কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পিন্টুর মৃত্যু : খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য, কারা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা এবং সুচিকিৎসা দিতে ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করার কারণেই বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর অকাল মৃত্যু হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে সুচিকিৎসা না দিয়ে বরং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পিন্টুকে গত ২৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হলেও দুই দিন কোনো চিকিৎসা না দিয়ে ২৬ এপ্রিল তাকে রাজশাহী কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা এবং সুচিকিৎসা দিতে ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করার কারণেই তার অকাল মৃত্যু হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অমানবিকতায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে পিন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

শোকবার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুতে দেশবাসী এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মতো তিনিও গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী দর্শনে বিশ্বাসী এবং বলিষ্ঠ সংগঠক মরহুম নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু মূলত সমাজসেবার মহান ব্রত নিয়ে রাজনীতি করতেন। আর এ কারণেই ঢাকাবাসীসহ সারাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসীদের কাছে তিনি একজন জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছিল। এছাড়া তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে অবদানের কথা তার এলাকাবাসী কোনোদিনও ভুলে যাবে না।
তিনি বলেন, মরহুম নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও লড়াই-সংগ্রামে যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা দেশবাসী চিরকাল স্মরণে রাখবে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি একজন অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবককে হারাল, যার শূন্যস্থান সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
খালেদা জিয়া তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
কারা কর্তৃপক্ষের
অবহেলায় পিন্টুর
মৃত্যু
অন্যদিকে, কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিন্টুর মৃত্যুর খবরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহীন ও শামসুল আলম তোফা।
রিপন বলেন, দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু নিয়ে কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে তাকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল অসুস্থতার মধ্যে পিন্টুকে রাজশাহী কারাগারে নেয়ার পর ২৫ এপ্রিল তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। কারাগারে তিনি সুচিকিৎসা পাননি। কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পিন্টু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একে স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করেন না তারা।
তিনি বলেন, পিন্টুর মৃত্যুর বিষয়ে ইতোমধ্যে তার পরিবারও অভিযোগ করেছে, তার চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষ চরম অবহেলা করেছে।
তিনি পিন্টুর কর্মময় ও সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পিন্টুর মৃত্যুতে তারা শোকগ্রস্ত ও মর্মাহত। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। পিন্টু ছিলেন একজন সাহসী ছাত্রনেতা।
রিপন দলের পক্ষ থেকে পিন্টুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেনা জানান।
পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ পরিবারের
বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। রোববার বিকালে পুরান ঢাকার হাজারীবাগে মনেশ্বর রোডে পিন্টুর শোকাহত মা হোসেনে আরা এবং স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনাসহ পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন।
হোসনে আরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার ছেলেকে রাজশাহীতে নিয়ে খুন করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে অন্যান্য গুম-খুনের মতো তার ছেলেকেও হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকা-ের বিচার দাবি করেন তিনি।
পিন্টুর মা ক্ষোভের সঙ্গে আরো বলেন, তার ছেলেকে বিডিআর হত্যাকা-ের ঘটনার সঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এরপর তাকে কারাগারে নিয়ে এভাবে হত্যা করা হলো।
এ সময় পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনা বলেন, তার স্বামী কিছুতেই মরতে পারেন না; তাকে হত্যা করা হয়েছে, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
রোববার দুপুর মৃত্যুর খবর ঢাকার গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই হাজারীবাগে সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ২৫ মনেশ্বর রোডের বাসায় লালবাগ-হাজারীবাগ-কামরাঙ্গীরচরের কয়েকশ’ নেতাকর্মী জড়ো হন। পিন্টুর স্ত্রী দুপুরে বাসায় আসার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পিন্টুর মৃত্যুর খবর শুনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান এবং মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তার বাসায় ছুটে যান। তারা এ সময় পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। এছাড়া মাসুদ আহমেদ তালুকদারের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল পিন্টুর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার বাসায় যায়।
বিকাল ৩টার দিকে পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু তার ভাইয়ের লাশ গ্রহণের জন্য রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হন। এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, হাইকোর্ট বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে তাকে চিকিৎসা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু পিন্টুকে গত ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার ভাই অসুস্থ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে তার কাছে যেতে দেয়া হয়নি।
ছোট বোন ফেরদৌসী আখতার মিষ্টি বলেন, ভাই অসুস্থ অবস্থায় লোক মারফত পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। গত শনিবারও খোঁজ নিয়েছেন। সেই সময়ও তিনি অসুস্থ ছিলেন। এরপরও তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.