিশিগানের ফ্রেড আপটন, ওহাইওর অ্যান্থনি গঞ্জালেজ ও ওয়াইওমিংয়ের লিজ চেনি।

কেন এই ১০ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, সেটি বিভিন্নভাবে খোলাসা করেছেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে ওই ১০ রিপাবলিকানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

এর মধ্যে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে নিউইয়র্কের জন কাটকো বলেছেন, ‘এই সহিংসতাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উসকে দেওয়া আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি। এজন্য আমি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বসে থাকতে পারি না।’

ইলিনয়ের অ্যাডাম কিনজিনজার মনে করেন, নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এটি (অভিশংসন) মার্কিন জনগণের জন্য একটি জাগরণ।

ওয়াশিংটনের জেমি হেরেরা বলেছেন, ‘আমার সংবিধান পড়ার নিরীক্ষায় প্রেসিডেন্টের অপরাধ অভিশংসিত হওয়ার মতো। আমি আমাদের সংবিধান, স্বতন্ত্র স্বাধীনতা, মুক্ত বাজার, চ্যারিটি, জীবন, ন্যায়বিচার, শান্তি এবং এই দেশের প্রতি বিশ্বাস রাখি। আমি দেখেছি, আমাদের এই দলটি তখনই দেশকে সবার চেয়ে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে, যখন আমরা সঠিকটি বেছে নেই। আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর শপথের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।’

কংগ্রেস ভবনে সংঘতিত হওয়া নৃশংস হামলার দিকে অন্ধভাবে তাকিয়ে থাকা কোনো বিকল্প নয় বলে মনে করেন ওয়াশিংটনের ড্যান নিউহাউস।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.