কিরিছ দিয়েনে জোয়ারাই দিয়ুমঃ রাজনীতি বেচি ভাত ন খাই

0

রিপোর্টারের ডায়েরী- ৬

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বা ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্র্টংয়ের কদর এদশে আজ বাড়ছে। আমাদের দেশে তদন্ত প্রতিবেদন বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের চাহিদা রয়েছে। এসব প্রতিবেদন নিয়ে সরকার ও প্রশাসনকে মাঝে মধ্যে নাজেহাল হতে হয়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যস্থল হল তথ্যের গভীরতম প্রান্তে ডুবে গিয়ে তার অন্তর্নিহিত রহস্য বা কারণ উদঘাটন করা। তদন্ত প্রতিবেদন যারা লেখেন তারা জীবনকে বাজি ধরতে পারেন অনায়াসে। সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জও। কোন তথ্য পাওয়া যাবেনা জেনেই একাজ শুরু হয় আর শেষ হয় পাঠকের চোখে যখন পুরো ঘটনার বিবরণ তথ্য প্রমানাদিসহ পরিস্কার হয়ে যায় তখনই। তদন্তমূলক সাংবাদিক আসল উদ্দেশ্যই হল জনকল্যাণমুখী যে প্রতিবেদক অন্ধকারে থাকা তথ্যকে বাহিরের আলোয় এনে ফেলার জন্য ব্রতী হন তার সামাজিক দায়িত্বও রয়ে যায় অনেকখানি। তদন্তমূলক সাংবাদিকতায় প্রতিবেদককে হতে হয় তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সাহসী। তাকে সব তথ্য গ্রহণ করতে হবে কিন্তু কোন তথ্যই প্রকাশ করা যাবেনা।

তবে তথ্যের পর তথ্য মিলিয়ে অসম্ভব গোপনীয়তার সঙ্গে মালা গাঁথতে হবে। তাকে বের করতে হবে এমন কিছু যাতে যার বিরুদ্ধে তদন্ত সেই বিরুদ্ধ শক্তি যেন মাথা তুলতে না পারে। এখানেই তার সার্থকতা। তদন্তধর্মী প্রতিবেদন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে লেখার গুনে। লেখা হওয়া উচিত প্রাঞ্জল, তেমনি আগুন ঝরানো। সাংবাদিকতার এখন নতুন যুগ। ইলেক্ট্রিক মিডিয়াতে লাইভেই দেখানো হয় দুর্নীতি ও অনিয়ম। আমাদের দেশে তদন্তমূলক সাংবাদিকতার বহিঃপ্রকাশ হলো প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বা শক্তিশালী গোষ্ঠী সেই সাংবাদিককে সরিয়ে দেবার জন্য প্রয়াসী হয়। সাংবাদিকের মাথার ওপর ঝুলে যায় মৃত্যুর পরোয়ানা।

সংবাদপত্র তাকে নিশ্চিত নিরাপত্তা দিতে পারেনা। তবে আমাদের দেশে হলুদ সাংবাদিকতায় পারদর্শী অনভিজ্ঞ, অদক্ষ, জ্ঞানের অভাব থাকা কেউ কেউ একপক্ষকে খুশি করতে অপরপক্ষথেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদককে কালো টাকার প্রতিবেদনও করেন গুটি কয়েক কথিত সাংবাদিক। প্রদিবেদন তৈরী করতে গিয়ে যে পক্ষ, মহল বা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন যাচ্ছে তাদের বক্তব্য ছাড়াই প্রতিবেদন প্রকাশ করা যায়না। ব্যক্তিগত পরিসর, ব্যক্তির, সংস্থার, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন যাবে তাদের সামাজিক, রাস্ট্রীয় সুনাম, গ্রহণযোগ্যতা সচ্ছতা, সুনাম অবৈধভাবে ও আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ধরাশায়ী করা কোনভাবেই যাবেনা। পক্ষপাতদুষ্ট বা মনগড়া প্রতিবেদন গ্রহনযোগ্য নয়। সংবাদ হল ঘটনার যথাযথ বিবরণ। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি যদি পক্ষপাতদুষ্টতে পরিনত হয় তবে তা চরম অন্যায়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকে অন্যায়ভাবে প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলের মদদে প্রতিবেদন প্রকাশে লক্ষচ্যুত হচ্ছেনা।

