গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে গণস্বাক্ষর পাঠাবে নির্মূল কমিটি

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৭১ সালে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আগামী এক বছর বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ৩০ লাখ নাগরিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে জাতিসংঘসহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সরকারের কাছে পাঠাবে।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) কেন্দ্র ও বিভিন্ন শাখার উদ্যোগে সংগঠনটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের এ তথ্য জানানো হয়। নাগরিক এই সংগঠনটির ৩০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

সকালে কেন্দ্র ও মহানগরের নেতারা মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর মধ্য দিয়ে নির্মূল কমিটির ৩০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানসূচি আরম্ভ হয়। বিকালে সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।

ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটা গণমানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতো না। গণমানুষ যদি আন্দোলিত না হতো তাহলে হয়তো আমাদের দল এবং সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এভাবে উদ্যোগ নিত না। শহীদজননী জাহানারা ইমাম, কবি সুফিয়া কামাল, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরসহ যারা নির্মূল কমিটির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের সবার প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আজ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে নির্মূল কমিটি যে প্রস্তাব করেছে সে প্রস্তাবের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করি। দ্রুতই মন্ত্রিপরিষদে নির্মূল কমিটির এই দাবির বিষয়ে আমি কথা বলব।

সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির ৩০ বছরের আন্দোলনের দীর্ঘ পদযাত্রায় বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ও সাফল্যের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মূল কমিটি আগামী এক বছরে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত ১৯৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ৩০ লাখ নাগরিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে জাতিসংঘসহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সরকারের কাছে পাঠাবে। ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন এবং বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ২০১৭ সালের মার্চে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হলেও সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আর কোনও সংগঠন একটানা ৩০ বছর একটি আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেনি। যখন আমরা দেখি একজন শাহরিয়ার কবির এদেশে স্বাধীনতা পদক পান না, কিন্তু এমন অনেককে পদকটি দেওয়া হয়েছে তাদের আমরা চিনি না। ফলে নির্মূল কমিটির যদি কোনও ব্যর্থতা থেকে থাকে সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার রাজনীতির বিষয়।

কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, নির্মূল কমিটির এই বিশাল কর্মকাণ্ডে অনেকেই জড়িত। যুদ্ধাপরাধী শর্ষিনার পীরকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে এই দেশকে অনেক বড় অপমান করা হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মানিত করার বেলায় শাহরিয়ার কবিরকে কারও চোখে পড়ে না ভেবে আমি মাঝে মাঝে অবাক ও হতাশ হয়ে যাই।

কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তি ওয়াজ ও দাওয়াতি কার্যক্রমের নামে তৃণমূলে বিস্তার ঘটাচ্ছে। নির্মূল কমিটিকে এই অপশক্তি প্রতিরোধে তৃণমূলে সংগঠনের বিস্তার ঘটাতে হবে।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, নির্মূল নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, নির্মূল কমিটির সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতশিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌসী লাকী, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী আনসার আহমেদ উল্যাহ, ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজমের সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী বিদ্যুৎ দেবনাথ, নির্মূল কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালী, নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল প্রমূখ।

সিটি নিউজ/ডিটি

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.