পর্যটন শিল্পে বিপর্যয়

0
পর্যটন শিল্প ইতোমধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে চিহ্নিত হইয়াছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের এক-তৃতীয়াংশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান উত্স পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ আসে এই খাত হইতে। পর্যটনখাতের বিকাশের জন্য যেসকল প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা থাকিতে হয়, তাহার বৈচিত্র্যময় সম্ভার আমাদের রহিয়াছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এই খাতের সম্ভাবনা যতটা বিকশিত হইয়া বৈদেশিক মুদ্রার অধিক সংস্থান করিতে পারিত, বাস্তবে ততখানি হয় নাই।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, এইবার পর্যটন মৌসুমে আট সহস্রাধিক বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ-ভ্রমণ বাতিল করিয়াছেন। চলতি মাস পর্যন্ত চার মাসে টুর অপারেটরদের ক্ষতি দাঁড়াইয়াছে ৩০০ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছিল। কেবল বিদেশি নহে, দেশের মানুষও অবকাশ যাপনের নিমিত্ত পর্যটন মৌসুমে ভিড় করেন পর্যটন কেন্দ্রসমূহে। কিন্তু এইবারের টানা অবরোধ ও হরতাল এই খাতে বিপর্যয় ঘটাইয়াছে। দেখা গিয়াছে, পর্যটন মৌসুমে স্বাভাবিক সময়ে সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ পর্যটক বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম হইতে মার্চের শেষাবধি টানা হরতাল, অবরোধ ও নাশকতায় পর্যটন খাত প্রায় স্থবির হইয়া পড়িয়াছে। কক্সবাজার, সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট—প্রায় সকল পর্যটকপ্রিয় স্থান পর্যটকশূন্য। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিপিটি) ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে প্রায়  ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার এবং ২০১২ সালে ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার বিদেশি পর্যটক আসিয়াছেন। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সংখ্যা আড়াই লক্ষে নামিয়া আসে। ২০১৪ সালে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হইলেও ২০১৫ সালে আসিয়া আবার সেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই খাতের সহিত জড়িত অন্তত ১০ লক্ষ মানুষও সংকটে পড়িয়াছে। অধিকাংশ পর্যটন টুর অপারেটর ও হোটেল মালিক এমতাযস্থায় কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করিতেও হিমশিম খাইতেছেন।
বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এই সম্ভাবনাময় খাতটিতে বাংলাদেশ কিছুটা অগ্রসর হইতে না হইতে পিছাইয়া যাইতেছে। অথচ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দিক হইতেও পর্যটন শিল্প সারা বিশ্বে সর্ববৃহত্ খাত হিসাবে স্থান দখল করিয়া লইয়াছে। আধুনিক বিশ্বের সকল দেশই তাহাদের যতটুকু প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পদ রহিয়াছে, ততটুকু পুঁজি করিয়াই পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করিতেছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী গোটা দুনিয়ায় ২০২০ সাল অবধি পর্যটন খাত হইতে প্রতিবত্সর দুই হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হইবে। তাহাতে এই শিল্পে দক্ষ এবং অদক্ষ উভয় ধরনের কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হইবে। এই খাত মানুষের মধ্যে যে বন্ধন ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে তাহার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শান্তি, সমপ্রীতি ও সৌহার্দও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং সময় আসিয়াছে দেশের ভবিষ্যত্ বৃহত্তর অর্থনৈতিক সুফলের নিমিত্ত পর্যটনখাতকে হরতাল ও অবরোধ মুক্ত করিবার।
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (০২ এপ্রিল, ২০১৫ ইং)
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.