পার্বত্য জেলায় শুরু হল বৈসাবি অনুষ্ঠান

জিয়াউল হক , রাঙামাটি :  পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় শুরু হয় বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে এখন মুখর শহর, নগর আর পাহাড়ি পল্লীগুলো। চারিদিকে আনন্দের সুর লহরী আর বৈসাবি আয়োজন। মঙ্গলবার ছিল চাকমা জনগোষ্ঠীর ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘হাঁড়িবসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে সূচিকাজ। কাপ্তাই হ্রদে মঙ্গলবার পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। সকালে শহরের রাজবাড়ি ঘাটে চাকমাদের ফুল বিজুর উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। আর গর্জনতলী ঘাটে ত্রিপুরাদের হারি বৈসুকের উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। ঠিক ফুলবিজু নামে অভিহিত না হলেও এইদিন প্রায় সকল পাহাড়ি জাতি-গোষ্ঠী পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেয়।

এসময় ঊষাতন তালুকদার বলেন, পুরনো বছরের সব দুঃখ ক্লান্তি মুছে দিয়ে পবিত্র মন নিয়ে নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিলাম। যাতে সামনের দিনগুলোতে সকলে সম্প্রীতিতে বসবাস করতে পারি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পাহাড়ি জনগনের বিজু উৎসবে তেমন একটা আনন্দ নেই। সরকারের কাছে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি বৈসাবি উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানান।

হারি বৈসুক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, সরকার প্রত্যেক জাতি সত্ত্বাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করে নিজস্ব পরিচয় বহনে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। একটি জাতিকে পরিচিত করে তার নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য দিয়ে। সরকার প্রত্যেকটি জাতি গোষ্ঠির ভাষা, কৃষ্টি সংস্কৃতি রক্ষায় যথেষ্ট আন্তরিক।

উৎসব প্রিয় পাহাড়িরা সারা বছর মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে। তবে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবিদায়ের এই উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদা ভাবে পালন করে এই উৎসব। উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে সেই ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে, তাই একে বলা হয় ফুল বিজু।

ঐতিহ্যবাহী পোষাকে তাদের গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে এদিন শুরু হয় বৈসাবি উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ফুলবিজুর দিন সকালে রাঙামাটি শহরের রাজবনবিহারের পূর্ব ঘাটে ফুল বিজু উৎসবে কর্ণফুলী নদীতে ফুল ভাসায় চাকমা তরুণীরা।

উৎসব আয়োজক কমিটি আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, “চিরাচরিত ঐতিহ্য এবং প্রথাগতভাবে আমরা পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করার জন্য ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে দিবসটিকে উদযাপন করি।”

‘ফুল বিজু’র পরপরই তরুণীরা নিজেদের ঘরে ফিরে যায়। মুরুব্বিদের প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। ফুল ভাসানো শেষে বয়স্কদের স্নান করানো হয়। পাড়ার বয়স্কদের শরীরে পানি ঢেলে তাদের আশীর্বাদ কামনা করেন তরুণ-তরুণীরা। দেওয়া হয় নতুন পোষাক। আজ সোমবার বিজু উৎসব পালন করা হবে। এদিন সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে কাটাবে তরুণ তরুণীরা, ঘরে ঘরে নিমন্ত্রণ আর আতিথিয়েতা গ্রহণের সে এক অনাবিল আনন্দ। এদিন ঘরে ঘরে ঐতিহ্যাবাহী খাবার পাঁচন রান্না করা হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.