বোমা হামলায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে!

0

সিটিনিউজবিডি : রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে দেশে তৈরি গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

এর কারণ হিসেবে গোয়েন্দারা মনে করছেন, ঘটনার এক দিন আগে গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় জড়িত সুমনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, এ খুনের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ঘটনার পরদিন এ কারণে বগুড়া থেকে একাধিক জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

সুমনের স্বীকারোক্তিতে গোয়েন্দারা আরো জানতে পারে, কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় এক বাসায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুত রাখা হয়েছে। যেগুলো দিয়ে নাশকতার কাজ করা হবে। পুলিশ সেদিনই ওই সব বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে। এর মধ্যে যে হাতবোমাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, তার কিছুটা মিল ছিল হোসেনি দালানে বিস্ফোরিত গ্রেনেডের।

এ ছাড়া গোয়েন্দারা আরো জানতে পারে গাবতলীতে ছুরিকাঘাতকারী ব্যক্তিটি ছিল আদমদীঘি উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি। তিনি এখন পলাতক। পুলিশ তাকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। তাকে ধরতে পারলে সব ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

উল্লিখিত এসব কারণে হোসেনি দালানে হামলার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, চকবাজার থানার মামলাটি গোয়েন্দা বিভাগে আসার পরপরই প্রথম যে পদক্ষেপ নিয়ে তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা। গুলশানে বিদেশি নাগরিক হত্যার বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। খুনের আসামিরা ধরা পড়েছে। এএসআই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরাও ধরা পড়বে।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, হোসেনি দালানে হামলার ঘটনায় জড়িতরা অবশ্যই ধরা পড়বে। সেই অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবির তাজিয়া মিছিলে নাশকতা চালাতে পারে- এ ব্যাপারে গোয়েন্দাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরও ঘাতকরা হামলা করেছে।

এদিকে হোসেনি দালানে হামলার পর শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে সুন্নি সম্প্রদায় এ কাজ করেছে এমনটি তারা মনে করছেন না। এ জায়গায় প্রায় ৪০০ বছর ধরে তাজিয়া মিছিল উৎসব পালন করা হয়। হামলার ঘটনা এবারই প্রথম। ঘটনার পর থেকে হোসেনি দালানে প্রবেশের সময় স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা তল্লাশি করছে। পুলিশের নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।

হামলার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজ উদ্দিন জানান, তাজিয়া মিছিলে নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে পুলিশ আগে থেকেই সজাগ ছিল। এ কারণে ৩২টি সিসি ক্যামেরা ও আড়াই হাজারের মতো পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে আর্চওয়ে বসানো হয়নি। কারণ মিছিলে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ওই আর্চওয়ে দিয়ে প্রবেশ করানো যেত না।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, যেদিক দিয়ে হামলা করা হয়েছে, সেই পথ শনাক্ত করা হয়েছে। কবরস্থানের দিক দিয়ে প্রবেশ করে গ্রেনেডগুলো মেরে আবার একই পথ দিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কবরস্থান থেকে গ্রেনেডগুলো পিনগুলো পাওয়া গেছে। এখন প্রযুক্তিগত ও তথ্যনির্ভর উপাত্ত দিয়ে তদন্তকাজ করা হবে।

অন্যদিকে হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (অপস) শেখ মারুফ হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে মঙ্গলবার বিকেলে হোসেনি দালান এলাকায় যাবেন। তবে তার আগে গাবতলীতে পর্বত সিনেমা হলের সামনেও যাবেন।

কেন গাবতলী যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু গাবতলীর ঘটনার সঙ্গে এ হামলার মিল রয়েছে। তথ্য রয়েছে- একই গোষ্ঠী এ কাজ করে থাকতে পারে। সে জন্য ঘটনার মোটিভ জানতে গাবতলীর খুনের ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে।

প্রসঙ্গত, ২৩ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে হোসেনি দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় পরপর তিনটি দেশে তৈরি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় সঞ্জু নামে এক কিশোর নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.