পার্বত্যাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে

শ্যামল রুদ্র , খাগড়াছড়ি  :  খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা আশানুরুপ পর্যায়ে অগ্রসর হতে পারে নি। পাহাড়ি প্রত্যন্ত এলাকায় মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব এবং শিক্ষা বিস্তারে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্ধের সীমাবদ্ধতায় প্রাথমিক শিক্ষা কাঙ্খিত মানে পৌঁছুতে পারছে না। যে কারণে সামগ্রিক উন্নতির প্রশ্নে এই অনগ্রসর পার্বত্যাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষায় যথেষ্ঠ পিছিয়ে পড়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ও শিক্ষক,অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের খবর পাওয়া গেছে।

বিশিস্ট শিক্ষানুরাগী অধ্যক্ষ মো. ফারুকুর রহমান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে মেধাবীদের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণের স্বল্পতাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও শিক্ষকদের দায়িত্ব বোধের অভাব ইত্যাদি কারণে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম জানান, গত বছর থেকে প্রাক-প্রাথমিক নামে শিশুদের জন্য একটি শাখা খোলা হয়েছে কিন্তু নতুন শিক্ষক দেওয়া যায়নি। রামগড় উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৯। প্রত্যেকটিতে ৪টি করে শিক্ষকের পদ। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় ২জনের বেশি শিক্ষক নেই। এতে ওই সব এলাকায় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। সদরের স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকার পরও রাজনৈতিক তদবিরে এখানে এসে সবাই ভীড় করে। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি অনেকটাই খোলামেলা। এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনলে ভালো শিক্ষক পাওয়া যাবে।

রামগড় মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন জানান,বিদ্যালয় গুলোতে চক,ডাস্টার,ব্ল্যাকবোর্ডসহ নানা শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে। শিক্ষকেরা যে বেতন পান বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সংসার চলে না। রয়েছে শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষা অফিসের হয়রানি মূলক আচরণ। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে (পিটিআই ট্রেনিং) পাঠাতে নিয়ম মানা হয় না। শিক্ষা কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন না। আর এ সবকিছুই মানসম্মত শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অন্যদিকে রামগড় উপজেলার একাধিক প্রাথমিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর বাইরেও বেশ কিছু সমস্যা বিদ্যমান। সদরের কয়েকটি ছাড়া যাতায়ত সমস্যায় প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষকেরা সঠিক সময়ে যেতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকেরা সমস্যায় পড়ছেন সবচেয়ে বেশি। পাহাড় ধসের ঝুঁকিসহ জীর্ণশীর্ণ বিদ্যালয় ঘর আছে কয়েকটি। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, প্রযোজনীয় আসবাব সামগ্রী ও শিশুদের উপযোগী খেলার মাঠ। সোমা চন্দ্র কারবারী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় টি পাহাড় ধসের সর্বোচ্চ ঝুঁিকতে আছে। এ বিষয়ে ৫/৬ বছর ধরে শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট দফতরে বহু লেখালেখি হয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্ধের অভাবে ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় নি। যে কোনো সময় পাহাড় চাপায় বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এটি। এখানে অত্যন্থ বিপজ্জনক পরিবেশে শ্রেণী কার্যক্রম চলছে। পাতাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। দাতারাম পাড়া,বেল ছড়ি ও পাক্লা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘর নড়বড়ে । হালকা বাতাসেই ভেঙ্গে পড়তে পারে। তিনি জানান, উপজেলার সবকটি বিদ্যালয়েই রয়েছে শ্রেণী কক্ষের অভাব । প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে বিদ্যালয় স¤প্রসারণ ও মেরামত করা যাচ্ছে না। এ রকম নানা সমস্যায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে রামগড় উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার মান অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব কঠিন।
এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী অমর মজুমদার ও মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান,পাহাড়ি অঞ্চলে ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় বাইরের ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে উপযুক্ত শিক্ষা লাভে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার গরিব ছাত্রছাত্রীরা। এটাই যেন এদের ভবিতব্য!

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.