শিক্ষা ও জ্ঞানের সমন্বয়ে সন্তানরা পরিপূর্ণ মানুষ হবে-জঙ্গি নয় – ড. অনুপম সেন

নিজস্ব প্রতিবেদক :   শিক্ষা ও জ্ঞানের সমন্বয়ে আমাদের সন্তানরা পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠবে- জঙ্গি হয়ে নয়। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কঠোর নজরদারি ও নিবিড় তদারকিতে সন্তানদের জঙ্গি হয়ে ওঠা বন্ধ করা সম্ভব। সন্তানের মনো-জাগতিক বিকাশে সামাজিকীকরণের এ প্রধান দুই ইউনিটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার যখন সন্তানের আশ্রয়ের জায়গা হয়ে উঠতে বর্থ হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন শিক্ষার্থীদের মনোযোগ হারায় তখন শূন্যতার সুযোগ নেয় রাজনীতির আবরণে লুকিয়ে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা। নিষ্ঠুরতার অচিন্তনীয় ফাঁদে এভাবে আটকা পড়ে প্রাণপ্রিয় সন্তানটি। ‘সন্তান যখন জঙ্গি: পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করণীয়’ শীর্ষক এক গোল টেবিল আলোচনায় এ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। গত ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ ভাবনামূলক প্রতিষ্ঠান ফোরাম চিটাগাং এবং মিডিয়া পার্টনার সিটিনিউজবিডি আলোচনা সভার আয়োজন করে।

নগরীর সার্সন রোডস্থ হাটখোলায় সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন, শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা, শিক্ষক নেতা আবু তাহের চৌধুরী, চবি সাংবাদিকতা বিভাগের শিকষক মাধব দীপ, সাংবাদিক আবসার মাহফুজ, সমাজকর্মী মোস্তফা আনোয়ারুল ইসলামসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোরাম চিটাগাং এর সাধারণ সম্পাদক সংগঠক লিয়াকত হোসেন খোকন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফোরাম চিটাগাং এর সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ লিপটন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবছার উদ্দিন অলি, গীতিকার ফারুক হাসান, সংস্কৃতি কর্মী আমিনুল হক বাবু, এডভোকেট সালাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী লিপু, বোরহান উদ্দিন টিপু, গোলাম সরওয়ার, আব্দুর রহিম ফারুক প্রমুখ। আলোচনায় অংশগ্রহন করে অনুপম সেন বলেন, পরিবারকে নজর রাখতে হবে সন্তান কোথায় যায়, কি করে সেদিকে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করবে শিক্ষার্থীর আসা-যাওয়া, পাঠগ্রহন প্রবণতাসহ প্রাসঙ্গিক সকল বিষয়ে। সন্তান প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছে কিনা জ্ঞানার্জন সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি একটা আদর্শিক ও সংস্কৃতি আবহের মধ্যে তাদের গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সব তরুণ নষ্ট নয়, সবাই বিপথে যায়নি।

যারা যাচ্ছে তাদের পথরোধ করতে হবে, ফেরাতে হবে এবং বোঝাতে হবে। ঐ নৃশংসতার পথ ধর্ম ও মানবিকতার নয়। এ জন্য সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা শিক্ষা প্রশাসনের সাথে তাঁর দীর্ঘ সম্পৃক্ততার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, সন্তান শিক্ষা ও মানবিকতা ও ধার্মিকতার গুণ অর্জন করবে প্রথমে পরিবার থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিসর আরো বড়। এখানে তার বোধশক্তি জাগ্রত হবে, যুক্তির উন্মেষ ঘটবে। তাই এক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অনেক বেশি।

সন্তান কিংবা শিক্ষার্থী নৃশংস হয়ে যাওয়ার পর তা-হুতাশ করে কোন লাভ হবে না। অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী জঙ্গিবাদকে সমকালীন বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, পরিবারের বন্ধনে শৈথিল্য, রাজনীতিতে অসুস্থতা সর্বোপরি দেশী-বিদেশী চক্রান্তে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। বিশ্বে কারা আইএস সৃষ্টি করেছে দেশে জঙ্গিবাদে ইন্ধন দিচ্ছে সে কথা সচেতন সকল মহলই জানে। রাজনীতিতে সহিঞ্চুতা থাকলে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারলে চরম পন্থা কোন সুযোগ নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ পতিরোধ খুব বেশি প্রয়োজন। লেখক অধ্যাপক মাধব দীপ বলেন, সন্তান বিচ্ছিন্নবোধ করে কেন, কোন হাতছানিতে সে নিজেকে হারায় তা গভীরভাবে ভাবতে হবে পরিবারকে। সন্তানের সামনে অনুসরণীয় আদর্শ তৈরি করে দিতে হবে। অতিমাত্রায় প্রযুক্তি আসক্তিতে তারা কি মানবিকতা হারাচ্ছে- দেখতে হবে। শিক্ষার সাথে নৈতিকতা মানবিকতা গুরুত্বের সাথে যুক্ত করতে হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.