চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অবৈধ ফোর হুইলারের উপদ্রব বৃদ্ধি

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি গত বছর ১ আগস্ট বাংলাদেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধ ঘোষণার পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলতে শুরু করে ফোর হুইলার তথা পিকআপ দিয়ে যাত্রী আনা-নেয়া করা হয়।

পরিবহন সংকটের কারণে প্রথম দিকে প্রশাসন এ সকল ফোর হুইলার পিকআপে উপরে তেরপল দিয়ে যাত্রী আনা-নেয়ায় বাঁধা না দেয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিপুল হারে মালবাহী পিকআপ দিয়ে যাত্রী আনা-নেয়া করা হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে ২৫ হাজার বৈধ সিএনজি টেক্সী এবং ১ লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি অবৈধ নম্বরবিহীন সিএনজি টেক্সী রয়েছে। তৎমধ্যে চট্ট-মেট্রো ১১ হাজার সিএনজি মহানগরে চলাচল করে থাকে। বিআরটিএ’র নিয়ম অনুযায়ী চট্ট-মেট্রো সিএনজিগুলি মেট্রো এলাকার ভিতরে চলাচল করতে পারবে, গ্রামে যেতে পারবে না। অপরদিকে চট্টগ্রাম লেখা সিএনজি টেক্সীগুলি গ্রামে-গঞ্জে চলাচল করলেও মেট্রো এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, চট্ট-মেট্রো সিএনজি টেক্সীগুলি গ্রামে চলে যায় বিনা বাঁধায়। তবে চট্টগ্রাম লিখিত সিএনজি টেক্সীগুলি মেট্রোতে তেমনভাবে চলাচল করতে পারে না। মাটি ও মালামাল বহনকারী ডাম্পার গুলি বিআরটিএ’র কোন অনুমোদন নেয় বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মাহবুল আলম।
তাছাড়া এ সকল গাড়ীতে যাত্রী বহন করা কোনভাবেই বিধিসম্মত নয়। এ সকল গাড়ীগুলো স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে মালবাহী পিকআপ সারা চট্টগ্রামে দুই শতাধিক রয়েছে। কিন্তু অবৈধ সংখ্যা তার জানা নেই বলে তিনি দাবী করেন। এ সকল পিকআপে কোন ভাবেই যাত্রী আনা-নেয়ার অনুমোদন না থাকলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাত্রী আনা-নেয়া করছে এ সকল গাড়ীগুলো।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, যে সকল গাড়ীগুলো যাত্রী আনা-নেয়া করবে তাদের রোড পারমিট থাকতে হবে। অন্যথায় সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবেন। তিনি বলেন, ফোর হুইলার হিউম্যান গাড়ী ইতিমধ্যে বহদ্দারহাট থেকে চন্দনাইশ পর্যন্ত বেশ কিছু অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে বৈধের চেয়ে অবৈধ গাড়ীর সংখ্যা বেশি বলে তিনি দাবী করেন। তাছাড়া এ সকল ফোর হুইলার গাড়ীর সাথে কিছু পিকআপ অবৈধ কাগজপত্র সৃষ্টি করে যাত্রী আনা-নেয়া করছে। বৈধ পারমিট ছাড়া এ সকল গাড়ী চলাচল সমীচীন নয় বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, এ সকল অবৈধ গাড়ীর বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ প্রতিদিন ৫শ থেকে ৬শ মামলা দিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম বলেছেন, সরকার ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সিএনজি টেক্সী তথা থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার অনুরোধে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা ও রোগীদের ব্যাপারে ছাড় দিতে হয় এ সকল সিএনজি টেক্সীদের। তাছাড়া পটিয়া পৌর এলাকায় মন্ত্রীর নির্দেশে চলছে সিএনজি টেক্সী।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডাম্পার বিআরটিএ’র অনুমোদন না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছে। