পাবনায় জমজমাট ভেজাল ঘি ও ছানার ব্যবসা

অর্থ ও বাণিজ্য : পাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসা। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা ও গোপালনগর এলাকায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল ছানা ও ঘি। স্থানীয় কয়েকজন অসাধু দুধ ব্যবসায়ী তাদের বাড়িতে ও অন্যত্রে কারখানা গড়ে দেদারছে এ ভেজাল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এ দুই পল্লী থেকে ভেজাল ও খাঁটি মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার কেজি ঘি এবং ৮ হাজার কেজি ছানা ওইসব এলাকায় যাচ্ছে।

আর এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতাদের পেছনে ‘ঘি ঢেলে’ (অর্থের বিনিময়) বেশ হেলেদুলে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাসিব খাঁন তরুণ জানান, পাবনা জেলায় প্রায় দেড় লাখ লিটারের বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার লিটার দুধ মিল্কভিটা, আফতাব, আকিজ, প্রাণ, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুধ কিনে প্রক্রিয়াজাত করে রাজধানীতে পাঠাতে বেশ কটি চিলিং সেন্টার স্থাপন করেছে। আর ঘোষরা সাধারণত প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার লিটার দুধ কিনে থাকে। বাদবাকি দুধ খুচরা বাজারে বেচাকেনা হয়।

পাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাপাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাঅনুসন্ধানে জানা গেছে, সাঁথিয়া ও ফরিদপুর উপজেলার রবি ঘোষ, পরি ঘোষ, কালা ঘোষ, কুদ্দুস, নাজমুল, মানিক, সুমন, বৈদ্য নাথ, বাবু রাম, সুমন তালুকদার, সোহেলের মতো অনেক ঘোষ ভেজাল পাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাদুধ, ছানা ও ঘি তৈরির সঙ্গে জড়িত।

গত ২ বছরে ভেজাল ঘি ও ছানা তৈরির অপরাধে তাদেরসহ অর্ধশতাধিক ভেজালকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বা অর্থদণ্ডে দণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঘি তৈরির গাদ থেকে আবার ঘি তৈরি, নকল দুধ তৈরিসহ বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছানা তৈরি করায় গত বছর বেশ কটি কারখানা ফরিদপুর উপজেলা প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। তারা এখন আবার ভেজাল ব্যবসায় নেমে পড়েছেন।
পাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাপাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাসরেজমিনে দেখা যায়, ডেমরা-বাঘাবাড়ি সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বড়াল নদীর পাশে গড়ে উঠেছে ডেমরা ছানাপল্লী। নব্য ও পুরাতন ছানা ব্যবসায়ীদের মিলিয়ে ওই এলাকায় প্রায় ২৫টি কারখানা রয়েছে। প্রতি কারখানায় ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন।

ডেমরায় প্রতিদিন খাঁটি ও ভেজাল মিলিয়ে উৎপাদিত ছানার পরিমাণ ৩ থেকে ৪ হাজার কেজি। গোপালনগরের প্রায় ১৬টি ছানা কারাখানা থেকেও একই পরিমাণ ছানা উৎপাদিত হয়। আর এসব উৎপাদন করা হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এসব কারখানার সব কাজ সম্পন্ন করা হয় ডোবা ও বড়াল নদীর নোংরা পানি দিয়ে। ছানা তৈরিতে তারা ময়দা, গোলআলু ব্যবহার করেন। আর দীর্ঘ সময় সতেজ রাখতে ছানার বস্তাগুলো ফরমালিন দ্রবণে চুবানো হয়। তাছাড়া ঘি তৈরিতে সয়াবিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার চলে।
পাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাপাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাপ্রতারণার কাজ ছেড়ে দেয়া ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাঁথিয়ার এক কারিগর (কথিত কেমিস্ট) জানান, ভেজাল ঘি তৈরিতে ২৫ শতাংশ খাটি ঘি এর সঙ্গে সয়াবিন, পাম অয়েল, ডালডা, পশুর চর্বি, ভেজিটেবল ফ্যাট, আলুর পেস্ট, রাসায়নিক দ্রব্য, রং ও ফ্লেভার ব্লেন্ড করে ব্যবহার করা হয়। রমজান ও দুই ঈদকে সামনে রেখে এ ভেজাল ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে।

পাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাপাবনায় ভেজাল ঘি ও ছানার জমজমাট ব্যবসাভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পাবনার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, ভেজাল খাবার তৈরিকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে তার অফিসের জনবল ও সামর্থ্যরে অভাবে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.