রাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ

0

শিক্ষাঙ্গণ : ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করতে ঢাকা থেকে ভাড়া করা হচ্ছে ডিভাইস এক্সপার্টদের। এ ছাড়া ভর্তিচ্ছুদের বদলি হিসেবে ঢাকা থেকে ভাড়া করা হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের- এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

৯ থেকে ১২ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জালিয়াতি বন্ধে এবার ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির তালিকায় ছবি সংযুক্ত করে বদলি পরীক্ষার্থী ঠেকানোর নতুন পদ্ধতি চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অনুষদের অন্তত সাত শিক্ষক, ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও এর পার্শ্ববর্তী আরও ১০ জনকে সর্বদা নজরে রেখেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা। তাদের কার্যক্রমে কোনো সন্দেহ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করতে বেশকিছু চক্র সক্রিয় রয়েছে এটা ঠিক। তবে এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম বারের মতো ভর্তিচ্ছুদের উপস্থিতি তালিকায় ছবি সংযোজন করা হয়েছে। যাতে করে কোনো ভর্তিচ্ছুর বদলে কেউ পরীক্ষা দিতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষার যে পদ্ধতিগুলোতে জালিয়াতি হতে পারে সে বিষয়ে আমাদের কাছে একাধিক তথ্য দিয়েছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। যার মধ্যে রয়েছে- ডিভাইস ব্যবহারকারী এবং ভর্তিচ্ছুদের বদলি পরীক্ষার্থী, যারা ঢাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে। তারা এখানে স্থানীয় শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী বা কোনো চক্রের সাহায্য নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, রুয়েট ক্যাম্পাসে কিংবা রাজশাহী শহরে তারা কয়েক দিন আগেই চলে আসবে এবং ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করতে পারে।

গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় বেশ কয়েকটি জালিয়াতি চক্র কাজ করতে পারে। যাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বহিরাগত বেশ কয়েকজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও কোচিং সেন্টারের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে। তবে তাদের অনেককেই গোয়েন্দা সদস্যরা সর্বদা নজরে রেখেছেন। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে র‌্যাব বা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাদার বখশ, শের-ই-বাংলা ফজলুল হক, মতিহার ও শাহ মখদুম হলে ভাড়াটে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা থাকতে পারে। এসব আবাসিক হলে ভড়াটে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাহায্য নিতে পারে। এ ছাড়া কিছু শিক্ষার্থীরও সাহায্য নিতে পারে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা সদস্যদের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অনুষদের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে টাকা কিংবা ভয় দেখিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাটাখালির শ্যামপুর, সমশাদিপুর ও ইমাদপুর এলাকার কয়েক ব্যক্তিও এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এরই মধ্যে যাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনে অবস্থিত একটি বিভাগের তিনজন, শহীদুল্লাহ কলাভবনে অবস্থিত একটি বিভাগের একজন, দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনে অবস্থিত দুটি বিভাগের দু’জনসহ মোট সাত শিক্ষককে নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। এ ছাড়া পাঁচটি অনুষদ ও কয়েকটি বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

নজরদারিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাও। যাদের মধ্যে দু’জন এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের কয়েকজনের সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে যোগযোগ করেছেন— এমন তথ্যও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লতিফ হলে দুই ছাত্রলীগকর্মী, শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের এক কর্মী, শেরে-ই-বাংলা হলের তিন ছাত্রলীগ নেতা, বঙ্গবন্ধু হলের আট নেতাকর্মীকে নজরে রেখেছেন গোয়েন্দারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান আরও বলেন, রাবি ক্যাম্পাসে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে অন্তত ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। যারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে জালিয়াতি করতে চেয়েছিল। ওই জালিয়াত চক্রের বিভিন্ন সূত্র পর্যালোচনা করে এবার রাবির ভর্তি পরীক্ষায়ও কাজ করা হচ্ছে। যাতে অন্য কেউ জালিয়াতি করতে না পারে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পূর্ব) হাসান মুহাম্মদ নাসের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে আমাদের বেশকিছু টিম কয়েক দিন ধরে কাজ করছে। যেকোনো পদ্ধতিতে রাবির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে বিশেষ পদ্ধতিতে কাজ করা হচ্ছে। কোন কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি হতে পারে সে বিষয়গুলো আগে থেকেই নজরে রেখেছে পুলিশের অপরাধ বিষয়ক শাখার সদস্যরা। তবে এসব বিষয় এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ৯ থেকে ১২ নভেম্বর সকাল ও বিকেল দুই শিফটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি অনুষদের ৫৬টি বিভাগে এবং দুটি ইনস্টিটিউটে মোট চার হাজার ১৪৮ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.