সব শালা ফকিরনির পোলাঃ একটা কম্বল দাও বাবা

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ চট্টগ্রামে কয়েকদিনে আচমকা উত্তরের বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশা ও হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের গ্রামের, শহরের জনপদ, লোকালয়। এমন এক হাড় কাঁপানো বৈরী পরিবেশে প্রচন্ড শীতে কাঁপছিলেন রহমত আলী। পুরাতন রেল ষ্টেশনের কাছে খোলা আকাশের নিচে ষাটের বয়সের রহমত শুধু আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলছিলেন, ‘বাবা একটা কম্বল দাও”। প্লাস্টিকের চট ও পুরনো জীর্ণশীর্ণ কিছু কাপড় জড়িয়ে শুয়ে আছে অনেকে। রাতে ঝড়ে পড়া শিশিরে ভিজে যায় সেই শীতার্থদের শেষ সম্বলটুকুও। উঞ্চতার বদলে মেলে হাঁড় কাঁপানো শীত। এই শীত যেন সহ্য হয়না এই গরীব মানুষগুলোর। কেউ হাত বাড়ায় শীতার্থদের শীতের কাপড় দিয়ে। আবার কেউ ফিরে তাকায় না সামর্থ থাকা সত্ত্বেও। এই সমাজে কেউ রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড়া গড়ে। আর কিছু মানুষ ফুটপাতে অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করে। তাদের দেখার যেন কেউ নেই।

চসিক নির্বাচনের প্রচারণা, ভোটের লড়াইয়ের কোন প্রভাব নেই এই অসহায় মানুষগুলোর কাছে। ভোটের নয়, ভাতের লড়াই ও শীতের লড়াইতে লড়াকু এই রহমতরা সমাজে অগনিত। যার কোন হিসেব কারো কাছে নেই। খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর নিদারুন কষ্ট দেখে সামনে এগোতেই হালিমা নামের এক বৃদ্ধা করুন সুরে বললেন, কম্বল দিবা নাকি, টাকা দিবা? খুব শীত্’রে বাবা। একটা চাদর থাকলে দিও। আল্লাহ তোমার ভাল করবে। খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা। খাওন কিছু ডাষ্টবিন থ্যাইক্যা কুড়াইয়া আনি খাই। কোথায় সেই ডাষ্টবিন? জিজ্ঞেস করলে বৃদ্ধা হালিমা জানান, রেয়াজু্দ্দিন বাজারের ভেতরে একটা ভাতের হোটেলের পাশে এই ডাষ্টবিন।

ফকির আলী। সত্তরের কাছাকাছি বয়স। ডায়াবেটিস, আলসার, বাত ব্যথার রোগ ব্যাধি নিয়ে ফুটপাতে বসবাস হাছান আলীর। গাইবান্ধা থেকে এসেছেন অভাবের তাড়নায়। গ্রামে অভুক্ত থাকলেও শহরে ইটপাথরের দেওয়াল ঘেরা মানুষেরা তাকে বিমুখ করেনা। হাছন আলী বললেন, ছাওয়াল কন, বউ কন, কেউ নাই। দুনিয়াতে একা আমি। বাড়ী ঘর ফেলে চলে এসেছি। পেট চলেনা। ওষুধ জুটেনা। এই শহরে হাত পাতলে জুটে। বাবা কিছু দিবা, নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করবো।

টোকাই ফজলু বসে বসে সিগারেট ফুঁকছিল। বয়স ১৩/১৪ হবে।

জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছিস?

ভাল না, টাকা দেন।

টাকা দিয়ে কি করবি?

সিগারেট ও মদ খামু।

মদের টাকা আমি দেব ক্যান?

আপনেও খান, দুঃখ ভূইল্লা যাবেন।

বির্বাচনী প্রচারণায় গেলে টাকা পাইতা,

হেরা আমার চেয়ে গরীব।

ক্যান, ভোটের সময় টাকা দেয় তো,

সব শালা ফকিরনির পোলা, হেগ কথা বাদ দেন।

দেশ চালায় কে?

আল্লাহ্।

চল, তোরে চাকরী দিমু,

চিটিংবাজি কইরেন না।

ভোটের চাকরী, টাকা পাবি,

বাদ দেন, সব শালা বাটপার।

সিটি নিউজ/জস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.