সম্মানজনক সমাধান চান বিএমএ নেতারা
চট্টগ্রাম অফিস : আকস্মিকভাবে তিন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে হাজার হাজার রোগীকে জিম্মি করে ফেলায় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতারা।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন বিএমএ নেতারা।
কর্মসূচিতে সার্জিস্কোপ হাসপাতালে মেহেরুননেসা রিমার ‘ভুল অস্ত্রোপচার ও অবহেলা’র মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিষয়ে সম্মানজনক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নগরীতে ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ শরীফ। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিএমএ সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল, প্রবীণ চিকিৎসক ডা. ইমরান বিন ইউনূস প্রমুখ।
চট্টগ্রামের মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাজার হাজার রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া মানবিক কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএমএ নেতারা বলেন, আগে আন্দোলন-সংগ্রাম ও দাবি আদায় করা হতো সরকারি হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়ে। এবার প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিএমএ সরকারি হাসপাতাল খোলা রেখে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছে। নিরাপত্তার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোগীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, ইউএসটিসি, ডায়াবেটিস হাসপাতাল, লায়ন হাসপাতাল, বিএনএসবি, সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মেমন হাসপাতাল ইত্যাদি খোলা রাখা হয়েছে।
ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মেহেরুননেসা রিমার ডাক্তার শামীমা সিদ্দিকী রোজী ৭ জানুয়ারিই ভর্তি হতে বলেছিলেন। তার গর্ভকালীন খিঁচুনির ঝুঁকি ও সিজার করা লাগবে জানানো হয়। কিন্তু ভর্তি করানো হয়নি। ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভর্তি করানো হয়। নরমাল ডেলিভারির জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ডাক্তার রোজি ঝুঁকির কথা বলার পরও অনুমতি দেননি। ১০ জানুয়ারি রাত ১২টায় সিজার করতে সম্মত হন। রাত একটার দিকে ডিউটি ডাক্তারকে দিয়ে ডা. রোজীকে ফোনে জানানো হয় যে তারা চান রোগীকে যেন তখনই সিজার করা হয়। তখন ডা. রোজী জানান সকাল আটটায় তার একটা কনফারেন্স আছে, তিনি কনফান্সেরে আগে রোগীর পক্ষ চাইলে সিজার করতে পারেন।
তিনি বলেন, ভোর সাড়ে ছয়টায় রোগীর অপারেশন হয়। অপারেশনের আগেও রোগীর রক্তচাপ বেশি থাকে। অপারেশনে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ডা. রোজী রক্তদাতা প্রস্তুত রাখতে বলেন। কিন্তু তখন কোনো রক্ত লাগেনি, সফলভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয়। অপারেশনে তেমন কোনো জটিলতা না হওয়ায় তিনি রোগীকে পোস্ট অপারেটিভে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসককে ফলোআপ দিতে বলে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
ডা. শরীফ বলেন, স্বাভাবিক সিজারের রোগীর মতো নার্স রোগীকে দেখেন, তখন রোগীর জরায়ুপথে বা সেলাইয়ের জায়গায় কোনো অস্বাভাবিক রক্তপাত ছিল না। তবে রোগী কাঁপছিল। এরপর অন্তত দু থেকে তিনবার নার্স রোগীকে দেখে আসে। সকাল নয়টার পর নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দিতে গিয়ে রোগীর স্বজনরা সর্বপ্রথম খেয়াল করেন রোগীর প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। এ সময় একজন সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার রোগীকে ফলোআপ দিয়ে ডা. রোজীকে ফোন দেন। উপস্থিত চিকিৎসক বুঝতে পারেন রোগী জরায়ু সংকোচনে অক্ষম। এরপর থেকে তিনি করণীয় যা যা ব্যবস্থা আছে গ্রহণ করেন এবং রোজীকে আপডেট জানাতে থাকেন। রোজী কনফারেন্স অসমাপ্ত রেখে ছুটে আসেন সাড়ে ১০টায়। জরায়ু ফেলে দেন। এ সময় রোগীর স্বজনদের দেওয়া ১৪ ব্যাগ রক্তের মধ্যে ৯ ব্যাগ রোগীকে দেওয়া হয়। আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যু ঘটে।