চট্টগ্রামে পুলিশের কানার হাটবাজার !

জুবায়ের সিদ্দিকী – 

চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোমরবেধে নেমেছে। দেশে ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া গুপ্তহত্যা বন্ধে যেভাবেই হোক পুলিশ এবার কঠোর অবস্থানে। তাদের এই অপারেশন হার্ডলাইনে যাচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যাকান্ডের পর বিভিন্ন গনমাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে মানুষ যার যার প্লাটফরম থেকে যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে তাতে জনগনের প্রত্যাশা দেশের বিদ্যমান নাজুক অবস্থায় অপারেশন ক্লিনহার্ট’এর মত যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান প্রয়োজন। অপরাধীদের প্রতি সরকার এ সময় কঠোর না হলে দেশে জঙ্গিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধ দায় হয়ে পড়বে।

সঙ্গতকারনে এই দায় সরকারকে বহন করতে হবে। সুতরাং এই সময়ে পুলিশ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যথার্য বলে আমাদের ধারনা। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্বদাতা পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যাকান্ডের পর এখন পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। গত কয়েক বছরে যেভাবে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট, ইসলামী চিন্তাবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব , পীর, পুরোহিত, ভান্তে, যাজক ও বিদেশীদের হত্যা করা হয়েছিল সেভাবেই গত ৫ই মে একই কায়দায় কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় এসপি পত্নী মাহমুদা খানম মিতুকে। এই হত্যাকান্ডে জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও পুলিশ এই রিরোর্ট লেখা পর্যন্ত এক সপ্তাহ পার হলেও খুনিদের সনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি। এর মধ্যে পুলিশ কয়েকদফা বৈঠক করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। পুলিশ প্রধান চট্টগ্রাম এসে বলেছেন, সব সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আমরা পুলিশের এই সিদ্ধান্ত ও অভিযানকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে অভিযানের নামে যেন কোন নিরহ মানুষ হয়রানীর সম্মুখিন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সতর্কতার সাথে। আমরা সাধারন মানুষ মনে করি, মিতু হত্যাকান্ড পুলিশের ভাবমুর্তির প্রশ্ন জড়িত। নিজেদের সহকর্মীর স্ত্রীর প্রকৃত খুনিদের ধরতে গিয়ে নয়ছয় হিসাব বা পানি ঘোলা করলে অথবা একজন জজমিয়া আবিস্কার করলে জনগন শুধু হতাশই নয়, পুলিশের প্রতি মানুষের ধারনা খারাপ হবে। অবশ্যই পুলিশকে প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের স্মরন রাখতে হবে যে, পুলিশ কর্মকর্তারা বারবার জীবনকে বাজি রেখে দেশের জন্য কাজ করেছেন, জঙ্গীদমনে সাহসীকতার পরিচয় দিয়ে তাকে পুরস্কার হিসেবে লাশ উপহার দিয়েছে দেশ।

না, এটা হতে পারে না। সরকার বা রাষ্ট্র এভাবে নিশ্চুপ থাকতে পারে না। যেভাবেই হোক এসব ঘাতকদের পুলিশকে আটক করতেই হবে। যে এসপির স্ত্রী মিমি সুপারে মার্কেটিং করার কথা, যে মহিলা মহিলা বাজার করতেন জহুর হকার মার্কেটে। এ দেশে একজন দাগোরা যেখানে প্লট-ফ্ল্যাট গাড়ির মালিক, সেখানে এই সৎ কর্মকর্তার কোন ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল না, যার কারনে তার শিশুপুত্র স্কুল বাসেই স্কুলে যেত। একজন সৎ ও নির্ভীক পুলিশ কর্মকর্তা দেশের জন্য এতকিছু করলেও তার পরিবারকে কেন রাষ্ট্র ও সরকার কোন প্রটেকশন দেয়নি? একজন এসপির পরিবারকে কেন যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হল না। এই অমানবিক হত্যাকান্ড এভাবে মেনে নেওয়া যায়না। আমরা এই হত্যাকান্ডের ঘাতকদের আইনের আওতায় দেখতে চাই। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারকে আমাদের সান্তনা দেওয়ার মত কোন ভাষা নেই। কি বলে আমলা সান্তনা দেব বাবুল আক্তারকে। যার এত ত্যাগ, এত অবদান, তার কেন এই বিপর্যয়। এক সপ্তাহ গত হলেও প্রকৃত আসামী ধরা পড়ছেনা। চট্টগ্রামের সিএমপিতে এখন কোন চৌকষ কর্মকর্তা নেই। পুলিশের এই ব্যর্থতা আমাদের হতাশা করছে বারবার। গ্রেফতার বানিজ্য, ইয়াবা বানিজ্য, হোটেল বানিজ্য সহ সকল বানিজ্যের সাথে পুলিশ জড়িত কোননা কোন ভাবে। শুধু ধান্ধাবাজিতে ব্যস্ত পুলিশ। অপরাধ দমনে পুলিশের কোন অগ্রগতি নেই।

