চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের জমজমাট বানিজ্য

জুবায়ের সিদ্দিকী / গোলাম শরীফ টিটু :  চট্টগ্রাম অবৈধ অস্ত্র পাচারের একমাত্র রুটে পরিনত হয়েছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অস্ত্রের মজুদ গড়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। মহানগরীতে নানাভাবে কৌশলে ও গোপনে হস্তান্তর হচ্ছে এসব অস্ত্র। বাস, ট্রেন, প্রাইভেট কার, মাইক্রো সহ নানা ধরনের যানবাহনে করে এসব অস্ত্র গন্তব্যে পৌছানো হচ্ছে। গত ৭ মাসে পাচারকালে ২০টি অস্ত্র উদ্ধার এবং ৭ ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এসব অস্ত্রের চালান ও গুলি চট্টগ্রামে মজুদ করছে । আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ বিভিন্ন জনকে গ্রেফতার করলেও মুল হোতাদের কোন হদিস নেই দীর্ঘদিন ধরে। নামীদামী অস্ত্রের প্রধান উৎস হচ্ছে চোরাচালান। চট্টগ্রাম বন্দর ও তার আশপাশের বিভিন্ন ঘাটে জলপথে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে আসা অস্ত্রের চালান খালাস হয়ে থাকে। মিথ্যা ঘোষনা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বিভিন্ন দেশের অস্ত্র আনা হয়। মাঝেমধ্যে বন্দর দিয়ে আনা অস্ত্রের চালান ধরা পড়লেও বেশিরভাগই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে ঢুকছে চট্টগ্রামে।

বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা দুই লাখের বেশি। অবৈধ অসেন্ত্রর আদান প্রদানে দেশে রয়েছে ৮০টি গ্রুপ। চট্টগ্রামে ৪০টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। বেশিরভাগ অস্ত্র ব্যবসায়ীর তৎপরতা রয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রামে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে অবৈধ অস্ত্র। এরপর এসব অস্ত্র নৌ ও সড়ক পথে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছে জমা পৌছে যাচ্ছে। টেকনাফের নাইক্ষ্যংড়ি সীমান্ত দিয়েও বেশিরভাগ অস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে।

নৌপথে আনেয়ারা-কর্নফুলী উপকুলে খালাস করা হয় এসব অস্ত্র। নগরীর পতেঙ্গা এলাকায়ও অস্ত্রের চালান খালাস করা হয়। সবকিছু চলে পুলিশকে ম্যানেজ করে। চট্টগ্রামে যেসব অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা হচ্ছে তা ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এবং দুর্গম এলাকায় গড়ে উঠা কারখানায় তৈরী। এর মধ্যে রয়েছে পিস্তল, রাইফেল, ষ্টেনগান, মেশিনগান, সাব মেশিনগান ও এম-১৬ রাইফেল। কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্টে এসব অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করছে। সিএমপি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, অন্ত্র বেচাকেনার উপর আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশের তথ্য মতে চট্টগ্রামে বর্তমানে বেচাকেনা হচ্ছে একে-৪৭, একে-৫৬, এম-১৬, এসএমজি, এমএমজি সহ বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র। একে ৪৭ এর দাম ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, আমেরিকান অটোমেটিক পিস্তল দেড় থেকে ২ লাখ টাকা ও ২২ বোর পিস্তল ৪৫ হাজার টাকা। তবে এখন সন্ত্রাসীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্ত্র ব্যবহার করছে। অবৈধ পথে রিভলবার ও পিস্তল আসছে বেশি। চট্টগ্রামের আন্ডারওয়াল্ডের মধ্যে ভারী ও দামী অস্ত্র বেশি ব্যবহার হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিমন্ডলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার হচ্ছে এসব ভারী অস্ত্র। রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের হাতে হাতে অস্ত্র সরকারী দল থেকে বিরোধী দল সবার হাতে যাচ্ছে অনায়াসে।

রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় এসব অস্ত্র ব্যবহারে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে অহরহ। মানুষ খুন হচ্ছে, অথচ অপরাধীরা আটক হচ্ছে না। চট্টগ্রামে রেলপথে, নৌপথে ও সড়কপথে অবাধে আনছে অবৈধ অস্ত্র। বৃহত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে আনোয়ারাতেই সব চেয়ে বেশি অস্ত্র খালাস হচ্ছে। বড় বড় রাঘববোয়ালদের পৃষ্টপোষকতায় এই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা বেশ জমজমাট হলেও পুলিশী অভিযান নেই। সিএমপি পুলিশ বলছে, ৭ মাসে ২০টি অস্ত্র ধরা পড়েছে। আটক হয়েছে ৭ অস্ত্র ব্যবসায়ী।

এদিকে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা জেলা পুলিশের। আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া সহ বিভিন্ন থানাগুলোতে পুলিশের নিস্ক্রিয়তার কারনে, কোথাও আবার কথিত পুলিশের সহযোগিতার কারনে অবৈধ অস্ত্রের বানিজ্য বন্ধ হচ্ছে না।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.