এ মৃত্যু উপত্যাকা আমার দেশ না !

জুবায়ের সিদ্দিকী / গোলাম শরীফ টিটু / গোলাম সরওয়ার : আমরা সবাই ভাল কিছু প্রত্যাশা করি সবসময় কর্মক্ষেত্রে। এই ভাল কখনও সবার কাছে পছন্দ হয় না। পুলিশকে নিয়ে আছে অনেক সমালোচনা। তথাপিও পুলিশে অনেক সাহসী, সৎ, নির্ভীক লোক আছেন। তাদের মধ্যে বাবুল আক্তার একজন। নিজের টাকায় তিনি মানুষকে সাহায্য-হায়তা করেছেন। রাজধানী ঢাকায় যখন তিনি দায়িত্ব পালন করছেন তখন এই প্রিয় মানুষটিকে স্থবির করে দিয়েছে। তাঁর প্রিয় সহধর্মীনিকে ঘাতকরা কাপুরুষুচিতভাবে হত্যা করেছে। তারুন্যদীপ্ত সাহসী এই পুলিশ কর্মকর্তার চোখে এখন অশ্র“ধারা। নির্ভিক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের তিলে তিলে সাজানো সংসার ভেঙ্গে গেছে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখনো কি বলবেন যে, ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়? রাষ্ট্রকে যে ব্যক্তি নিরাপত্তা দিতে অবিরাম জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁর পরিবারকে কেন সরকার নিরাপত্তা দিতে পারেনি? এই ব্যর্থতা কার? যে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাজের মানুষ, দেশ ও সরকারকে নিরাপত্তা দেন, তার পরিবার অরক্ষিত ছিল কেন? হাজার হাজার পরিবারকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে নিজের পরিবারকেই যে কখন অরক্ষিত করে ফেলেছেন সেটা হয়তো ভাবার সময় ছিল না সাহসী এই কর্মকর্তার।

যে পুলিশ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম কক্সবাজার সর্বত্র মানুষকে রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখেছেন, যে চট্টগ্রামের মাটিতে বাবুল আক্তারের বদলীর বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছিল, সেই মাটিতেই পড়ল তাঁর প্রিয়জনের লাশ! আমরা শঙ্কিত চট্টগ্রামবাসী লজ্বিত বাংলাদেশ। মাহমুদা খানমের লাশ আমাদের জানিয়ে গেল আমাদের মা, বোন, সন্তান কেউ এখন নিরাপদ নয়। বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের কাছে অনেক প্রিয়ভাজন। বাবুল আক্তারের কান্নায় কেঁদেছে গোটা পুলিশ বিভাগ, কাঁদছে চট্টগ্রামের শান্তিপ্রিয় মানুষ। এই দেশ পাকিস্তান নয়, নয় আফগানিস্তান কিংবা ফিলিস্তিন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত সোনার দেশে কোন জঙ্গিদের ঠাঁই নেই। মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পর এসে আমরা বিচার করেছি ঘাতকদের। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে। কোনঠাঁসা হয়ে পড়েছে স্বাধীনতা বিরোধী প্রেতাত্বারা। জঙ্গিবাদের মুলোৎপাটন করে আবদুর রহমান বাংলা ভাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে আদালত। জেলের ঘাঁনি টানছেন মুফতি হান্নান সহ বিপদগামী অনেক জঙ্গি। প্রশাসনের অভিযানের মুখে চট্টগ্রামে তারা মাথা তুলতে পারেনি। হঠাৎ করে রাজপথে প্রকাশ্যে দিবালোকে এক গৃহবধুর উপর ধারালো অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লো কয়জন দুর্বৃত্ত। ঘনবসতিপুর্ন আসপাশের কোন লোক প্রতিরোধে এগিয়ে আসলো না।

আমরা কি প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছি, বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে শরীর, পাষান হয়ে গেছে মন। এ রকম নির্লজ্জ হামলা হতে পারে, আপনার আমার যে কোন পরিবার পরিজনের উপর। আমরা কি তবে, ব্যর্থতায় মুখ লুকাবো। কাপুরুষের মত বসে থাকবো ঘরে। হাসপাতালে অপরাধের বিরুদ্ধে দুর্বার গতিতে ছুটে চলা বীর সেনা বাবুল আক্তার তাঁর দুজন সহকর্মীর কাঁধে ভর দিয়ে শোকে মুহ্যমান। আমাদের জানা নেই, কিভাবে তিনি শোক কাটিয়ে উঠবেন? আল্লাহ যেন তাঁকে এ শোক সইবার শক্তি দেন। এ শুন্যতা পুরন হবার নয়। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সহ সারাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ বাবুল আক্তারের সঙ্গে আছে। সবার একটাই চাওয়া তিনি আবার সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে আবার গর্জে উঠবেন। নিজের সহধর্মীনিকে হারানোর প্রতিশোধের স্পিহায়, লক্ষ পরিবারের নিরাপত্তায়। আপনাকে উঠে দাঁড়াতেই হবে। এটা আমাদের প্রত্যাশা। জীবনের সুখ শান্তি দুরে রেখে যে মানুষটি চট্টগ্রাম শহরের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতেন। জঙ্গি নির্মুলে রেখেছেন সাহসী ভুমিকা, অসামান্য অবদান। হয়েছেন প্রশংসিত, পেয়েছেন পুরস্কার। সে মানুষের সোনার সংসারে তছনছ হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি ঘটেছে চট্টগ্রামে। প্রকাশ্যে রাস্তায় খুন হয়ে পড়ে থাকছে মানুষ। পুলিশের কিছু সদস্যের কর্তব্যে অবহেলও দায়িত্বহীনতায় একে একে ঘটছে হত্যাকান্ড। এখন পর্যন্ত কোন হত্যাকান্ডের কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

যেখানে খোদ পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন, সেখানে সাধারন মানুষের নিরাপত্তা কোথায়। প্রগতিশীল কবি শামসুর রহমানের বিখ্যাত কবিতা দিয়ে বলতে চাই,’ ফিরিয়ে দাও ঘাতককাঁটা!

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.