চুয়েটের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

0

চট্টগ্রাম: রাউজানের ঊনসত্তরপাড়া মৌজায় রাঙ্গুনিয়া রাবার বাগান সৃজন প্রকল্পের ১০ একর জমি দখল করে নিয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) কর্তৃপক্ষ। ওই জমিতে চার বছর বয়সী ৩ হাজার ১০০ রাবার গাছ এবং ২১ মাস পদ্ধতির ৮ হাজার গ্রাফটেড চারা রয়েছে প্রকল্পের।

বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের ওই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক দেবু প্রসাদ বড়ুয়া জমি দখলের ঘটনায় রাউজান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি করা ওই জিডিতে বলা হয়েছে, রাঙ্গুনিয়া রাবার বাগান সৃজন প্রকল্পের ঊনসত্তরপাড়া মৌজায় ২০১২-১৩ সালে সৃজিত চুয়েটের দেয়াল সংলগ্ন ৩৮ একর রাবার বাগান রয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি চুয়েট কর্তৃপক্ষ কাউকে না জানিয়ে রাবার বাগানের ১০ একর জায়গা লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড দিয়ে দখল করেছে। বর্তমানে দখল করা জায়গায় সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। ওই ১০ একরের ভেতরে প্রকল্পের কোনো কর্মচারী বা পাহারাদারকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি রাবার বাগানের ১০ একর জায়গা বা গাছের ক্ষতিসাধিত হলে করপোরেশন মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

জিডিতে চুয়েট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লাল পতাকা দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করার পর একটি নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে। যাতে লেখা রয়েছে, এতদ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে দে, দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত মামলা নম্বর ০১/১৫-১৬ মূলে এই সম্পত্তির মালিক চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), চট্টগ্রাম-৪৩৪৯। উক্ত সম্পত্তিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ আইনগত নিষিদ্ধ।

সোমবার বিকালে যোগাযোগ করলে চুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী বলেন, চুয়েটের আইটি পার্কের জন্যে ১০ একর খাস জমি বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালের শেষ দিকে ওই জমি রেজিস্ট্রিও হয়েছে। রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ চুয়েটের বিরুদ্ধে জমি দখলের যে অভিযোগ এনেছে তা ভিত্তিহীন। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খাস জমি দখল করতে যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের জমি রেজিস্ট্রি ও পরিমাপ সংক্রান্ত বিষয়গুলো রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত আছেন। এমনকি জমি পরিমাপের সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত রাখা হয়েছিল।

বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের রাবার বিভাগ চট্টগ্রামের একজন কর্মকর্তা জানান, রাঙ্গুনিয়া রাবার বাগান সৃজন প্রকল্পটি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত এডিপিভুক্ত একটি চলমান প্রকল্প। এ প্রকল্পে বন বিভাগ কর্তৃক হস্তান্তরিত ১ হাজার ৫৭ একর জায়গায় ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঁচা বছরে ১ হাজার একর বাগান সৃজনসহ অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণের কর্মসূচি রয়েছে। প্রথম দুই অর্থবছরে ৩৬৩ একর বাগান সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঊনসত্তরপাড়া মৌজায় প্রথম অর্থবছরেই ৫৯ একর বাগান সৃজন করা হয়েছে।

চুয়েটের জমি রেজিস্ট্রি প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, চুয়েট কর্তৃপক্ষ বলছে ১০ একর জমি তাদের অনুকূলে বন্দোবস্তি দেওয়া হয়েছে। ভূমি বন্দোবস্তির আহে বিএফআইডিসিকে কোনো প্রকার অবহিত করা হয়নি কিংবা উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক সরেজমিন তদন্ত করা হয়নি। চুয়েট সংলগ্ন বন্দোবস্তি যোগ্য খালি খাস জায়গা থাকা সত্ত্বেও সৃজিত বাগানের জায়গা কীভাবে বন্দোবস্তি দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়। এর পেছনে কোনো রহস্য বা ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে।

বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া রাবার বাগান সৃজন প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন কাল ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায় ১২ দশমিক ৪০ একর নার্সারি সৃজন, ৩৬৩ একর বাগান সৃজন, অফিস ভবন, ৩টি ডরমেটরি, ১টি সেমিপাকা অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৬ হাজার ফুট কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ২টি মোটরসাইকেল, ১টি পিকআপ, ১টি ট্রাক্টর, ১টি ট্রাক্টর টেইলর, ১টি কম্পিউটার, ১টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ অফিস আসবাব কেনা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জোনে রাবার বাগান আছে আটটি। এর মধ্যে কক্সবাজারের রামু ও রাউজান রাবার বাগান সৃজিত হয় ১৯৬১-৮৮ সালে। উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। রাউজানের ডাবুয়া রাবারবাগান সৃজিত হয় ১৯৬৯-৮৮ সালে, উৎপাদন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। রাউজানের হলদিয়া রাবার বাগান সৃজিত হয় ১৯৮৩-৮৮ সালে, উৎপাদন শুরু হয় ১৯৯১ সালে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.