এমপি পেটালেন নির্বাচন কর্মকর্তাকে

সিটিনিউজবিডি :  বাঁশখালীতে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলা নিবার্চন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে উপজেলা ছাড়তে বাধ্য করেছেন । তবে জাহিদুল ইসলামের উপর চড়াও হবার কথা স্বীকার করলেও মারধরের কথা নাকচ করেছেন সংসদ সদস্য। বরং জাহিদুল ইসলাম তাকে অপমান ও অপপ্রচার করেছেন বলে দাবি করেছেন।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বুধবার (১ জুন) বেলা ১২টার দিকে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। প্রাণভয়ে বাঁশখালী ছেড়ে বর্তমানে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আশ্রয় নিয়েছেন মারধরের শিকার জাহিদুল ইসলাম ।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাতেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপির কথামত তার অনুসারীদের ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগ না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার অনুসারীরা। ইতোমধ্যে ঢাকায় ‍নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।৪ জুন বাঁশখালীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাহিদুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসার হিসেবে বাঁশখালী উপজলার বাহারছড়া ইউনিয়নের দায়িত্বে আছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সংসদ সদস্যের পিএস তাজুল ইসলাম তাকে একটি তালিকা দিয়েছিলেন। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য এমপি নির্দেশ দিয়েছেন বলে তাজুল তাকে জানিয়েছিলেন।

ওই তালিকা অনুযায়ী আমি প্রিজাইডিং ও পোলিং ‍অফিসার নিয়োগ না দেয়ায় তারা আমার উপর অসন্তুষ্ট হন। আজ (বুধবার ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমি বাহারছড়া ইউনিয়নে ছিলাম। এমপি সাহেব আমাকে ইউএনওর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। আমি সেখানে গেলে তিনি শুরুতেই উত্তেজিতভাবে আমাকে বলেন, (ছাপার অযোগ্য) আমি যাদের দায়িত্ব দিতে বলেছিলাম, তাদের তালিকায় রাখিসনি কেন ? আমি বললাম, স্যার, আমি নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কাজ করেছি। এসময় তিনি বলেন, অ্যাই তোরা কোথায় ?(ছাপার অযোগ্য) মারতে হবে।

তখন এমপি নিজেই আমাকে (ছাপার অযোগ্য), মা-বাবা ধরে গালি দিয়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন। আমি বলি, স্যার আপনি আমার গায়ে হাত দিতে পারেন না। তখন তার সন্ত্রাসীরা এসে আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি দিতে শুরু করে। এসময় সেখানে বাঁশখালী থানার একজন এস আই ছিলেন। তিনি কোন বাধা দেননি। আমি স্যারকে (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা) ফোন করার জন্য পকেট থেকে মোবাইল বের করলে পুলিশ কর্মকর্তা সেটি আমার কাছ থেকে কেড়ে নেন।

পরে এমপি সাহেব আমাকে বাঁশখালী ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত শহরে চলে এসেছি। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন জাহিদুল ইসলাম।

এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আপনি একটু আমার কথা মন দিয়ে শুনেন। কথা হচ্ছে, আমার ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে সে মো.ফরহাদ উদ্দিন নামে একজনকে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ফরহাদকে সে উল্লেখ করেছে কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছেন এই নামে তার স্কুলে কোন শিক্ষক নেই। শুধু ফরহাদ নয়, বাঁশখালীর সাধনপুর, কালীপুর, জলদি ইউনিয়নের স্কুল থেকে সে কাউকে প্রিজাইডিং কিংবা পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া থেকে জামায়াত-শিবিরের সমর্থকদের এনে সে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব দিয়েছে।

আমি যখন তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি সে আমাকে বলল, কাকে দায়িত্ব দেব সেটা কি আপনাকে জিজ্ঞেস করে দিতে হবে ? এসময় আমি উত্তেজিতভাবে তাকে দু’চারটা কথা বলি। এখন সে এই ঘটনাকে রং লাগিয়ে প্রচার করছে, আমি তাকে পিটিয়েছি। অথচ কেউ তার গায়ে হাত তুলেনি বলেন সংসদ সদস্য।

সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মারধরের কথা নাকচ করলেও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের মুখে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে মারধরের চিহ্ন দেখা গেছে।

জাহিদুল ইসলাম জানান, আমি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। এখন কমিশন যেভাবে নির্দেশ দেয় আমি সেভাবেই কাজ করব।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.