সিটিনিউজবিডি :: কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের বিচার যেভাবে হয়েছে সেভাবে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিনেরও বিচার করতে চান এলডিপি সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ বীরবিক্রম।
রোববার (০৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘিতে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বর্তমান সিইসি শুধুমাত্র চাকরি, গাড়ি-বাড়ি আর টাকার লোভে বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। ভোটের পরিবেশ নষ্ট করেছেন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছেন।
‘ট্রাইব্যুনালে গোলাম আজমের বিচার যেভাবে হয়েছে সিইসিকেও সেভাবে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ’ বলেন অলি।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপি’র সভাপতি অলি আহমেদ পৌরসভা নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এলডিপি সভাপতি বলেন, সিইসি সাহেব বলেছেন,শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। এটা সত্য কথা। কারণ দিনের বেলা কোন ভোট হয়নি। ফজরের আজানের পরপর ভোটার উপস্থিতির আগেই ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে বাক্সভর্তি করেছেন সরকারি দলের ক্যাডাররা। আর এতে সহযোগিতা করেছেন নৈতিকতা বিবর্জিত প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসাররা।
‘আমি জানি না তারা ধর্মে বিশ্বাস করে কিনা। যদি করে তাহলে তাদের পবিত্র দায়িত্ব ছিল, ব্যালট পেপার ভোটারদের কাছে দেওয়া। কিন্তু তারা সেটা দিতে পারেনি। চন্দনাইশে অনেকগুলো কেন্দ্রে ভোটারদেরকে মেয়রের ব্যালট পেপার দেওয়া হয়নি।’
এভাবে যদি বাংলাদেশ চলে তাহলে যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় হবে উল্লেখ করে তিনি এজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দায়ী করেন। অলি বলেন,‘গোলাম আজমের যেভাবে ট্রায়াল হয়েছে যুদ্ধাপরাধের জন্য, সেখাবে সিইসিরও ট্রায়াল হবে আগামী দিনে, মানবাধিকা হরণ, জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখা এবং জনগনের উপর নির্যাতনের জন্য। এই এক ব্যক্তির কারণে আজ সমগ্র বাংলাদেশ হুমকির মুখে।
সিইসিকে আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে যদি সিইসি আল্লাকে বিশ্বাস করে, নবীকে বিশ্বাস করে, নিজের উপর আস্থা থাকে তবে তার উচিত হবে যেসব পৌর এলাকায় ভোট হয়েছে সেখানের বিভিন্ন বাক্স থেকে ৫০টি করে ব্যালট পেপার নিয়ে ওই এলাকার ভোটারদের স্বাক্ষর ও টিপ সই মিলিয়ে দেখা। মিলিয়ে দেখে তিনি যদি সেটা প্রমাণ করেন তাহলে আমরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেব।
‘নাহলে গোলাম আজমের মতো একদিন তাকেও জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সেযব কর্মকর্তা জড়িত তাদের বিচারও একদিন জনগণ করবে। অবশ্যই তাদের জনরোষে পড়তে হবে। প্রাকৃতিক নিয়ম বলেন, আল্লার বিচার বলেন, যে কোন কোন বিচার থেকে তারা রেহাই পাবে না। যেমন কর্ম, তেমন ফল। যে নালে উৎপন্ন, সেনালে বিনাশ।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে স্বাধীন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেটা অনুভব করতে পারছি না। আমি মনে করি আমি একজন পরধীন ব্যক্তি, ব্রিটিশ আমলে যেভাবে ব্রিটিশদের গোলাম ছিলাম, এখন আওয়ামী লীগের গোলাম হয়ে বসবাস করছি।
সরকারের জুলুম নির্যাতন বেড়ে গেছে অভিযোগ করে অলি আহমেদ বলেন, ঘরের সামনে ককটেল রেখে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি থেকে নাপিতের দোকান পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না। সমাজের সব শ্রেণির লোক থেকে চাঁদা আদায় করছে। এমনকি প্রবাসীদের পরিবারের উপর নির্যাতন হচ্ছে, তাদেরকেও প্রতিমাসে টাকা দিতে হয়।
পৌরসভা নির্বাচনে বাঁশখালীতে বেলা ১২টা পর্যন্ত আংশিক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও দুপুরের পর থেকে কেন্দ্র দখল হয়ে যায় অভিযোগ করে তিনি বলেন,‘পূর্ব পরিকল্পীতভাবে বস্তা থেকে সিল মারা ব্যালট বাক্সে ভরে দেওয়া হয়। একইভাবে পটিয়া ও অন্যান্য পৌরসভায় কেন্দ্র দখল করা হয়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনে চট্টগ্রামে নিজ নির্বাচনী এলাকা চন্দনাইশে নিজের ভাতিজা আইয়ূব কুতুবিকে প্রার্থী করেছিলেন এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ। কিন্তু নৌকার জোয়ারে নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চন্দনাইশেও ঠাঁই পায়নি এলডিপি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম, নগর বিএনপির সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, দক্ষিণ জেলা এলডিপি সভাপতি কফিল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।