২২ ইউনিয়নে প্রার্থী পায়নি বিএনপি

0

সিটিনিউজবিডি: সব ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। শতাধিক ইউনিয়নে প্রার্থী আছেন একাধিক।

আবার অন্তত ২২টি ইউনিয়নে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকারি দলের ভয়ভীতির কারণে নেতারা প্রার্থী হতে পারছেন না।এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের ইউপি নির্বাচনে অনেকটা শেষ সময়ে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে নামে বিএনপি। ফলে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দলের নেতাদের।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, শেষ পর্যায়ে প্রার্থী বাছাইয়ে নামায় গভীর রাত জেগেও কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। একই রকম অবস্থা হয়েছিল গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী বাছাইয়ের সময়েও।বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ৬৬৮টি ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ঠিক করা গেছে। এর মধ্যে ৪০১টি ইউপির প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।

শতাধিক ইউনিয়ন থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম আসায় কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করে প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে। এ অবস্থায় রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সব ইউনিয়নে প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায়নি।আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে। কাল ২২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ফলে আজকের মধ্যেই দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে। যদিও গত শুক্রবার রাতেই সব মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।বিএনপির সূত্র জানায়, শতাধিক ইউনিয়নে একাধিক নেতা দলীয় প্রার্থী হতে চেষ্টা-তদবির করলেও অনেক জায়গায় বিপরীত চিত্রও আছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ২২টি ইউনিয়নে বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাননি। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ১৫টি ইউনিয়নে কাউকে প্রার্থী হিসেবে পাওয়া যায়নি।

বরিশালেও কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আসেনি।খুলনা ও বরিশালের স্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি ও নতুন করে মামলায় জড়ানোর আশঙ্কায় অনেকে প্রার্থী হতে রাজি হননি। এর বাইরে দলীয় কোন্দলও আছে। এ কারণে বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ কয়েকটি ইউনিয়নে কারও নাম সুপারিশ করা হয়নি। আর খুলনার দাকোপ ও পাইকগাছাসহ কিছু হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। এ রকম অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নে কয়েকজন বিএনপির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার মতো শক্তিশালী নন। যে কারণে তৃণমূল থেকে কারও নাম সুপারিশ করা হয়নি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাকেরগঞ্জসহ দু-একটি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নেই বলে তিনি জেনেছেন।আর খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম খুলনার নয়টি ইউনিয়নে দলের প্রার্থী না থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খুলনার সব উপজেলায় ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এর মধ্যেও কয়েকটি ইউনিয়নে কেউ কেউ প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া যায়নি।এদিকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ৬ নম্বর মাগুরাগোনা ও ৭ নম্বর শোভনা ইউনিয়নে মাঠপর্যায় থেকে পাঠানো প্রার্থীর নাম পাল্টানোর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, মাগুরাগোনায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতারা আবুল কালাম শামসুদ্দিনের নাম সুপারিশ করে জেলায় পাঠান। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান। কিন্তু জেলার নেতারা নাম পাল্টে নজরুল ইসলামের নাম সুপারিশ করেন। একইভাবে শোভনা ইউনিয়নেও মতিয়ার রহমান শেখের জায়গায় জেলা কমিটি আরেকজনের নাম প্রস্তাব করে। জানতে চাইলে আবুল কালাম শামসুদ্দিন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতারা আমার নাম পাঠিয়েছে। কিন্তু জেলার লোকজন আমার নাম কেটে দিয়েছে। আমি মহাসচিবের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, শুরুতে ২০০-এর মতো ইউনিয়ন থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম আসে। আবার অনেক জায়গা থেকে পাল্টাপাল্টি নামের তালিকাও এসেছে স্থানীয় পর্যায়ে নেতাদের দ্বিধাবিভক্তির কারণে। এ অবস্থায় একক প্রার্থিতা ঠিক করতে কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সম্পর্কে কেন্দ্রের তেমন সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় বিভ্রান্তি ঘটছে। কারণ, কেন্দ্রের যোগাযোগ বা তথ্য পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছেন জেলা বা উপজেলার নেতারা। কিন্তু বিভক্ত নেতারা নিজ নিজ অনুসারীদের পক্ষেই কথা বলছেন। এ অবস্থায় ভুল প্রার্থী মনোনয়নের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় যুক্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। অনেক জায়গায় একাধিক প্রার্থীর নাম থাকায় কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করে একক প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। আবার ভয়ভীতির কারণে অনেক ইউনিয়নে প্রার্থী হতে নেতারা রাজি হননি। দলীয় সূত্র বলেছে, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপি বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুর্গম এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করে। এরপর পর্যায়ক্রমে কাছের এলাকাগুলোর প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে।এর কারণ ব্যাখ্যা করে মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণের এই যুগে এসে আমরা ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করছি। দলীয় প্রতীক ধরিয়ে দিয়ে স্থানীয় সরকারের একেবারে সুদূর ইউনিয়ন পর্যায়ের লোকগুলোকে আমরা ঢাকায় এনে ঘোরাঘুরি করাচ্ছি। এটা স্রেফ হয়রানি ছাড়া কিছু না।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.