ধানের খেতে মাজরা পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক

0

কৃষি সংবাদ: খুলনার তিন উপজেলায় আমন ধানের খেতে মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকা আক্রমণ করেছে। জেলায় ১ হাজার ২৭৪ হেক্টর জমিতে পোকা আক্রমণ করেছে। আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অতি বৃষ্টির পর থেকেই এণ আক্রমণ বৃদ্ধি পায়।

উপজেলাগুলো হচ্ছে রূপসা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া। এতে কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এদিকে, দফায় দফায় কৃষি কর্মকর্তারা পোকায় আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। সূত্র মতে, এবার ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমণ আবাদ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই অতি বৃষ্টি দেখা দেয়। আষাঢ় থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত আমণের ষাট শতাংশ বীজতলা পানিতে ডুবে যায়। ক্ষতি এড়াতে কৃষক শ্রাবণের শেষ দিকে আমণের বীজতলা তৈরি করে। ফলে জেলার অধিকাংশ স্থানে দেরিতে আমন রোপন হয়। গত ১০ বছরের মধ্যে এবারই বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি ছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় উপপরিচালক মো. আব্দুল লতিফ জানান, অতিবৃষ্টির কারণেই পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। পোকা দমনের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ সভা, আক্রান্ত ধানের পাতা কেটে দেয়া ও কীট নাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত এক হাজার ২১০ হেক্টর জমির পোকা দমন করা সম্ভব হয়েছে। ১৭৪টি ব্লকে পাঁচটি করে আলোর ফাঁদ দিয়ে পোকা দমনের প্রক্রিয়াও চলছে। তিনি সোমবার পোকায় আক্রান্ত বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকটি ধান খেত পরিদর্শন করেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ২শ’ হেক্টর জমির আমনের আবাদে পোকা আক্রমণ করে। কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে দমন করা সম্ভব হয়েছে। এ কারণে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে দাবি করেন তিনি।

মেট্রো কৃষি কর্মকর্তা জানান, অতিবৃষ্টির পর মাজরা পোকা আক্রমণ করে। কিন্তু তা দমন করা সম্ভব হয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং-এর পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বটিয়াঘাটা উপজেলা ও বাগেরহাটের কয়েকটি খেত পরিদর্শন করবেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ভূপেষ কুমার মন্ডল গেল সপ্তাহে জেলার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, রূপসা, ফুলতলা উপজেলা ও মেট্রো এলাকার কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন।

উল্লেখ্য, রূপসা উপজেলার বাগমারা, জাবুসা, তিলক, ঘাটভোগ, আলাইপুর, স্বল্প বাহিরদিয়া ও মহিশাগুনিয়া এলাকায় আমন ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেশি দেখা গেছে।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় রোপা আমন ধানের খেতে ব্যাপক হারে পোকার আক্রমণ হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে কাঙ্খিত ধান উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যহত হবে বলে ধারণা কৃষকদের। এ ঘটনায় ধান চাষিরা দিশেহারা।

জানা গেছে চলতি মৌসুমে মধুখালী উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ৩৪৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে পোকার আক্রমণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

মধুখালী উপজেলার মীরের কাপাষহাটিয়া গ্রামের মুন্দার দোপ মাঠে, কামাখালী ইউনিয়নের নীল কুঠির মাঠ, ছোট গোপালদীর মাঠ, মছলন্দপুর মাঠ, আড়পাড়া ইউনিয়নের আড়পাড়া মাঠ, নওপাড়া ইউনিয়নের আলগাপাড়া মাঠ, ধুনের কাল, গুপনি গাড়ে, রায়পুর ইউনিয়নের বড় গোপালদী গ্রামের বড় চক, মাছমাড়া, গোবের দোয়াল, পানকাটা এলাকায় ঘুরে দেখাযায়, ধান খেতে ব্যাপক হারে পোকার আক্রমণ হয়েছে।

পোকার আক্রমণে ধানের পাতা মরে সাদা হয়ে গেছে এবং ধানের শীষ বের হচ্ছে না। ধান গাছের পাতা ও থোরে এক শ্রেণির পোকা বাসা বাঁধতে দেখা গেছে। এতে আক্রান্ত জমির ফলন ক্ষেত্র বিশেষ ৬০-৮০ ভাগ বিনষ্ট হবে। কোন কোন চাষি এসব ধান কেটে গরুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছে।

পোকার আক্রমণে দিশেহারা উপজেলার নিখরিয়া গ্রামের ইমান আলী, ওয়াদুদ সেখ, রাজা সেখ জানান আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করেও তেমন কোন সুফল হচ্ছে না।

নওপাড়া ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহিদুর রহমান জানান মাঠের পর মাঠ ধানের পাতা অজ্ঞাত রোগে মরে যাচ্ছে এবং পোকার আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু প্রতিরোধের কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, একটি মাঠের ৬০ শতাংশ জমিতে বিপিএইচ পোকা আক্রমণের খবর পেয়েছি এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.