বৃটেনের সাংবাদিক এলমার ডেভিস বলেছেন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে গিয়ে কোন পক্ষ অবলম্বন করে অন্যপক্ষকে অন্যায়ভাবে ঘায়েল ও তাদের মতামত ছাড়া প্রতিবেদন প্রকাশ হতে পারেনা। একজন সাংবাদিককে বস্তুনিষ্ঠ হতে হয়। তাকে সচেতন থাকতে হবে। যাতে কোন ব্যাক্তির মানহানি বা ক্ষতি না হয় এবং আদালত অবমাননার দায়ে যেন সে অভিযুক্ত না হয়। যারা দক্ষ ও অভিজ্ঞ তারা খবরের ভেতরের খবরও তুলে আনছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে যাচাই বাছাই ও প্রতিপক্ষের মতামত পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে প্রশাসনকে অবহিত করা যাবে। তবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবেনা। কারণ একতরফা কোন বক্তব্য প্রকাশ করা বিপদজনক। যিনি তথ্য দিয়েছেন, বা দলিল-দস্তাবেজ দিয়েছেন, তিনিও বিভ্রান্ত করতে পারেন প্রতিবেদককে। অতএব সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। বর্তমান সময়ে ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, অনলাইন, অনলইন টিভি, দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিকে অনেকে সাংবাদিক তকমা জুড়ে সাংবাদিকতা করছেন। তাদের একটি অংশের কোন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, শিক্ষা না থাকলেও তারা সমাজে সাংবাদিক। এরা সাংবাদিকতা পেশাকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রকৃত সাংবাদিকরা বিব্রতবোধ করছেন। এরা সমাজে সাংবাদকিক না হয়ে সাংঘাতিক হয়ে ওঠে। এদের দ্বারা সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের সুনামও নষ্ট হয়। অনভিজ্ঞ, আনাড়ী, অদক্ষ ও সাধারণ জ্ঞানটুকু নেই এমন অনেকে কোন না কোন গণমাধ্যমের সাইন বোর্ডের আড়ালে প্রকৃত সাংবাদিকতার পরিবর্তে হলুদ সাংবাদিকতা ও ধান্ধাবাজীর কর্মকান্ডকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রেস ইনষ্টিটিউট, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেল সাংবিাদিক ইউনিয়নের এগিয়ে আসা উচিত।

আমরা যারা সংবাদপত্র পেশায় জড়িত, আমাদের সব সময় মনে রাখতে হয় যে, সাংবাদিকদের কোন প্রকৃত বন্ধু নেই। যে কোন রিপোর্ট প্রকাশের পর কি পরিস্থিতি বা কি প্রতিক্রিয়া হবে তার সম্পুর্ণ জ্ঞান থাকতে হয়।

পলিটিক্যাল এক রিপোর্টের কারনে একদিন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ফোন করে বললেন, অবাজি কি লিখিলা, আঁই কি রাজনীতি বেঁচি ভাত খাই ‘না ?  নগরীতে এক জনপ্রতিনিধি একবার রাস্তার উপরই ভবন তৈরী করে ফেলেন। আমি সেই ভবনের ছবি (রাস্তাসহ) ছাপিয়ে ছিলাম। কিন্তু কোন প্রতিবেদন ছিলনা। ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল “মন্তব্য নিস্প্রয়োজন”। জনপ্রতিনিধি মামলা ঠুকে দিলেন আদালতে। আদালত বললেন, সরেজমিনে দেখা হবে ছবির বাস্তবাতা। দেখা হল ছবি বাস্তব। ছবি কথা বলে। আদালত খুশি হয়ে আমাকে বললেন, রাষ্ট্রের সম্পদ বেহাত হচ্ছে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। মামলা খারিজ। এরপর এসি ল্যান্ডকে বাদী হয়ে আমার মামলার বাদীর বিরুদ্ধে মামলার আদেশ হল। ভবনটি পরবর্তীতে ভাঙ্গা পড়ল। তবে আদালতে মামলা খারিজের দিন বাদী আমাকে বললেন, “কিরিছ দিয়েনে জোয়ারাই দিয়ুম। বিল্ডিং ভাঙ্গা  পইড়’লে”। বিল্ডিং ভাঙ্গার শেষ হওয়ার আগে তিনিও হার্ট এ্যাটাকে মারা গেলেন। জানাজায় বাদীর সন্তান বললেন, আংকেল আমার আব্বাকে ক্ষমা করে দিবেন।

সিটি নিউজ/জস

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.