প্রাণঘাতী জিকা জ্বর

0

স্বাস্থ্য : বিশ্ব আজ নুতন জ্বরে আক্রান্ত- জিকা জ্বর। আমেরিকার দেশসমূহে এর ব্যাপকতা এখন সারাবিশ্বে দুশ্চিন্তার কারণ।

জিকা ভাইরাস : PHEIC হিসাবে ঘোষণা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি ২০০৫ অনুযায়ী মধ্য আমেরিকার জিকা মহামারীকে Public Health Emergency of International Concern (PHEIC) হিসেবে ঘোষণা করেছে। যেভাবে জিকা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করছে, তাতে PHEIC হিসেবে ঘোষণা অবধারিত ছিল। এ মহামারিতে তিনটি শর্ত পূরণ হয়েছে। এটি একটি নতুন ধরনের রোগ, সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, পর্যটন এবং বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। জিকাকে PHEIC ঘোষণা করায়, এ মহামারির জন স্বাস্থ্য সমস্যা অন্য এক মাত্রা পেল এবং এ রোগ মোকাবেলায় তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

ছড়িয়ে পড়ছে জিকা ভাইরাস

দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জিকা ভাইরাস। দক্ষিণ, মধ্য এবং উত্তর আমেরিকার দুটো দেশ কানাডা এবং হাইতি ছাডা সকল দেশ আক্রান্ত হতে যাচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করেছে। ব্রাজিলে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি দেখা দেওয়া জিকা এখন আমেরিকার দেশে দেশে মূর্তিমান আতঙ্ক। ছোট মস্তিষ্কের শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মা-বাবারা দিশেহারা। জরুরি অবস্থা জারিসহ নারীদের গর্ভধারণ না করা এবং জিকা পজিটিভ হলে গর্ভপাত ঘটছে। আফ্রিকায় ইবোলা সংকটের পর আমেরিকার জিকা সংকট বিশ্ব স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আপাতত কোনো টিকা নাই বলে প্রতিরোধে মূল নজর দিতে হবে বাহক মশা এডিস নিয়ন্ত্রণে, যা সহজসাধ্য নয়। সামনে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকও হুমকির মুখে পড়েছে। দেশে বিদেশে যে খানেই থাকুন, এডিস মশাকে কামড়াতে দেবেন না। এ মশা শুধু জিকা নয় ডেঙ্গু এবং চিকুঙ্গনাইয়া রোগও ছড়ায়।

জিকা ভাইরাস শংকা : Zika Virus Concern

সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে জিকা ভাইরাসের সংক্রমন বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি গর্ভস্থ্য শিশুদের মস্তিষ্কে সংক্রামণ শঙ্কা ও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। ব্রাজিলের একটি এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০১৫ তে আক্রান্তের যে বৃদ্ধি তা ২০১৬ এর শুরুতেও চলমান আছে।

ডেঙ্গুর মতোই এডিস মশার মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। সাধারণত এটা মৃদু ধরনের যে সংক্রামণ করে তাকে জিকা, জিকা রোগ বা জিকা জ্বর বলা হয়। আফ্রিকায় ও এশিয়াতে সেই ১৯৫০ সাল থেকে দেখা গেলেও ২০০৭ সাল থেকে এটা মাইক্রোনেশিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় বিস্তারলাভ করছে। ডেঙ্গু, পীতজ্বর (yellow fever) এবং ওয়েস্ট নাইল রোগের মতো এ রোগটিকে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হয়। কারণ এটা প্রতিরোধে কোনো টিকা নেই, চিকিৎসায় কোনো ওষুধ নেই। এই আরএনএ (RNA) ভাইরাসটি ১৯৪৭ সালে উগান্ডা জিকা বনের বানর থেকে প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং ১৯৬৮ সালে নাইজেরিয়াতে প্রথম মানুষের সংক্রামণ ঘটায়। জিকা ১৯৫১ থেকে ১৯৮১ এ ত্রিশ বছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং ভারত মালেশিয়াসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে সংক্রামণের খবর পাওয়া যায়। সংক্রামণের স্থান থেকে ভাইরাসটি ডেনড্রাইটিক কোষ এবং লিম্ফ নোড হয়ে রক্তপ্রবাহে মিশে যায় বলে ধারণা করা হয়।

দিনে কামড়ানো মশা, এডিসের নানা প্রজাতিতে জিকা শনাক্ত করা গেছে। মশায় এদের সুপ্তিকাল ১০ দিন এবং এরা মূলত বানর এবং মানুষে সংক্রামণ করে থাকে। এ ভাইরাসটি দুটো ভ্রুনের অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে পাওয়া যাওয়ায় ধারণা করা হয় যে এরা প্লাসেনটা অতিক্রম করে এবং গর্ভস্থ্য ভ্রুনের মস্তিষ্ক্রে সংক্রামণ সম্ভব। এমনকি যৌন মিলনেও জিকা ছড়াতে পারে বলে নজির পাওয়া গেছে।

লক্ষণ

সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে- সামান্য মাথা ধরা, ম্যাকুলোপ্যাপিউলার rash, জ্বর, গা ম্যাজ ম্যাজ, চোখের প্রদাহ এবং জোড়ায় ব্যথা। তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে জিকা আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের ভ্রুনের মাইক্রোএনকেফালী বা ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক হতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মস্তিষ্কের সেরিব্লাম ও ব্রেনস্টেম। আগের বছর ২০১৩ ও ২০১৪ এর তুলনায় ২০১৫ সালে ক্ষুদ্র ব্রেন আশাঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। যথাক্রমে ১৪৭ ও ১৬৭ এর জায়গায় ২০১৫ তে ২৭৭২টি। European Center for Disease Prevention and Control ২০১৫ সালে মাইক্রোএনকেফালীর সাথে গুলেনবেরী সিনড্রোমের সম্ভাব্য সম্পর্ক্যের বিষয়ে আলোকপাত করেছে। ল্যানসেট ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত জার্নালে ১৩৪টি ক্ষুদ্রমস্তিষ্কের সাথে জিকা ভাইরাসের সংক্রামণ নিশ্চিত করেছে। এখনও ২১৬৫টি কেস তদন্তাধীন আছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে তবে সেগুলো আমদানি করা, স্থানীয়ভাবে সংক্রামণ হয়নি।

জিকা ভাইরাস সংক্রমন আমাদের দেশে হয় না, তা বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না। পূর্বকালে যে ভারতে হয়েছে বলে বলা হচ্ছে তার অংশ আমরাও ছিলাম। আমাদের দেশেও জ্বর, rash, জোড়া ব্যথা নিয়ে রোগী পাওয়া যায় যেগুলো ডেঙ্গু নেগেটিভ পরীক্ষায় আমরা শুধু ডেঙ্গ হয় নাই বলে সিদ্ধান্ত দেই, জিকার তো খোঁজ খবর করি না। আমাদের দেশেও শিশুরা ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মায়, তারও কারণ হিসেবে জিকাকে আমরা সন্দেহ করি না। জিকা এখনও আমাদের দেশে সনাক্ত হয়নি। কিন্তু এ রোগটিকে নজরদারিতে আনা দরকার, ডেঙ্গুর পাশাপাশি জিকাকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.