চট্টগ্রামে নৌকা ধানের শীষের লড়াই

0

জুবায়ের সিদ্দিকী – 

দেশে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে ২৩৪ পৌরসভায় একযোগে ভোট অনুষ্টিত হচ্ছে। সুষ্ট নির্বাচন হলে লড়াই জমবে নৌকা ধানের শীষে। ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে নির্বাচন নিয়ে ততই বাড়ছে শঙ্কা। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারনা চালাতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। গোলাগুলি, ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া সহ মারামারির ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। থেমে নেই গন গ্রেফতারও। বিএনপির ও স্বতন্ত্র অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী এখনো আত্বগোপনে। তাদের পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়েও পুলিশী হয়রানীর অভিযোগ আসছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। পক্ষপাতের অভিযোগ আনছেন রিটার্নিং অফিসার ও ওসিদের বিরুদ্ধে। পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।

বিরোধীদল মতের প্রার্থীদের ওইসব এলাকায় মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনি উত্তাপে জনপদে বারুদের গন্ধ মানুষকে আশঙ্কত করছে। সীতাকুন্ডের সন্ত্রাসের জনপদে পৌরসভা নির্বাচনের সময় গত সপ্তাহে নয়মাস জেল খেটে বের হয় শিবির ক্যাডার ওসমান। সৈয়দপুর এলাকায় পুলিশের সে মারা যায়। পুলিশ বলছে তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে। পুলিশের অভিযান চলাকালীন পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার সময় গুলিতে নিহত হয় ওসমান এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশ। সীতাকুন্ডের সন্ত্রাসের জনপদে সরকারদলীয় ক্যাডার, বিএনপি ক্যাডার, শিবিরের ক্যাডার ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ঠিকানায় পরিনত হয়েছে। সীতাকুন্ডের সন্ত্রাসের জনপদে নির্বাচনী হাওয়াতে রয়েছে উত্তাপ। এই জনপদে বিএনপি জামায়াতের লাগাতার সন্ত্রাস ও নাশকতা ঠেকাতে সরকারদলীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার ভয়াবহ চিত্র মানুষের মানসপটে এখনো ভাস্বর। বৃহত্তর চট্টগ্রামে সীতাকুন্ড জনপদ সাতকানিয়া লোহাগাড়ার মত জামায়াত বিএনপি অধ্যুষিত একটি সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য। চট্টগ্রাম মহাসড়কে লাগাতার নাশকতার সময়ে জীবন দিতে হয়েছে অনেক নিরিহ মানুষকে। সরকারদলীয় কিছু নেতার হামবাড়া ভাব ও গ্রুপিং কোন্দলের কারনে দলীয় তৃনমুলের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। পৌর নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এমনই চিত্র অন্যান্য পৌর এলাকাগুলোতেও বিদ্যমান। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ সহ সব পৌর এলাকাতে। সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতে বিএনপির সমর্থক প্রার্থীদের নাজুক অবস্থা। কেউ প্রচারনায় পুরোদমে নামতে পারছেন না। একদিকে পুলিশ অন্যদিকে সরকারী দলের ক্যাডার তাদের তাড়া করে ফিরছে। আওয়ামী লীগ বলছে আমাদের হাতিয়ার হলো সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড। ভোটাররা এখন আগের মত মনোভাবে নেই। তারা প্রতীক দেখে ভোট দেবে না। এটা জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচন। ভোটাররা এলাকার উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারবে এমন প্রার্থীর কথা চিন্তা করবে। সে ক্ষেত্রে ভোটারদের বিবেচনায় থাকবে সরকারদলীয় প্রার্থীর কথা। কিন্তু সরকারের সহযোগিতা ছাড়াও বিরোধীদলের মেয়র প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়ন করতে পারবে বলে মনে করেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নেতৃবর্গ বলেছেন, বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন করতে পারবে না এমন ধারনা ঠিক নয়।

চট্টগ্রামে ১০ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন মেয়র প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার দলীয় নির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের কেউ প্রতীক দেখে প্রার্থীদের সায় দিচ্ছেন। আবার অনেকে এলাকার উন্নয়নে ভুমিকা রাখার মত প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখে মনোভাব ব্যক্ত করছেন। মিরসরাইতে পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন ব্যাপক গনসংযোগ করছেন। দলমত নির্বিশেষে গিয়াস উদ্দিনের জনপ্রিয়তা ব্যাপক রয়েছে। যে কারনে তার নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে বেগ পেতে হবে না বলে জানান পৌরসভা বাসী। চট্টগ্রামে জামায়াতের ঘাটি হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী নেই দলটির। জামায়াতের প্রার্থী সংকট, না বিএনপির সাথে বোঝাপড়ার অভাব এ নিয়ে মাঠে ব্যাপক আলোচনা থাকলেও বসে নেই তিন মেয়র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পাটির তিন প্রার্থীর মেয়র পদে জমজমাট লড়াইয়ে অবর্তীর্ন হয়েছেন।

