টেকনাফে সংরক্ষিত বনে চলছে অবৈধ সমিল

জসিম উদ্দিন টিপু, টেকনাফ : টেকনাফে সংরক্ষিত বনের নিকটে গড়ে উঠেছে অনুমোদন বিহীন অবৈধ একাধিক স-মিল। এসব স-মিলে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট চোরাইকৃত বনের গাছ ছিরাই করে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হচ্ছে। হোয়াইক্যংয়ের ৫নং ওয়ার্ডে একই স্থানে পাশাপাশি ৩টি অবৈধ সমিল ও বাহারছড়া শামলাপুর ১নং ওয়ার্ডের উত্তরপাড়ায় ১টি সহ মোট ৪টি অবৈধ স-মিল পরিচালিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এতে করে আস্তে আস্তে সংরক্ষিত বনের গাছ গাছালি উজাড় এবং পরিবেশ রক্ষাকারী বন হুমকির মুখে পড়বে। প্রশাসনিক নজরদারীর অভাবে অবৈধ সমিল পরিচালনাকারীরা দিন দিন আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নামধারী স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগী প্রভাবশালী চক্র অবৈধ এসব সমিল পরিচালনায় জড়িত বলে বনবিভাগের লোকজন জানায়।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে বন সংলগ্ন এলাকায় একটি সুযোগ সন্ধানী চক্রের অপতৎপরতায় অনুমোদন বিহীন ৩টি অবৈধ সমিলে প্রতিনিয়ত বনের কাঠ ছিরাই হওয়ায় বন সম্পদ উজাড় হচ্ছে। ইউনিয়নের পশ্চিম কাঞ্জরপাড়ার মৃত মোহাম্মদ শরীফের পুত্র আবুল কালাম প্রকাশ গাছ কালু, করাচি পাড়ার মৃত আবুল হোছনের পুত্র সোনা আলী ও রইক্ষ্যংয়ের মাওলানা রশিদ আহমদের পুত্র বাদশা মিয়ার মালিকাধীন ৩টি অনুমোদন বিহীন সমিল দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বনের কাঠ ছিরাই হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে। উপকুলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া এলাকায় শামলাপুর উত্তরপাড়া গ্রামে মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র হামিদ আহমদের ১টি অনুমোদনবিহীন অবৈধ সমিলে গাছ চিরাই করছে। উপজেলায় এমনিতে সংঘবদ্ধ কাঠ চোরদের কারণে গাছপালায় ঘেরা পাহাড় সমুহ আজ ন্যাঁড়া হয়ে পড়েছে। সামাজিক বনায়নসহ যা কিছু স্থিতি রয়েছে তাও সমূলে ধ্বংস করার জন্য এই চলমান ৪টি সমিলই যথেষ্ট। এসব সমিল মালিকেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্র-ছায়ায় থেকে এসব অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র এসব অবৈধ কর্মকান্ড থেকে সুবিধা আদায় করায় অবৈধ সমিল মালিক মহল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে একাধিক সুত্র দাবী করছে। বিধি অনুযায়ী এসব সমিল করতে হলে সংরক্ষিত বন হতে ১০কিঃ মিটার দূরত্বে থাকতে হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রভাবশালীরা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বনের কিনারায় বীরদর্পে অবৈধ স-মিল চালিয়ে যাচ্ছে।

বিট কর্মকর্তা মো: খুরশিদ আলম উল্লেখিত স-মিল গুলো অবৈধ স্বীকার করে জানান, করারত কিছুই নেই এগুলি মূলত সামাজিক বাগানের উপকারভোগীদের সুবিধার্থে করা হয়েছিল বলে আমার একটু ওভারলুক করে চলি। এসব স-মিল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি সেখান থেকে কোন ধরণের বেনিফিট নেন না বলে জানান। হোয়াইক্যং রেঞ্জ কর্মকর্তা সুনীল কুমার সাহার সঙ্গে এই ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে অবৈধ সমিল চালু থাকার কথা নিশ্চিত করে বলেন, এসব সমিল উচ্ছেদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সহকারী বনসংরক্ষক কক্সবাজার দক্ষিণ(এসিএফ) মোঃ সরওয়ার আলম লাইসেন্স বিহীন অবৈধ সমিল উচ্ছেদে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন জানিয়ে বলেন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়াতো আর উচ্ছেদ করা যায় না। শীঘ্রই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় অবৈধ সব স-মিল উচ্ছেদ করা হবে। এখানে কাউকে কোন ধরণের ছাড় দেওয়া হবে না। টেকনাফবাসী জরুরী ভিত্তিতে বনসম্পদ রক্ষায় অবৈধ স-মিল উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.