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ বিমল চন্দ্র ভৌমিক বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী হাইওয়ে সড়কে তিন চাকা বিশিষ্ট যান পেলে আটক করে মামলা দেয়া হচ্ছে। চুরি করে রাত্রীবেলা ডাম্পার চলাচল করে থাকলেও সামনে পেলে আটক করা হয় এবং মামলা দেয়া হয়। তাছাড়া সড়কের নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ যান চলাচল বন্ধের জন্য তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আমিরাবাদ থেকে রওশনহাট পর্যন্ত এবং নতুন ব্রীজ থেকে পটিয়া হয়ে রওশনহাট পর্যন্ত পৃথক পৃথক ফোর হুইলার তথা যাত্রীবাহী পিকআপ চলাচল করছে পৃথক পৃথক সমিতির মাধ্যমে। বিশেষ করে আমিরাবাদ থেকে রওশনহাট পর্যন্ত যে সমিতিটি পরিচালিত হয় এ সমিতির দুই শতাধিক যাত্রীবাহী পিকআপ থাকলেও সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে রয়েছে অর্ধ শতাধিক। বাকী গাড়ীগুলো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে বলে জানা যায়।
একজন চালক নাম প্রকাশে অনিচ্ছা স্বত্বে বলেছেন, এ যাত্রীবাহী পিকআপগুলি চালাতে গিয়ে কোম্পানীকে প্রতিটি গাড়ীর পিছনে মাসিক ২ হাজার টাকা করে খরচ দিতে হয়। এ উঠানো টাকা সমিতির মাধ্যমে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চলে যাচ্ছে বলে জানান। অপরদিকে সিএনজি টেক্সীগুলি গ্যাস আনতে গেলে প্রতি থানায় মাসিক ২শ থেকে ৪শ টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন টেক্সী চালকেরা। তাছাড়া হাইওয়ে পুলিশ সিএনজি টেক্সী আটক করার পর বিভিন্ন ইস্যুতে মামলা দিয়ে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে নিচ্ছে। এতে করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় ১৫ হাজারের অধিক সিএনজি টেক্সী, তিন শতাধিক ডাম্পার, ও তিন শতাধিক যাত্রীবাহী পিকআপের মধ্যে বেশকিছু অবৈধ যানবাহন থাকায় অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রশাসনের একটি অংশ। সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব। আমিরাবাদ থেকে রওশনহাট পর্যন্ত যাত্রীবাহী পিকআপের যে সমিতি রয়েছে তা একটি গোল স্টিকার ব্যবহার করে থাকে গাড়ীতে। ফলে প্রশাসনের লোকজন এ স্টিকার লাগানো গাড়ীতে কোন রকম কাগজপত্র পর্যন্ত চেক করেন না বলে জানালেন চালকেরা।
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী থেকে মুজাফরাবাদ পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এ মহাসড়কে চট্টগ্রাম থেকে এখন অসংখ্য লোকাল বাসের পাশাপাশি চলাচল করছে যাত্রীবাহী পিকআপ ভ্যান। সে সাথে বিআরটিএ’র অনুমোদিত ফোর হুইলার রাইডার দিন দিন বেড়েই চলেছে। রয়েছে মাইক্রো, হাইচও। তবে দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা নিয়মিত চলাচল করছে অবাধে। ফলে এ সড়কে আর গণপরিবহনের সংকট নেই বললেই চলে। গত বছর মহাসড়কে থ্রি হুইলার নিষিদ্ধ ঘোষণার পর যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তা এখন সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এক সময় এ সড়কের যাত্রীরা সিএনজি অটোরিক্সা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ফলে চন্দনাইশ উপজেলার ৭ কিলোমিটার এ মহাসড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করত। ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা, হারিয়েছে জীবন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে মহাসড়কে সিএনজি টেক্সী চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে আনুপাতিক হারে দুর্ঘটনা কমে এসেছে। তবে যে সকল পিকআপ ভ্যানে তেরপল দিয়ে অস্থায়ীভাবে যাত্রী আনা-নেয়া হচ্ছে এ সকল গাড়ীর সংখ্যার পাশাপাশি ফোর হুইলার হিউম্যান গাড়ীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি ষ্টেশনে সব সময় তিন থেকে চারটি গাড়ী দাড়ানো থাকে। তাছাড়া এ সকল যানবাহন গুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার কারণে সাধারণ যাত্রীদের সাথে বাকবিতন্ডা লেগেই আছে। তাই এলাকার সচেতন মহল এবং যাত্রী সাধারণ এ সকল গাড়ীর ভাড়া নির্ধারণ পূর্বক অবৈধ গাড়ীগুলি সড়ক থেকে উচ্ছেদের দাবী জানিয়েছেন। অন্যথায় আবার দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা করছেন তারা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.