চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি ও আধিপত্যের রাজনীতি

0

জুবায়ের সিদ্দিকী  –  

নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দল আর একের পর এক সংঘর্ষে ডুবে আছে ছাত্রলীগ। দেশের অন্যান্য স্থানের মত চট্টগ্রামেও নিজেরাই নিজেদের রক্ত ঝরাচ্ছে সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনটি। গত ১৭ অক্টোবরও নগরীর আগ্রাবাদ, জেলার সাতকানিয়া ও ফটিকছড়িতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটিতেও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। এর আগে গত সপ্তাহেও রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে সিআরবিতে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। আধিপত্য নিয়ে সর্বশেষ নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনীতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যার দিকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহতও হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডবলমুরিং থানার ডিউটি অফিসার এসআই আসিফ ইকবাল জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে জেলার সাতকানিয়ায় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে এক ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তার নাম মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (১৮)। ওই দিন বিকালে উপজেলার তেমুহনি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশ চলাকালে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উক্ত অনুষ্টানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ১ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ, কেওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার মোহাম্মদ ইউনুচ, সাধারন সম্পাদক রিপন দাশ সুজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্টানের শুরুতে ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম মিছিল সহকারে সমাবেশে গিয়ে মঞ্চে অবস্থান নেয়। তার সাথে থাকা অন্যান্য নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থল এবং বাইরে অবস্থান নেয়। এদিকে সমাবেশ শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পর ছাত্রলীগের অপর গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম তার সাথে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে উপস্থিত হয়।

তখন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি এবং এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী চেষ্টা করেও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপকে থামাতে পারেননি। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সমাবেশের বাইরে চলে যায় এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে কেওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ন সম্পাদক ও জনার কেওচিয়া বরু ছড়ার আইয়ুব খানের পুত্র মোহাম্মদ রিয়াজ গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে কেরানীরহাটের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে অবস্থার অবনতিতে চমেক হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। ঘটনার শুরুতে সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে থাকা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি।

পরে খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে সমাবেশের বাইরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ চললেও সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগের এক গ্রুপের নেতা আমিনুল ইসলাম জানান,আমি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শান্তিপুর্নভাবে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে যাই। আমি মঞ্চে অবস্থান নিই এবং নেতাকর্মীরা সমাবেশে অবস্থান নেয়। কিন্তু কিছুক্ষন পর জাহেদ, পারভেজ, ফরহাদ ও সাজ্জাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নামধারী কিছু সন্ত্রাসী পুর্বপরিকল্পিতভাবে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর উপস্থিতিতে আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। তখন আমাদের নেতাকর্মীরা সমাবেশের বাইরে চলে গেলে জাহেদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে রিয়াজ সহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা আহত হয়। অন্যদিকে অপর গ্রুপের নেতা জাহেদ জানায়, অনুষ্টান শুরু হওয়ার পর পর আমি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে উপস্থিত হই।

তখন পুর্ব থেকে সমাবেশে অবস্থান করা আমিন গ্রুপের নেতা কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালায়।তখন আমরা সমাবেশের বাইরে চলে আসি।পরে তারাও বাইরে এসে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর গুলি চালায়।কেওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার মোহাম্মদ ইউনুচ জানায়, ছাত্রলীগের কোন গ্রুপকে অনুষ্টানে দাওয়াত দেয়া হয়নি। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের গ্রুপিং এবং সমাবেশে যাওয়া না যাওয়া বিষয়ে এক পক্ষ অপর পক্ষকে হুমকির বিষয়ে আমরা আগে থেকে জানতাম। তাই ছাত্রলীগের অনেককে অনুষ্টানে আসতে নিষেধও করা হয়েছিল। কিন্তু তারা উভয় পক্ষই অনুষ্টানে এসেছে এবং সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং এক পর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটায়। ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশকে ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,’ অনুষ্টান চলাকালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে এটা হয়েছে সমাবেশের বাইরে। সমাবেশস্থলে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আমরা যথারীতি সুষ্টভাবে সমাবেশ সুসম্পন্ন করেছি। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে ফটিকছড়িতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হয়েছে। জানা যায় ১৭ অক্টোবর বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি মহাসড়কের নাজিরহাট কুম্ভারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ফটিকছড়ি থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। প্রত্যক্ষদর্শীসুত্র জানায়, ফটিকছড়ি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জামাল, সাধারন সম্পাদক শুভ, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ, শোয়াইবসহ আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা মিলে নাজিরহাট যান। তৌহিদ বাবু সমর্থিত যুবলীগ নেতা এমরান ১০/১২ জন নিয়ে কুম্ভারপাড়া এসে এবিসি সড়কের সংযোগস্থলে ছিল। বিকাল চারটার দিকে মোটরসাইকেল যোগে বিবিরহাট ফেরার পথে কুম্ভারপাড়ায় পৌছালে এমরান সহ তার লোকজন পথরোধ করে। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। উভয় গ্রুপ মোবাইলে নিজেদের লোকজনকে খবর দেয়। এক পর্যায়ে মারামারি, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফটিকছড়ি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

যুবলীগ নেতা এমরান বলেন, তারা মোটরসাইকেলে আমাদের সামনে হৈ হুল্লুড় করে যাচ্ছিল, তাই তাদের দাঁড়াতে বলি। পরে তারা সবাইকে ফোন করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমি নিজে তাদেরকে ’সরি’ বলার পরও তারা ক্ষান্ত হয়নি। উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সাহেদুল আলম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি নিজেও আহত হয়েছি। সেখানে যুবলীগ নামধারী নেতাদের নিয়ে মুলত জামাত শিবির এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.