রোয়ানুর তান্ডবের মানুষের মানবেতর জীবন

কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা, বাঁশখালী : বাঁশখালীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর হামলায় বাঁশখালীর উপকূলীয় ৮টি ইউনিয়নসহ ৩টি ইউনিয়নের অবস্থা করুণ আকার ধারণ করেছে। একদিকে বসত বাড়ী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন, ত্রাণের স্বল্পতা, অপরদিকে জোয়ার ভাটার কারণে দাড়িয়ে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জনগণের। বিশেষ করে খানখানাবাদ, ছনুয়া ও গন্ডামারা এলাকার উপকূলীয় জনগণ নানা ভাবে সমস্যার মাঝে দিনাতিপাত করছে জনগণ।

মানবিক বিপর্যয়ে সবচেয়ে করুণ অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে খানখানাবাদ ইউনিয়নের কালাগাজী পাড়া, রোসাংগ্রী পাড়া, কদমরসুলসহ খানখানাবাদের অধিকাংশ এলাকার লোকজন এখনও জোয়ার ভাটার পানিতে ভাসছে। অপরদিকে ছনুয়ার এলাকার ছনুয়ার টেক, ছেলবন, চেমটখালী, খুদুকখালী ও হাবাখালী এলাকা সহ ছনুয়ার এলাকার বেশ কিছু এলাকায় জনগণ সীমাহীন ভোগান্তির মাঝে দিন পাড় করছেন। এছাড়াও গন্ডামারা এলাকারও উপকূলীয় এলাকা তোতকখালী পশ্চিম গন্ডামারা এবং বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার জনগণ জোয়ার ভাটার পানিতে দিন যাপন করছে।

সরকারী ভাবে বাঁশখালীর ভয়াবহ তান্ডবের শিকার এলাকার জন্য ২ লক্ষ টাকা এবং ৫০ মে: টন চাউল প্রদান করা হলেও তার মধ্য থেকে খানখানাবাদ ইউনিয়নে ১৬ মে: টন, ছনুয়া ইউনিয়নে ১৪ মে: টন, গন্ডামারা ইউনিয়নে ১০ মে: টন, সাধনপুর ইউনিয়নে ৩ মে: টন, সরল ইউনিয়নে ১ মে: টন, পুকুরিয়া ইউনিয়নে ১ মে:টন, বাহারছড়া ইউনিয়নে ১ মে: টন, কাথরিয়া ইউনিয়নে ১ মে: টন, শীলকূপ ইউনিয়নে ১ মে: টন, শেখেরখীল ইউনিয়নে ১ মে: টন, পুঁইছড়ি ইউনিয়নে ১ মে: টন চাউল প্রদান করা হলেও তার মধ্যে কিছু চাউল এখনো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে পৌছানো সম্ভব হয়নি। একদিকে রাস্তার করুণ অবস্থা।

অপরদিকে নানা কারণে এখনো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের চাউল পৌছানো সম্ভব না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন মানবিক জীবন যাপন করছে বলে সরজমিনে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের কাছ থেকে জানা যায়। বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার ভাটার পানি ঢুকার কারণে বেশ কিছু লোকজন এখনো পর্যন্ত রান্না করে খাওয়ার মত কোন পরিবেশ না পাওয়ায় শুকনো খাবারের উপরেই নির্ভর করে তাদের দিন যাপন করতে হচ্ছে। বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু বলেন, আমার এলাকার কয়েক সহস্রাধিক লোক এখনো পর্যন্ত গৃহ হারা হয়ে মানবিক জীবন করছে। সরকারী ভাবে যে অনুদান প্রদান করা হয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্থদের পৌছানো হলেও এলাকার বেশ কিছু লোকজন এখনো পর্যন্ত মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী বলেন সরকারী ত্রাণ সহযোগিতা পাওয়া গেলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনদের মাঝে যথাযথ ভাবে সহযোগিতা পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে জোয়ার ভাটার কারণে লোকজন তাদের সব কিছু হারিয়ে অত্যান্ত করুণ অবস্থায় দিন যাপন করছে।

গন্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আরিফ উল্লাহ বলেন, আমার এলাকার উপকূলীয় লোকজন জোয়ার ভাটার পানি এবং বাড়িঘর ভেঙে করুণ অবস্থায় দিন যাপন করছে। এদিকে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা গুলোতে একদিকে নানা ধরনের মরা মাছ ও গরু হাঁস মুরগীর মরা যাওয়ার দুর্গন্ধ, অপরদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট, সব মিলিয়ে জনগণের করুণ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। তার উপর খোলা আকাশে বসবাসকারী জনগণের জন্য অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে গতকাল সন্ধ্যা বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতেও খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী জনগণকে আরো বেশী দুঃখ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাঁশখালীর উপকূলীয় জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য বিত্তবান সহ সকল শ্রেনির মানুষের সার্বিক সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ।

তার সাথে সুষ্ঠ বন্টনের প্রশাতসন সহ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সচেতন জনগণ। বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ জনগণকে আরো বেশী সরকারী সাহায্য প্রদান সহ গৃহ নির্মাণ সামগ্রী প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.