সোনাদিয়া বিচে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে

0

জামাল জাহেদ,কক্সবাজার : ইতিহাসের রাজ সাক্ষী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পদধুলি পড়েছে কক্সবাজারের যে গ্রামে,সে গ্রামের নাম মহেশখালী কুতুবজোমের সোনাদিয়া দ্বীপ। জাতির জনক ১৯৭৫ সালের মার্চের কোন একদিনে পাড়ি জমিয়েছিলেন সোনাদিয়া দ্বীপে। দেশের কঠিন সময়ে বঙ্গবন্ধুকে জায়গা দিয়েছিলেন, এবং খাসি জবাই করে অতিথিয়তা সাজিয়েছিলেন আব্দুল গফুর প্রকাশ নাগু মেম্বারের পিতা মরহুম আসত আলী।

বর্তমানে সেই বঙ্গবন্ধু পদধুলিত সোনাদিয়া দ্বীপ পরিণত হয়েছে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের মিলন মেলায়। প্রতিদিন শত শত ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্থীদের আগমন ঘটছে। কক্সবাজার থেকে মাত্র ২৫মিনিটে সমুদ্র পথে সোনাদিয়া দ্বীপে পৌছা যায়। সমুদ্র আর সরাসরি সূর্যলোকে আকর্ষনীয় সোনাদিয়া বিচ। দেখার মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় ঝাউবীথি আর সাগরের ঢেউ,বালিয়াড়ি, লাল কাকড়ার বিচরণ মোহনীয় করেছে সোনাদিয়ার চরের প্রাকৃতিক দৃশ্য। প্রতিদিন ঢাকা চট্রগ্রাম সহ দেশী বিদেশী হাজারো পর্যটকের আগমন হচ্ছে কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়া দ্বীপে। দারুন এক বিনোদন পার্কে পরিণত হয়েছে অবহেলিত এই কুতুবজোমের সোনাদিয়া দ্বীপ।

সকালের সূর্য ওঠার সাথে সাথেই দেখা যাচ্ছে নিত্যনতুন আমেজে শত শত ছেলে বুড়ো তরুন সোনাদিয়া বিচে। বিকালটা হয় যেন কপোত কপোতীর নান্দনিক যুগলের প্রিয়তম মুহুর্তের ক্ষণকাল। সোনাদিয়া বিচে রয়েছে বিস্তৃতি সমুদ্রতট,উন্মুক্ত পৃথিবীর একাংশ। দেখলেই মনপ্রান জুড়িয়ে যায়। সৌন্দর্যময় কাঠের তৈরি সেতুতে সমুদ্রের নোনাজলের স্পর্শ নেওয়া যায়।পাশে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে সবুজের দারুন এক বেষ্টনী, যেন সৌন্দর্যবর্ধন এক নগরীর দ্বারপ্রান্ত, সেতুটি নতুন যোগাযোগব্যবস্থার দ্বার উন্মুক্ত করেছে সোনাদিয়া টু কক্সবাজার ও ঢাকার সেতুবন্ধন। বর্তমান সরকারের মহা পরিকল্পিত গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হলে সোনাদিয়া দ্বীপ হবে থাইল্যান্ড, দুবাই, সিংগাপুরের মতো অত্যাধুনিক পর্যটন শহর। কর্মস্থান হবে লাখো মানুষের। সোনাদিয়া গ্রামে যোগাযোগের জন্য নির্মিত ঘটিভাংগা সেতু সংযোগ সড়ক চালু হলে সহজে সোনাদিয়াতে পর্যটক আসা যাবে বলে স্থানীয়রা মত প্রকাশ করেন।কক্সবাজার কস্তুরা ঘাট থেকে নৌকা বা স্পীড ভোট দিয়ে কাঠের তৈরি ঘাট দিয়ে সোনাদিয়া আসা যায় বর্তমানে অতি সহজে কক্সবাজার থেকে। সাগরের বহমান জল ধারা, ভাসমান দেশি বিদেশী রং বেরংয়ের জাহাজ, দারুন জমিয়ে তুলেছে সোনাদিয়া দ্বীপ। কক্সবাজার পর্যটন নগরী তা সত্যিই, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়, কোলাহলময় নগরীতে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে সরকারের কোন সঠিক পরিকল্পনা না থাকাতে দিন দিন সৌন্দর্যরূপ হারাচ্ছে কক্সবাজার। সমুদ্র প্রেমীদের কাছে নির্জন সুন্দর পরিবেশ হিসাবে সাম্প্রতিক সময়ে সোনাদিয়া দ্বীপ খুবই আকর্ষন করেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়ে। স্বল্প খরচে অল্প সময়ে আসা যাওয়া যায় কক্সবাজার থেকে সোনাদিয়া বিচে।পর্যটন নগরী কক্সবাজার বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত হলেও নাই কোন শিশুপার্ক, ইকোপার্ক, ওয়াটার পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানা বা যাদুঘর। তাইতো বর্তমানে ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ সোনাদিয়াতে পাড়ি জমাচ্ছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ দেশের নানা পর্যটক। সোনাদিয়া দ্বীপ পরিণত হয়েছে নতুন এক বিনোদন স্পট। আর দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে হরেক রকমের দোকানের পশরা। তাবু স্টাইলে খোলে বসেছে চা কপি চটপটি, ফুসকা, ছুলা বাতাম, কাকড়াসহ বিভিন্ন ভাঁজা বুজার নানা দোকান আর এসব দোকানে বেশি পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে দেশি বিদেশী নামে স্থানীয় সাগর কুলে ধরা পড়া চিংড়ী কাকড়া, প্রতি পিচ ৩৫/৪৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সরে জমিনে দেখা যায় খুব মজা করে খাচ্ছে অনেকে তৃপ্তিদায়ক ভাবে, বেশির ভাগ তরুনেরা কাকড়ার প্রতি ঝুকে পড়েছে ভাজা কাকড়ার স্বাদ পেতে। চরে বসতি গড়েছে সমুদ্রের টাটকা তাজা মাছের পশরা নিয়ে অনেকগুলো দোকান,যেখানে অল্প টাকায় মজাদার তাজা রুপচান্দার মাছের স্বাদ নেওয়া যায়।সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় সাগরবেষ্টিত সমুদ্রকন্যা সোনাদিয়া দ্বীপ।

