চন্দনাইশের জনপদ আ‘লীগ-বিএনপি-এলডিপি প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখরিত

বিশেষ সংবাদদাতা : চন্দনাইশের সাত ইউনিয়নের ভোটাররা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দিনটি প্রহর গুনছে । ৯ ইউনিয়নের মধ্যে আগামী শনিবার ৭ ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।চন্দনাইশ উপজেলার ৭ ইউনিয়নে আগামী ২৮ মে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি এলাকা। ২৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ২০৮ জন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায়,ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম স্লোগানে মাইক দিয়ে প্রতিটি এলাকায় সরগরম হয়ে উঠেছে । নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের নিরন্তর প্রচারণায় মুখরিত চন্দনাইশের জনপদ। প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে ভোটারদের মাঝে আমেজ কাজ করছে। কর্নেল অলির ঘাঁটি খ্যাত চন্দনাইশে প্রথমবার সাংসদ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ। পূর্ব থেকেই অবস্থান আছে বিএনপির। যার ফলে এবার ইউপি নির্বাচনে তিন দলের প্রার্থীই সমান্তরালে অবস্থান করছে। সুষ্ট নির্বাচন হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চন্দনাইশে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে এবার নির্বাচন হচ্ছে ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে। দোহাজারীকে পৌরসভায় রুপান্তর করা হচ্ছে। এতে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ পৌরসভার মধ্যে অন্তভূক্ত করা হচ্ছে। যার কারণে প্রস্তাবিত পৌরসভার সীমানা নিয়ে দোহাজারী ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যে জঠিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে আপাতত এই দুই ইউনিয়নের হচ্ছে না। বাকি সাত ইউনিয়নে এবার মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৮ জন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলেও এদের মধ্যে কয়েকজন আবার নির্বাচনী মাঠ থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন।
বরকল ইউনিয়নের আ‘লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর হতে রাজনৈতিক ও সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আমার প্রজ্ঞা ও চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে ইউনিয়নের জন্য উন্নয়নমুলক কাজ শুরু করি। যে সমস্ত উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেছি তার সুফল জনগণ ইতিমধ্যে উপভোগ করছে। একজন আদর্শবান ব্যক্তি হিসাবে এলাকার জনগনের পাশে সব সময় ছিলাম, থাকবো।
চন্দনাইশে প্রথমবার সাংসদ পাওয়াতে নিজেদের চেয়ারম্যান করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। নিজেদের সাংসদ পাওয়ার পর থেকে নতুনভাবে বিস্তৃতি ছড়ায় আ‘লীগ। পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড। একক আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে ক্ষমতাশীল দলের নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে বিএনপি ও এলডিপি‘র অবস্থান কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। তবে পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে আবার সরব হয়ে উঠেছিল বিএনপি ও এলডিপি। নিজেদের প্রার্থী দিয়ে আবার মাঠে নামতে শুরু করে এ দুই দল। পৌর নির্বাচনে পরাজয় হলেও ইউনিয়ন পরিষদে তার বদলা নিতে চান তারা। এরই অংশ হিসাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে এলডিপি-বিএনপি। আর নিজেদের ব্যানারে কাজও করে যাচ্ছে তারা। ইউপি নির্বাচনকে অনেকটা বাঁচা মরার লড়াই হিসাবে দেখছেন প্রার্থীরা।
বৈলতলী ইউনিয়নের এলডিপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহাবুবুল আলম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতে এলডিপির জন্য অন্যন্ত ভাল। তবে সরকারি দল নানাভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদান করছে। গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছে। এরমধ্যেও এলডিপির অবস্থান অত্যন্ত ভাল। সুষ্ট ভোট হলে এলডিপির জয় শতভাগ নিশ্চিত।
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, চন্দনাইশের সাত ইউনিয়নের হাটবাজারের চা দোকানে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থকেরা পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে নিজ প্রার্থীর জয়ের কথাই বলছেন। গ্রামে-গঞ্জে প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, আলোচনা সভায় আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন জমে ওঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমর্থকেরা অন্যান্য দলের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে ও প্রচারণা না চালাতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৈলতলী ইউনিয়নের বিএনপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মফিজ উদ্দীন বলেন, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ভাল অবস্থানে আছে। ধানের শীষের প্রতি সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। ভোট হবে না বলে এলাকায় প্রচারণা চলাচ্ছে। এতে ভোটাররা ভীত হয়ে পড়ছে।
বৈলতলী : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আনোয়ারুল মোস্তফা চৌধুরী দুলাল, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মফিজ উদ্দীন, এলডিপির ছাতা প্রতীকে মাহাবুবুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আনোয়ারুল মোস্তফা চৌধুরী দুলাল বলেন, এলাকায় আমার ব্যক্তিগত ইমেজ আছে। দলীয়ভাবেও আ‘লীগের অবস্থান ভাল। যার কারণে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদি। নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।
বরকল : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে আমিনুল ইসলাম, এলডিপির ছাতা প্রতীকে মোতাহের মিয়া, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে মো. সোনা মিয়া, স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) আনারস প্রতীকে শওকত হোসেন ফিরোজ, চশমা প্রতীক নিয়ে মো. নাছির উদ্দীন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কাঞ্চনাবাদ : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মো. মুজিবুর রহমান, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে সাইফুল করিম, স্বতন্ত্র (আ‘লীগ বিদ্রোহী) বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল শুক্কুর কোম্পানি, এলডিপির ছাতা প্রতীকে আনোয়ার হাসান, স্বতন্ত্র অটেরিকশা প্রতীকে ওয়াহেদ আহমদ চৌধুরী, টেবিল ফ্যান প্রতীকে জামাল উদ্দীন, আনারস প্রতীকে আবদুল শুক্কুর কোম্পানি, ঘোড়া প্রতীকে মোহাম্মদ আলী, মোটর সাইকেল প্রতীকে মো. মফিজুল আলম চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়া বাকিদের কোন প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না।
জোয়ারা : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমিন আহমেদ চৌধুরী রোকন। অন্য কোন প্রার্থী না থাকায় ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
বরমা : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুল ইসলাম, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মোজাম্মেল হক, এলডিপির ছাতা প্রতীক নিয়ে সিরাজ আহমদ, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী আনারস প্রতীক নিয়ে জাবেদ মোহাম্মদ গউছ মিল্টন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
হাশিমপুর : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মো. আবদুল মজিদ শাহ, স্বতন্ত্র আনারস প্রতীক নিয়ে আব্বাস উদ্দীন, এলডিপি ছাতা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ধোপাছড়ি : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মো. মোরশেদুল আলম, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জেএইচ সেলিম ও এলডিপির ছাতা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান আবু ইউসুপ চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.