চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ : নেতৃত্বের জন্য দৌড়ঝাঁপ !

0

জুবায়ের সিদ্দিকী –

মাত্র তিন মাস মেয়াদের জন্য গঠিত হলেও নগর যুবলীগের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে তিন বছর। ২০১৩ সালের ৮ জুলাইয়ের পর থেকে এ সময়ের মধ্যে মাত্র ছয়টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে কমিটি করতে পেরেছে সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা। এরই মধ্যে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে জোরেশোরে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল বর্তমান নেতারা ছাড়াও নতুন পদে আসতে তৎপর রয়েছে বেশ কয়েকজন উঠতি নেতা। নগর যুবলীগের কমিটি গঠনে দীর্ঘসুত্রিতার কারনে প্রতিদিনই বাড়ছে পদপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যা। সভাপতি সম্পাদক পদ ভাগিয়ে নিতে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুসারী কমপক্ষে ডজনখানেক পদপ্রত্যাশী নেতা এখন কেন্দ্রমুখি। এর মধ্যে বিতর্কিত বেশ কয়েকজন নেতাও সক্রিয় রয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তবে কমিঠি গঠনের বিষয়ে এখনো জোরালো কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ।

বাংলাদেশ যুবলীগের সাধারন সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ন কমিটিগুলো বাতিল করে নতুন কমিটি করা হবে। আমরা সকল কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছি। নগর যুবলীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমেই হবে। যা হবে একটি ঐক্যবদ্ধ কমিটি। দলীয় সুত্র জানায়, কমিটির মেয়াদ যতই বাড়ছে বর্তমান কমিটি ও পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে তত বিরোধ দ্বন্দ্ব বাড়ছে। গত ছয়মাস ধরে নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ও যুগ্ন আবহবায়ক ফরিদ মাহমুদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল চরমে।

বাণিজ্যিক কারনে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় নগর যুবলীগের দুই নেতা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে নগর যুবলীগ। যুবলীগ আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ন আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম দিদার ও মাহবুবুল আলম সুমনকে নিয়ে এক পক্ষ ও যুগ্ন আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ নিজ অনুসারীদের নিয়ে তৎপর ছিলেন। সর্বশেষ নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু চলতি মাসের শুরুতে মহিউদ্দিন বাচ্চু ও ফরিদ মাহমুদের মধ্যে বিরোধ নিস্পত্তি করে দেন। এর পর ৮ সেপ্টেম্বর ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসুচী পালন করেন নগর যুবলীগ। বর্তমান যুবলীগ কমিটির সকল নেতাই আগামী কমিটির পদ প্রত্যাশী।

নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, নতুন কমিটি হওয়ার বিষয়ে আমিও মাঝেমধ্যে শুনি। তা এটুকুতেই সীমাবদ্ধ। আমি অলরেডি আহবায়ক হিসেবে আছি, কোন প্রার্থী নই। এরপরও যদি কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে রাখার প্রয়োজন মনে করে তাহলে হয়তো কমিটিতে রাখবে। সম্মেলনের তারিখ পড়লেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে। অথচ সম্মেলন করতে এখনো কেন্দ্র থেকে কিছুই বলা হয়নি। যুবলীগ চেয়ারম্যান দেশের বাইরে উনি ফিরলেই হয়তো একটা সিদ্ধান্ত হবে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোন ভুল বুঝাবুঝি নেই। মাঝখানে দুই তিনটি অনুষ্টানে ফরিদ মাহমুদ অনুপস্থিত ছিলেন, কেন তা বলতে পারবো না।

যুগ্ন আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন,’ যারা মাঠে ময়দানে দলের কর্মসুচীতে নিবেদিত, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও মেধাবী তাদেরকে কেন্দ্রীয় এবং নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিশ্চয়ই খুঁজে নেবেন’। নেতাকর্মীরা জানান, নগর যুবলীগের পাঁচ নেতা ছাড়াও কেন্দ্রীয় যুগলীগের উপ সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, সাবেক ছাত্রনেতা দেবাশীষ পাল দেবু, দিদারুল আলম দিদার, হাসান মুরাদ বিপ্লব, আবদুল মান্নান ফেরদৌস, নতুন কমিটির নেতা হতে লর্বিং তদবির চালাচ্ছেন।

এরা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি ডা. আফসারুল আমীন ও সাধারন সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের অনুকম্পা নিয়ে পদে আসতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। নগর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা কে বর্তমান কমিটি সব ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,’’বিএনপি জামায়াত এর জ্বালাও পোড়াও ও নাশকতামুলক পেট্রোলবোমার সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমরা দীর্ঘ সময় রাজপথে ছিলাম। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী সব ওয়ার্ড কমিটি করা হয়নি। এ অবস্থায় নতুন কমিটি হলে আমি প্রত্যাশা করব ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মুল্যায়ন হবে। তার মতে, নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে কমিটি হলে গ্রহনযোগ্য হবে’’।

যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় যলীগের পদে থাকা চট্টগ্রামের এক নেতা জানান, বর্তমান পদ প্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে নগর রাজনীতিতে যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে তাদের কমিটিতে রাখা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যানের বাড়ি চট্টগ্রামে হওয়ায় তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশের চেয়ে নিজের পছন্দ ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের উপরই আস্থা রাখবেন বেশি। অতীত রাজনীতিতে যাদের নিয়ে বিতর্ক নেই তারাই আসবেন কমিটিতে।

পদ প্রত্যাশী নেতা কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-সমবায় বিশয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে বলে শুনেছি। ছোট ভাইয়েরা আমাকে পদে দেখতে চায়। যে কারনে আমিও প্রার্থী হচ্ছি এবার। আশা করি যারা ত্যাগী, রাজপথে ছিল এবং সংগঠনের জন্য উপকারী তাদের দিয়েই সুন্দর কমিটি গঠন হবে। পদ প্রত্যাশী নেতা দিদারুল আলম দিদার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে করছি।

নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করছি। আশা করি তার মুল্যায়ন হিসেবে গুরুত্বপুর্ন পদে থাকতে পারব। আমরা এমন একটি কমিটি চাই, যে কমিটিতে হাইব্রীড, অস্ত্রবাজ, পেশিশক্তি দেখায় এমন নেতার স্থান থাকবে না। মেধাবী নেতাদের স্থান হবে। যুগ্ন আহবায়ক মাহাবুবুল আলম সুমন বলেন,’ রাজনীতি করি মানুষের জন্য। রাজনীতিতে চাওয়া পাওয়া থাকবে। মেধা, দক্ষতা, ত্যাগ, শ্রম সবকিছুর মুল্যায়ন প্রয়োজন। আগামী কমিটিতে আমাদের মুল্যায়ন হবে বলে বিশ্বাস করি’।

প্রসঙ্গত গত ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে মহানগর যুবলীগের তৎকালীন মাহমুদুল হক ও চন্দন ধরের আহবায়ক কমিটি সর্বশেষ ৪১টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে। এরপর ২০০৩ সালে চন্দন ধরকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সম্পাদক করে আরো একটি কমিটি হলেও এরা অধিকাংশ ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করতে পারেনি। বর্তমান আহবায়ক কমিটিও তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ছয়টি ওয়ার্ডে কমিটি করতে পেরেছে। নগর যুবলীগের রাজনীতিতে অনেকের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলযজ্ঞের অভিযোগ রয়েছে। আবার রয়েছেন সামাজিক, সাংস্কৃতি ও সেবামুলক কর্মকান্ডেও অনেক যুবলীগ নেতা। এদের মধ্য থেকে যোগ্য নেতৃত্বকে খুঁজে আনতে হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.