সিটিনিউজবিডি : দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এ ধাপে ঢাকাসহ দেশের ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন।
আম বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। বাংলায় তর্জমা করেন মাওলানা দেলোয়ার হোসেন।
বিশ্ব ইজতেমার এ ধাপে অংশ নিতে ইতিমধ্যে লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে সমবেত হয়েছেন। যানবাহন সংকট, ভিড়, যানজটসহ নানা ভোগান্তি এড়াতে গত বুধবার থেকেই মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার যেন ইজতেমামুখী মানুষের ঢল নামে। বাস, ট্রাক, ট্রেন, নৌকা, ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে জামাতবদ্ধ হয়ে মুসল্লিরা এসেছেন টঙ্গীর ইজতেমাস্থলে।
ইজতেমা শুরুর দিন শুক্রবার থাকায় ময়দানেই হবে জুমার নামাজের জামাত। এটিই এ বছরের জন্য বিশ্ব ইজতেমার শেষ জুমার নামাজের জামাত। এ জুমার জামাতে অংশ নিতে ইজতেমা মুসল্লিদের পাশাপাশি ঢাকা, গাজীপুর ও এর আশপাশের জেলার মুসল্লিরা সকাল থেকেই ছুটছেন ইজতেমাস্থলে। বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি অনেকে পায়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে যাচ্ছেন।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান এবং আশপাশ এলাকায় রয়েছে র্যাব-পুলিশের কড়া নিরাপত্তা। র্যাব-পুলিশের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো ইজতেমা এলাকাকে। খিত্তায় ভিত্তায় সাদা পোশকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদ্যসরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি ইজতেমা মাঠের প্রতিটি প্রবেশপথে তৈরি করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ ছাড়া রয়েছে বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, নৌ-টহল, চেকপোস্ট, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও র্যাবের হেলিকপ্টার টহল।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, বিশ্ব ইজতেমায় দ্বিতীয় ধাপে ৫ সহস্রাধিক পুলিশ পোশাক পড়ে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। প্রথম ধাপের মতো এবারও (দ্বিতীয় ধাপেও) খিত্তায় খিত্তায়, বিদেশি মেহমানখানাসহ ইজতেমা এলাকায় বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ কাজ করবে। এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স, চেকপোস্ট, নৌ-টহল থাকবে, পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ব্যবহার করা হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও।
এদিকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পার্শ্বে নিউ মন্নু কটন মিলের অভ্যন্তরে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রথমধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয়ধাপে যে ১৬টি জেলার মুসুল্লিরা অংশ নিচ্ছেন- জেলাওয়ারি মুসল্লির যেভাবে অবস্থান নেবেন তা হলো- ১ নং থেকে ৭ নং খিত্তায় ঢাকা জেলার বাকি এলাকা, ৮ নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৯ ও ১১ নং খিত্তায় জামালপুর, ১০ নং খিত্তায় ফরিদপুর, ১২ ও ১৩ নং খিত্তায় নেত্রকানা, ১৪ ও ১৫ নং খিত্তায় নরসিংদী, ১৬ ও ১৮ নং খিত্তায় কুমিল্লা, ১৭ নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ১৯ ও ২০ নং খিত্তায় রাজশাহী, ২১ নং খিত্তায় ফেনী, ২২ নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ২৩ নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ২৪ ও ২৫ নং খিত্তায় বগুড়া, ২৬ ও ২৭ নং খিত্তায় খুলনা, ২৮ নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা এবং ২৯ নং খিত্তায় পিরোজপুর জেলা।
আগমী ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত হবে। এই মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
উল্লেখ, এর আগে গত ৮ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ। এ দুই ধাপে দেশের ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন আগামী ২০১৭ সালের বিশ্ব ইজতেমায়।