বাংলাদেশের গৌরবের ড্র

সিটিনিউজবিডি: যেখানে পাকিস্তান তাদের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করেছে ৬২৮ রান। ২৯৬ রানের বোঝা কাঁধে নিয়ে কতদূরই বা যেতে পারবে বাংলাদেশ? এই টেস্ট যে বাংলাদেশ ড্র করতে পারবে সেটা চিন্তা করতেও অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিতে হত। কিন্তু চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই পাকিস্তান অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল মিলে যা করেছেন, তা স্বপ্নলোকের কল্পনাকেও হার মানায়।

প্রথম ইনিংসে যেখানে বাংলাদেশ অলআউট ৩৩২ রানে। সেখানে চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে চিড় ধরা পিচে ব্যাট করে কত রানই বা করতে পারবেন তামিম-ইমরুলরা!
চতুর্থ দিনের শেষ দুই সেশনে ২৭৩ রান সংগ্রহ করে কেবল তারা প্রথম উইকেট জুটির রেকর্ডই ভাঙেননি। ভেঙেছেন বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যেকোনো উইকেট জুটির রেকর্ডও। আগে প্রথম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২২৪ রান। আর যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ২৬৭ রান। তামিম ১৩৮ ও ইমরুল ১৩১ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেন।

পঞ্চম দিনে ব্যাট করতে নামেন তারা। দলীয় ৩১২ রানে ব্যক্তিগত ১৫০ করে আউট হয়ে যান ইমরুল কায়েস। ততক্ষণে অনেকগুলো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়ে গেছে। তৃতীয় ইনিংসে প্রথম উইকেট জুটিতে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবেও গড়েন রেকর্ড। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

ইমরুল আউট হলেও তামিম তার ক্যারিয়ারের প্রথম ডবল সেঞ্চুরি তুলে নেন। সে তো রীতিমতো রাজকীয় স্টাইলে। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ডবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। হয়ে যান বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় ডবল সেঞ্চুরিয়ান। ২০১৩ সালে গল টেস্টে মুশফিকুর রহিম শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রান করেছিলেন। তাকে ছাড়িয়ে তামিম আজ ২০৬ রান করে আউট হন। এরপর মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার মিলে টেস্টকে মর্যাদার ড্রয়ের দিকে নিয়ে যান।
তামিম আউট হয়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ-সাকিব মিলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ৪৬৩ রানে মাহমুদউল্লাহ (৪০) ফিরে যান। ইনজুরি আক্রান্ত অধিনায়ক মুশফিক অবশ্য ডাক মারেন। এরপর সৌম্য সরকার ও সাকিব মিলে করেন আরো ৬৩ রানের জুটি। দলীয় ৫২৪ রানে সৌম্য (৩৩) আউট হয়ে যান। এরপর শুভাগত হোমকে নিয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন সাকিব। কিন্তু ৫৫৫ রানে তামিম ড্রেসিংরুম থেকে সাকিবকে খেলা চালিয়ে যেতে ইশারা দেন। কিন্তু সাকিব মনে করেন তামিম তাকে ম্যাচ শেষ করে দিতে ইশারা করেছেন। সাকিবও সেঞ্চুরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন না!

অন্যদিকে পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে আগ্রহ দেখালেন না। ফলে হারতে বসা একটি টেস্ট রোমাঞ্চ ছড়িয়ে বাংলাদেশ ড্র করে। ড্র বললে ভুল হবে। এ যে জয়ের সমান ড্র। গৌরবের ড্র। প্রথম পাওয়া ড্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগের আটটি টেস্টেই যে বাংলাদেশ হেরেছিল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৩৩২/১০ (মুমিনুল ৮০ ও ইমরুল ৫৬) ও ৫৫৫/৬ (তামিম ২০৬ ও ইমরুল ১৫০)।
পাকিস্তান : ৬২৮/১০ (হাফিজ ২২৪ ও শফিক ৮৩; তাইজুল ৬/১৬৩)

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.