ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাংলাদেশকে বিজয় এনে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে। আর দারুণ বোলিংয়ে দলকে বড় জয় এনে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ১৪৫ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। শনিবার মিরপুরে মুশফিকের সেঞ্চুরি আর সাব্বির রহমানের ফিফটিতে ৯ উইকেটে ২৭৩ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে
বাংলাদেশ। জবাবে ৩৬.১ ওভারে মাত্র ১২৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ১০ ওভার বল করে ৪৭ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
আর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি ৬ ওভার বল করে মাত্র ১৩ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নেন। এ ছাড়া নাসির হোসেন ও আল-আমিনের ঝুলিতে জমা পড়ে একটি করে উইকেট। বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনেই খেলতে থাকে জিম্বাবুয়ে। শুরুতে দুই প্রান্ত থেকে মুস্তাফিজুর রহমান ও আরাফাত সানীকে আক্রমণে এনে সফলতার দেখা পাচ্ছিলেন না মাশরাফি।
মুস্তাফিজ ও সানীর বদলে আল-আমিন ও সাকিবকে আক্রমণে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আর নিজের দ্বিতীয় ওভারেই দলকে সফলতা এনে দেন সাকিব। চামু চিবাবাকে (৯) ফিরিয়ে ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। লং অন ও লং অফের মাঝামাঝিতে চিবাবার দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ব্যাট হাতে ব্যর্থ লিটন দাস।
এরপর নিজের চতুর্থ ওভারে এসে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা ক্রেইগ আরভিনকেও (২) বিদায় করেন সাকিব। প্রস্তুতি ম্যাচে ৯৫ রান করা আরভিন এদিন মিড অফে নাসির হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। পরের ওভারে এক প্রান্ত আগলে রাখা লুক জংউইকে (৩৯) ফিরিয়ে ইনিংসে নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন বিশ্বকাপের পর দলে ফেরা আল-আমিন। উইকেটের পেছনে মুশফিকের বিশ্বস্ত গ্লাভসে ধরা পড়েন জংউই।
জংউইয়ের বিদায়ের দুই ওভার পরেই জিম্বাবুয়ে শিবিরে তৃতীয়বারের মতো আঘাত হানেন সাকিব। এবার শেন উইলিয়ামসকে (৮) বোল্ড করেন তিনি। ফলে এক সময়ে বিনা উইকেটে ৪০ রান থেকে জিম্বাবুয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৬৫ রান। ২৫ রানেই নেই ৪ উইকেট!
এরপর সিকান্দার রাজাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা। তবে রাজাকে (৩) ফিরিয়ে ১৪ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি। রাজাকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করে ইনিংসে নিজের প্রথম উইকেট নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের পরের ওভারে এসে ম্যালকম ওয়ালারকেও (১) ফিরিয়ে দেন মাশরাফি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ম্যালকমের ক্যাচ নেন নাসির।
নিজের শেষ দুই ওভারে গ্রায়েম ক্রেমার ও তিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে ফিরিয়ে প্রথমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন সাকিব। ক্রেমারকে এলবিডব্লিউ করার পর পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। আর এক প্রান্ত আগলে রাখা এল্টন চিগুম্বুরাকে (৪১) এলবিডব্লিউ করে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ইতি টেনে দেন নাসির। চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রিচমন্ড মুতুমবামি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল হতাশার। মাত্র ২ রানেই ১ উইকেট হারিয়েছিল স্বাগতিকরা। এরপর ১৩১ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট। তবে মুশফিকের অসাধারণ সেঞ্চুরি ও সাব্বিরের ফিফটিতে লড়াকু পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিক-সাব্বির মিলে ১১৯ রান যোগ করেন।
ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা মুশফিক দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০৭ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলেন। ১০৯ বলে ৯টি চার একটি ছক্কায় ১০৭ রানের ইনিংসটি সাজান এই ডানহাতি। এ ছাড়া সাব্বির ৫৭, তামিম ৪০, সাকিব ১৬ রান করেন। আর শেষ দিকে মাশরাফি ৮ বলে ১৪ ও আরাফাত সানী ৮ বলে ১৫ রান করে দলের সংগ্রহে অবদান রাখেন।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে সিকান্দার রাজা ও তাউরাই মুজারাবানি দুটি করে উইকেট নেন। তিনাশে পানিয়াঙ্গারা ও লুক জংউইয়ের ঝুলিতে জমা পড়ে একটি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৩/৯ (মুশফিক ১০৭, সাব্বির ৫৭, তামিম ৪০; রাজা ২/৪৭, মুজারাবানি ২/৬৪, জংউই ১/৪৫)।
জিম্বাবুয়ে: ৩৬.১ ওভারে ১২৮ (চিগুম্বুরা ৪১, জংউই ৩৯, ক্রেমার ১৫; সাকিব ৫/৪৭, মাশরাফি ২/১৩, নাসির ১/৬, আল-আমিন ১/১৫)।
ফল: বাংলাদেশ ১৪৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: মুশফিকুর রহিম।