যাচ্ছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পৌর নির্বাচনে জামায়াতা প্রার্থী না থাকায় দলটির ভোট ব্যাংক যেদিকে যাবে সেদিকে ভারী হবে বিজয়ের পাল্লা। সাতকানিয়া পৌর নির্বাচনে ট্রামকার্ড বর্তমান মেয়র বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী হাজী মোহাম্মদুর রহমান। এলাকায় রয়েছে তার নিজস্ব ভোটব্যাংক। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিএনপি জামায়াতের সাথে তার সম্পর্ক ভাল। এখন তিনি ব্যবসায়ীক কাজে জাপানে। তবে সাতকানিয়াতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জোয়ায়েরের অবস্থান ভাল। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধিতায় মেয়র প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীরা প্রচারনায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শাহজাহান সিকদার ও বিএনপি প্রার্থী হেলাল উদ্দিন শহ এর গনসংযোগ বেশ জমজমাট। বাঁশখালীতে বর্তমানে মেয়র প্রার্থী দুইজন। আওয়ামী লীগের সেলিমুল হক চৌধুরী ও বিএনপির কামরুল ইসলাম হোসাইনি প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। পটিয়াতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ও বিএনপি প্রার্থী তৌহিদুল আলম, জাতিয় পার্টির শামসুল আলম মাষ্টার এর মধ্যে ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ হবে।

চন্দনাইশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুল আলম খোকার অবস্থান ভাল। এখানে এলডিপির প্রার্থী আয়ুব কুতুবীর মধ্যে ভোটযুদ্ধ হবে। রাউজানে দেবাশীষ পালিত এর অবস্থান ভাল হলেও একটি মহল তাকে কোনঠাসা করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। যেখানে আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবীর ছেলেও মেয়র প্রার্থী হয়েছেন দেবাশীষ পালিতের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে, চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থীদের অনেকে ভোটের আগে মেয়র হয়ে গেছেন এমন মনোভাব নিয়ে ডেমকেয়ার হয়ে সাংবাদিকদেরও এডিয়ে যাওয়ার মনোবৃত্তি হয়েছে। অনেকের খায়েশ অন্যরকম। পেশিশক্তির মহড়ায় ভোটের বৈতরনী পার হওয়ার। এই খায়েশ কোন কোন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরও আছে। এদের এসব খায়েশ নিয়ে আলোচনা সমালোচনাও হচ্ছে সর্বত্র। সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থীদের এমন খায়েশের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতকর্তা একান্ত প্রয়োজন।

জনগন আশা করছে সিটি কর্পোরেশনের মত নির্বাচন যেন না হয়। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে। তবেই হবে সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভোট। যারা পেশিশক্তিকে ব্যালটের চেয়ে শক্তিধর মনে করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের সমুচিত জবাব দেওয়ার সময় এসেছে ব্যালটের মাধ্যমে। ঘরের শত্রু বিভীষন’ আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ। এই চিত্র চট্টগ্রামের অধিকাংশ পৌরসভায়। এদিকে বিএনপির বড় পুজি হচ্ছে সরকার বিরোধী সেন্টিমেন্ট। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটযুদ্ধে প্রচারে মাঠে বিএনপি। দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে দলের ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মী সমর্থকও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিএনপি মনে করে, ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, বিরোধী রাজনৈতিক মহলের উপর নির্যাতন, গুম খুন দুর্নীতি লুটপাট।

সন্ত্রাস চাঁদাবাজি সহ সরকারের নেতিবাচক কর্মকান্ড আসন্ন ভোটে প্রভাব ফেলবে। পৌর নির্বাচনের প্রায় ২৫ ভাগ মেয়র প্রার্থী স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেন নি। ৭২ ভাগের পেশা ব্যবসা। হত্যা মামলার আসামী ৩৬ জন। আটজনের আয় বছরে কোটি টাকার উপরে। কোটি টাকার সম্পদের মালিক ৪৭ জন। এর মধ্যে ২০ জন। আওয়ামী লীগের ও ১৩ জন বিএনপির। সর্বোচ্চ আয়ের প্রার্থী আওয়ামী লীগে বেশি। সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.