অন্যদিকে সবার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব একে-অন্যের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে জড়ো হচ্ছে গজিয়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্র সোনাদিয়াতে। ঈদের দিন ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দর্শানার্থীদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক যুগলের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও স্বল্প সময়ে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের অতি কাছে হওয়াতে সোনাদিয়া। আমাদের প্রতিবেদক সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ কালে দেখেছেন, কক্সবাজার কোষ্টগার্ড কমান্ডের আকতার হোসেন ও কিছু কোষ্টগার্ড সদস্যও সোনাদিয়া ঘুরে দেখেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে স্থানীয়দের নানা বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য দিকনির্দেশনা দেন বলে স্থানীয় যুবক একরাম জানান। তিনি আরো জানান,অস্থায়ী ভাবে যদি সোনাদিয়া দ্বীপে নৌপুলিশ বা কোষ্টগার্ড ক্যাম্প স্থাপন করে তাহলে অদুর ভবিষ্যতে সোনাদিয়া দ্বীপে জলদস্যুতা স্থান পাবেনা, পর্যটক দ্বীপ হিসাবে বিশ্বে পর্যটকে নাম লিখাবে।

পর্যটক হিসাবে ঘুরতে আসা ঢাকার নাদিয়া বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রের চেয়ে সোনাদিয়ার সমুদ্র অনেক সুন্দর ও প্রাকৃতিক। সমুদ্রের নীল জল সমুদ্রের মাঝে কাঠের সেতু তাকে খুব আকর্ষণ করেছে। সরকারি কোন উদ্যেগ বা ব্যক্তি উদ্যেগে না হলেও উন্মুক্ত এই সোনাদিয়ার জেটিঘাট সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন বিনোদন উৎসুক ও ভ্রমন পিপাসু মানুষের উপস্থিতিতে উপচেপড়া ভিড়, ভ্রমন পিপাসু মানুষের দারুন এক জায়গায় পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বে ৪শত জোড়া চামচটুঠো পাখির দেখা ও মিলে সোনাদিয়ার চরে,বুনোহাস ও নানা পাখির মুখরিত অরণ্যঘেরা দ্বীপ সোনাদিয়া। দেখা যাচ্ছে সোনাদিয়া দ্বীপে দূরদূরান্ত থেকে আসা নানান বয়সী নারী ও পুরুষ ছেলেরা কেউ খাচ্ছে গরম পিঁয়াজু, কাঁকড়া ভাজা, ছটপটি, চনামুড়ি, বাদাম,আবার কারো হাতে কোল্ড ড্রিংকস ভিড় জমাচ্ছে চরে বসা খোলা দোকানে।

খাবারের দোকান মালিক সেলিম জানান, প্রতিদিন তাদের বেচা বিক্রি খুব ভালো ব্যবসা হয়। কুতুবজোম ইউনিয়ন আঃলীগের সভাপতি ও বর্তমান সোনাদিয়া দ্বীপের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর প্রকাশ নাগু মেম্বার বর্তমান পরিস্থিতি সর্ম্পকে বলেন, বর্তমানে সোনাদিয়া দ্বীপ বিনোদন পার্কে পরিনত হয়েছে। পাল্টে যাচ্ছে সমুদ্র পাড়ের দৃশ্য, যদি স্থায়ীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজর রাখে তাহলে সরকারের নানা ঘাটতি পুরন করবে সোনাদিয়া দ্বীপ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.