উখিয়া পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান যৌথ বাহিনী

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া(কক্সবাজার) :   কক্সবাজারের উখিয়ার দুর্গম পাহাড়ের সরকারি বনভুমি দখল করে জঙ্গী অর্থায়নে গড়ে তোলা অর্ধশতাধিক রহস্যময় স্থাপনা অবশেষে বৃহষ্পতিবার সকালে গুঁড়িয়ে দিয়েছে যৌথ বাহিনী। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মোঃ আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও বন বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর প্রায় ৪ শতাধিক সদস্য বৃহস্পতিবার ভোর সকালে দুর্গম পাহাড়ের এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। দ’ুটি বুলডোজার দিয়ে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টার মধ্যেই অর্ধ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে স্থানীয় বনকর্মীদের যোগসাজসে ২০-২৫ একর সরকারি বনভুমি দখল করে জঙ্গী সম্পৃক্ত বিদেশী এনজিওর অর্থায়নে এবং সশস্ত্র পাহারায় রাতারাতি অর্ধ শতাধিক সেমিপাকা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এর আগেও একই এলাকায় জঙ্গী সম্পৃক্ত এনজিওর অর্থায়নে এরকম স্থাপনা স্থাপন তৈরি করা হয়েছিল। উখিয়ার ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের ইন্দনে আন্তর্জাতিক এনজিও মুসলিম এইড এবং তুরষ্কের আরো কয়েকটি এনজিওর ২৬ কোটি টাকার অনুদানে দুর্গম পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণের জন্য এসব স্থাপনা নির্মাণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযানে র‌্যাবের ৩০ জন সদস্য, বিজিবির ৬০ জন, পুলিশ ১০০ জন ও বন বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন। ওই অভিযানে প্রায় ৪০টি গাড়ী টহল ছিল। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির, কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফাইল আহমেদ, সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল, উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মীর আহমেদ সহ র‌্যাব পুলিশ, বিজিবি। এব্যাপারে সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সশস্ত্র পাহারা বসিয়েই বন কর্মীদের অজান্তে এসব রহস্যময় স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। মুলত এগুলো ভূমিহীনদের অর্থায়ন ছিল না।
জঙ্গী সম্পৃত্ত এনজিওর অর্থায়নে উখিয়ার মধুরছড়ার দুর্গম পাহাড়ে স্থাপনাগুলো নির্মাণের আগে রামু উপজেলার পানেরছড়া এলাকা এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বালুখালী এলাকার বনভুমিতেও স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। উখিয়ার দুর্গম পাহাড়ে গত ৯ এপ্রিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ৪ শতাধিক সদস্য নিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী রহস্যময় স্থাপনাটি উচ্ছেদ করতে গিয়েছিল। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র লোকজনের বাঁধার মুখে পড়ে। এ কারনে সে সময় উচ্ছেদ করা যায়নি। এমনকি রহস্যময় স্থাপনাগুলো অক্ষত রাখতে পাহাড়ে যাতায়াতের রাস্তা পর্যন্ত কেটে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এলাকার এমপি আবদুর রহমান বদি ঘটনাস্থলে এসে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি যৌথ বাহিনীর সাথে এদিন এক বৈঠকে বসে স্থাপনাগুলো স্ব-উদ্যোগে সরিয়ে নেয়ার এক সপ্তাহের সময় নির্ধারণ করেন। সেই সাথে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাহাড়ের ভিতর এরকম পরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের অর্থায়নের রহস্যও জানানোর কথা বলেন। এসব কারনে উচ্ছেদ কার্যক্রম এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়।
কিন্তু এক সপ্তাহের স্থগিতের কথা বলে দীর্ঘ প্রায় ২মাস পর্যন্ত উচ্ছেদ না করায় নানা কথা উঠে। শেষ পর্যন্ত সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দ্দেশে বৃহষ্পতিবার এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়। কক্সবাজারের দক্ষিন বন বিভাগের নবাগত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির উচ্ছেদের ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরকারী বনভূমিতে গড়ে উঠা অর্ধ শতাধিক সেমিপাকা অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া সহ ২০ একর বন ভূমি জবর দখলকারীর কবল থেকে বেদখল মুক্ত করা হয়েছে। এব্যাপারে দখলদারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বরে জানিয়েছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.