সিটিনিউজবিডি : মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ০২ নভেম্বর।
দ্রুত শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকালে আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবু হোসেন।
মৃত্যুদণ্ডের রায় রিভিউ চেয়ে গত ১৪ অক্টোবর (বুধবার) আপিল বিভাগে পৃথকভাবে আবেদন দু’টি করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী।
পরদিন সাকা-মুজাহিদের আবেদনগুলোর দ্রুত শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।
এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার উক্ত দিন ধার্য করেন চেম্বার বিচারপতি।
পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, চেম্বার আদালত এ দু’টি আবেদন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। ০২ নভেম্বর শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকবে। তবে আমরা বলেছি, আমাদের সময় প্রয়োজন। দেড় মাস সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ ছিলো। অনেক মামলা জমে রয়েছে। যদি কোর্ট খোলার শুরুতে এ দু’টি মামলা শুরু হয়, তাহলে হাজারো বিচারপ্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই আমরা ওই দিন সময়ের জন্য আবেদন করবো।
মোট ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৩২টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন মুজাহিদ। রিভিউয়ের পেপারবুক দাখিল করা হয়েছে তিন শতাধিক পৃষ্ঠার।
অন্যদিকে, সাকা চৌধুরী তার মোট ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন।
চলতি বছরের ১৬ জুন আলী একাত্তরের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের এ দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ০১ অক্টোবর তাদেরকে আপিল বিভাগের রায় অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা।
নিয়ম অনুসারে, নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেছেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী।
যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। পরে ওই বছরের ০২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ০১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।