প্রবাসীদের টিকার নিবন্ধন শুরু, শীঘ্রই টিকার প্রয়োগ

0

সিটি নিউজ : করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কবে থেকে তাদের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে এই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু না বলা হয় নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই তাদের টিকা প্রয়োগ শুরু হতে পারে। সে লক্ষ্যে মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালকে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে টিকা দেয়ার স্থান হিসেবে।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘বিদেশগামী কর্মীদের টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সুরক্ষা এপে প্রবাসী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেখানে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ২০ এবং তদুর্ধ্ব বছরের সবাই এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। নিবন্ধন করতে এনআইডি লাগবে না।’

‘তবে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে, বৈধভাবে কর্মী হিসেবে তাদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই যারা বৈধভাবে কর্মী হিসেবে বিদেশ যাবেন, কেবল তারা সবাই টিকার আওতায় আসবেন।’

বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশগামী কর্মীদের টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করছে অনেক দেশ। সামনের দিনগুলোতে কমবেশি সব দেশই কর্মী প্রবেশে এমন শর্ত জুড়ে দেয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

এ অবস্থায় গত ২৪ জুন (বৃহস্পতিবার) টিকার জন্য দেশে আটকে থাকা প্রায় শতাধিক প্রবাসী কর্মী টিকা নিশ্চিতের দাবিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবি, জাতীয় স্বার্থেই অবিলম্বে বিদেশগামী কর্মীদের করোনা টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই বিদেশগামী কর্মী, যাদের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণব্যুরো (বিএমইটি) কার্ড আছে কিংবা নিবন্ধন করা আছে, তাদের টিকা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই প্রবাসী কর্মীদের টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছি। গত চার-পাঁচ দিন যাবত এই কার্যক্রম চলছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশগামী প্রবাসীদের তালিকা আমাদের দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নামের তালিকা তুলে দিয়েছি। এখন প্রবাসীরা ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারছে।

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য আলাদা একটা ওয়েবসাইটে টিকার নিবন্ধন করা হচ্ছে। আমরা এটিকে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে চাই না। শুধু প্রবাসীরাই যারা রয়েছে, তারা তাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।’

বিদেশগামীদের টিকা কার্যক্রম কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কবে থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না। তবে আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু করা যাবে। এক্ষেত্রে কোন টিকা তাদের দেয়া হবে সেটি এখনও নির্ধারিত হয়নি। যখন টিকা কার্যক্রম শুরু হবে তার আগেই বিষয়টি জানানো হবে।’

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো থেকে প্রবাসীরা এসে কীভাবে নিবন্ধন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের কার্যক্রমটি পুরোপুরি তাদের মন্ত্রণালয় দেখছে, আমরা শুধুমাত্র ওয়েবসাইট মেইনটেন করছি। মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী তাদের নামগুলো আমরা ওয়েবসাইটে যুক্ত করে দিচ্ছি। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বিদেশগামীরা তাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন করবে।’

নিবন্ধন কীভাবে করতে হবে?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেনেজমেন্ট ইনফরমেশন শাখায় কর্মরত ও বিদেশগামীদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালক ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘বিদেশগামী প্রবাসীদের নিবন্ধন চলছে, সুরক্ষা ওয়েবসাইটে তাদের জন্য আলাদা একটি ‘ফরেইনার’ ট্যাব খোলা হয়েছে। সেখানেই তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদেশগামীদের নামের তালিকা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসতে হবে। ওয়েবসাইটে তাদের তালিকা যুক্ত করা হলেই তারা নিবন্ধন সম্পাদন করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য কী কী লাগবে, এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আলাদা একটি ফরমেট দেওয়া আছে। তারা সে অনুযায়ী প্রবাসীদের পাসপোর্ট নম্বর, দেশের নাম, ভিসা নম্বর, ভিসার মেয়াদের সর্বশেষ তারিখ এবং বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারসহ বিস্তারিত তথ্য পাঠাবে। তারপর এগুলো আমাদের হোয়াইট লিস্টে যুক্ত করলেই দুই-তিনদিনের মধ্যেই তারা নিবন্ধন করতে পারবে।’

ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘নিবন্ধনটা প্রবাসীদের নিজেদেরই করতে হবে। তাদের মন্ত্রণালয় বা আমাদের স্বাস্থ্য অধিদফতর এটা করে দেবে না। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের বিদেশ গমনেচ্ছুদের তালিকা দেওয়া এবং আমাদের (স্বাস্থ্য অধিদফতর) দায়িত্ব হচ্ছে তালিকাগুলো যাচাই করে সুরক্ষা সার্ভারে যুক্ত করে দেওয়া। আমাদের কাজ শেষ হলে দুই থেকে তিন দিন পরেই তারা নিবন্ধন করতে পারবে।’

 

কোন হাসপাতালে দেয়া হবে টিকা?

ফয়েজ আহমেদ আরও বলেন, ‘নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর বিদেশগামীদের কাছে একটা এসএমএস যাবে এবং সে অনুযায়ী তিনি টিকা নিতে পারবেন। অথবা কারও যদি এসএমএস আসতে দেরি হয়, সেক্ষেত্রে তাদের টিকা কার্যক্রম শুরুর পর নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গেলেই টিকা দিয়ে দেবে।’

টিকা কার্যক্রম কোন কোন হাসপাতালে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় প্রবাসীদের টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হবে মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। রাজধানীতে এই হাসপাতালটিতেই স্পেসিফিকভাবে তাদের টিকা দেওয়া হবে।’

অন্যান্য জেলার প্রবাসীদের টিকা নিতে ঢাকায় আসতে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালকেই বাছাই করা হয়েছে। তবে দূরবর্তী জেলার টিকা গ্রহীতা প্রবাসীদের জন্য হয়তো বিভাগভিত্তিক ভাবে একটা উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের প্রবাসীদের জন্য সম্ভবত চট্টগ্রামেই ব্যবস্থা করা হতে পারে, তবে অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

টিকা প্রয়োগের নির্দেশনা পেলেই প্রয়োগ শুরু
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই বিদেশগামীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘বিদেশগামীদের টিকা প্রয়োগের ব্যাপারটি নিয়ে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। এটি পুরোপুরি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেখে। উনাদের কোনো চাহিদা বা নির্দেশনা থাকলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা দেয়। আর আমরা সেভাবেই কাজ করি।’

তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন কার্যক্রম কীভাবে চলছে, সে সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। এই নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আলাদা করোনা সেল আছে, তারাই নিবন্ধন সম্পর্কে বলতে পারবে।’

টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না বা কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এখনও বিদেশগামীদের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব। যখন তারা বলবেন, সেদিন থেকেই টিকা প্রয়োগ শুরু হবে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’

সিটি নিউজ/এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.