বিএনপিতে যে সব চৌকষ কর্মকর্তা ছিলেন তাদের অনেকেই এখন বদলী হয়ে গেছেন। তাছাড়া জঙ্গীদমন ও চোরাচালানী দমনে পুলিশের আন্তরিকতা আছে বলে আমাদের মনে হয় না। একজন বাবুল আক্তার ছাড়া আর কোন কর্মকর্তা এভাবে অভিযান পরিচালনায় কৃতিত্ব রাখতে পারেনি অতীতে। তবে ৯০ দশকের দিকে ডিবিতে জুটি ছিলেন মহিউদ্দিন মাহমুদ ও মহিউদ্দিন সেলিম। তাদের হাতে শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার নাছির সহ অনেক সামাজিক অপরাধি আটক হয়েছিল। এ ছাড়া পুলিশ কমিশনার ওসমান আলী খাঁন, শহীদুল্লাহ খান থাকতেও অনেক দুর্ধর্ষ ক্রিমিনালকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে সিএমপিতে তেমন কোন জাদরেল কর্মকর্তা না থাকায় জঙ্গীদমনে বাবুল আক্তার জাতীসংঘ মিশনে যাওয়ার পর থেকে ঝিমিয়ে পড়ে। ক্যাশিয়ার নির্ভর কর্মকর্তাদের টাকা ও সম্পদ বানানোর প্রতিযোগিতা পুলিশের থানা ও গোয়েন্দা বিভাগের কোন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়না।

এই মহানগরীরে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পুলিশ কোন হত্যাকান্ডের কুল কিনারা করতে পারেনি। আমি মনে করি, স্বার্থের মোহে অন্তরে সিলমোহর মেরে আমাদের অন্ধ করে রেখেছে। এ কারনে ভাল মন্দ কিছুই ঠাওর করতে পারিনা। অনেকটা আন্দাজে সায় ও রায় দিয়ে যাই। রিংকুর গানে বার বার শোনা যায়, দুনিয়াটা কানার হাটবাজার’। চোখ কান খোলা থাকলে কি আমাদের পক্ষে এতটা অমানবিক ও পাশবিক হওয়া সম্ভব হতো? লাশের উপর দিয়ে বুক ফুলিয়ে হেঁটে যেতে পারে কি কোন সভ্য মানুষ? চারদিকে মানবিক বিপর্যয়ের মিছিল ও স্লোগান সত্ত্বেও আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। সময়ে আপন মানুষ বদলায়। জীবনের শেষটাই যাকে আপন হিসেবে পাই, সে হলো জীবন সঙ্গিনী। যাকে বলা হয় অর্ধাঙ্গীনি। সেই জীবনসঙ্গীনিকে বাবুল আক্তার আবিস্কার করেছেন রাজপথে নিথর পড়ে থাকা লাশ হিসাবে? রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার কি এই নির্ভিক পুলিশ কর্মকর্তার যে অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে তা পুরন করতে পারবে? আজ স্পষ্ট ও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার কোন অবকাশ নেই যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও ভাল নয়।

যে শহরে একজন পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় লাশ হয়, সে শহরের সাধারন মানুষের অবস্থা কি হতে পারে। আমরা একজন জজমিয়ার নাটক দেখতে চাইনা। প্রকৃত খুনিকে আটক দেখতে চায় জনগন। মিতু হত্যাকান্ডের কোন ক্লু এখনো উদঘাটনে পুলিশের ব্যর্থতাকে জনগনের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেগ সৃষ্টি করেছে। অনুমান, ধারনা ও সন্দেহেরে বশে একজনকে আটকের চমক কোনভাবে জনগনকে আশ্বস্থ করতে পারছে না। আমরা সরকারকে বলবো, অপারেশন ক্লিন হার্টের মত যৌথ বাহিনীর অপারেশন করা হোক। অন্যদিকে মিতু হত্যাকান্ডের প্রকৃত খুনিচক্রকে অবিলম্বে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবী সর্বস্থরের মানুষের। মানুষ এ নগরীতে এভাবে হোন গৃহবধুর লাশ দেখতে চায় না।

আমরা সাধারন মানুষ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও হার্ডলাইনে যাবার অনুরোধ করছি। পুলিশের এই কানার হাটবাজারে কি প্রকৃত খুনিরা পার পেয়ে যাবে? এদের আটকে সাঁড়াশি অভিযান আরও জোরদার ও প্রকৃত খুনিদের হাতে হাতকড়া দেখতে চায় জনগন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশের অবৈধ অর্থের পেছনে ছুঁটা কর্তাদের আল্লাহর ওয়াস্তে মিতু খুনিদের অবিলম্বে আটকের উদ্যোগ জোরদার করার আহবান জানাচ্ছি।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.