কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা

0

ঢাকা অফিস : বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সোমবার থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। সরকারি গেজেট প্রকাশ করে দাবি না মানা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। ইতিমধ্যে সরকারি কলেজ শিক্ষকরা দু’দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন।

আগামী ২২ জানুয়ারি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি জরুরি সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা শর্তযুক্ত পে-স্কেল প্রত্যাহার করেছেন। কোনো শর্তারোপ ছাড়া নতুন স্কেলে বেতন ভাতার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষকরাও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ হাজার শিক্ষক আছেন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সোয়া ২ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ফলে সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে আজ থেকে। অচল হয়ে পড়বে এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত ৯ মাস ধরে বেতন ও পদমর্যাদার সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।

৪ জানুয়ারি রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যাতে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পেতে পারেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাওয়া গেলে অর্থ বিভাগ দ্রুততার সঙ্গে অনাপত্তি প্রদান করবে। তবে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন সমিতি। কতিপয় আমলা প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করে ফেডারেশন পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা, কাজের ধরন, চাকরির বয়সসীমা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন মহলে এক ধূম্রজাল সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এতে শিক্ষকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ের ক্ষোভ এবং আমলাদের নানা বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, গত ৯ মাস ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে এমন কোনো কর্মসূচি আমরা দিইনি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখান থেকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, দাবি মেনে নেয়া না হলে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে। এর মধ্যে কোনো ধরনের আপস নেই।

সরকারি কলেজ শিক্ষক: অধ্যাপকদের পদ ও বেতন স্কেল অবনমনের প্রতিবাদে এবং সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। দেশের ৩০৫টি সরকারি কলেজ, ৩টি আলিয়া মাদরাসা, ১৬টি কারিগরি ইনস্টিটিউটসহ শিক্ষাবোর্ড, নায়েম ও অধিদফতরে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রয়েছেন। ৪ ও ৫ জানুয়ারি শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে সরকারি কলেজে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির থাকে। সেসব প্রতিষ্ঠানে ক্লাস তো হয়নি, পরীক্ষাও স্থগিত থাকে।এতে পরীক্ষার্থীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি জানিয়েছে, আগামী ২২ জানুয়ারি সমিতি জরুরি সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উলাহ খোন্দকার জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হলে ভাল হতো। এরপরও সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন বৃহৎ এই বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, আমাদের দাবি কোনো অযৌক্তিক বা বাড়াবাড়ির পর্যায়ের নয়। ন্যায্য ও ন্যায় সংগত দাবি করে আসছেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। নতুন বেতন স্কেলে শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপকদের পদমর্যাদা ও বেতনক্রম অবনমন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী: এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেলে এখনো বেতন-ভাতা পাননি। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেলে বেতন-ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরাও দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুদান-সহায়তা নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সার্বিক পর্যালোচনা করে তাদের যোগ্যতাভিত্তিক অনুদান-সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ মূল্যায়ন করবে।

শর্তহীনভাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পে-স্কেল কার্যকর ও শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেটি শিক্ষকদের জন্য অপমানজনক। বেসরকারি শিক্ষকরা কোনো ধরনের শর্ত মেনে নেবে না। শর্তহীনভাবেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ দাবি আদায়ে শিক্ষকরা আগামী ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি কালো ব্যাজ ধারণ, ১৬ জানুয়ারি কর্মবিরতি এবং ১৮ জানুয়ারি উপজেলা সদরে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবে বলে তিনি জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.