এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই : মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রচারণা। আগামীকাল ২৬ নভেম্বর (শনিবার) মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে দীর্ঘ ১০ বছর পর উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১০১ জন কাউন্সিলর। সম্মেলনে সভাপতির পদ নিয়ে যতটা আলোচনা ও প্রচারপ্রচারণা চলছে ততটা নেই সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের নিয়ে। উপজেলার হাটেবাজারে আলোচনার ঝড় উঠেছে কে হবেন কাউন্সিলে নির্বাচিত সভাপতি।
সভাপতি প্রার্থীরা একেকজন একেক নেতার সমর্থন নিয়ে মাঠে কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে সকাল থেকে রাত অবধি ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৩ জন। তারা হলো মিরসরাই পৌরসভার মেয়র ও মিরসরাই পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সমর্থনপুষ্ট চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সদস্য আলাউদ্দিন হায়দার রাজু, মিরসরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমানের সমর্থনপুষ্ট চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক রাসেল ইকবাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সমর্থনপুষ্ট মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক ইব্রাহীম খলিল ভূঁইয়া। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ৭ জন।
সাধারণ সম্পাদক পদে ৭ জন প্রার্থী হলেও মাঠপর্যায়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন ৪ জন প্রার্থী। তারা হলো মিরসরাই পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি আল ফায়হাত সংগ্রাম, মিরসরাই ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুজ্জামান রিফাত, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক ফরহাদ হোসেন, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ফাহিম উল হুদা।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি কমিটি উপজেলাব্যাপী পোস্টার ব্যানারে প্রচারণার কাজও সম্পন্ন করেছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মঞ্চসজ্জা ও বাদ বাকী প্রস্তুতির কাজও। ছাত্রলীগের কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গৃহায়নও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বখতেয়ার সাঈদ ইরান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম জাকির হোসাইন, বিশেষ বক্তা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব। সভাপতিত্ব করবেন মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়কও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাইনুর ইসলাম রানা।
কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে সর্বশেষ মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষনে জানা যায়, ১০১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সভাপতি পদপ্রার্থী আলাউদ্দিন হায়দার রাজুর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন প্রায় ৩০ জন কাউন্সিলর। অপর প্রার্থী রাসেল ইকবাল চৌধুরীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন প্রায় ১০ জন কাউন্সিলর, ইব্রাহীম খলিল ভূঁইয়ার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন ১০ জন কাউন্সিলর। বাকী কাউন্সিলররা সরাসরিভাবে কোন সভাপতি পদপ্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন না।
কাউন্সিলের বিষয়ে সভাপতি প্রার্থী আলা উদ্দিন হায়দার রাজু জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি করে আসছি, সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম। কাউন্সিলদের কাছে গিয়ে নিজের কর্মকান্ড তুলে ধরছি, নেতাকর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।
আরেক সভাপতি প্রার্থী ইব্রাহীম খলিল ভূঁইয়া জানান, কাউন্সিল ঘিরে উপজেলা ছাত্রলীগে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। যেখানে যাচ্ছি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সঠিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে আমি আশাবাদী।
অপর সভাপতি প্রার্থী রাসেল ইকবাল চৌধুরী জানান, স্কুল জীবন থেকে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে রয়েছি। আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় জড়িত ছিলাম। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্ধারন হবে বলে আমি মনে করি। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
বসে নেই সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থীরাও তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন কাউন্সিলদের দ্বারে দ্বারে। সাধারন সম্পাদক প্রার্থী আল ফায়হাত সংগ্রাম জানান, ভোট চেয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নেতাকর্মীরা আমাকে ভোট দেবেন বলে আশা রাখি। বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের সময় আমি মাঠে ছিলাম, তার মূল্যায়ন কাউন্সিলররা করবেন বলে আশাবাদী।
সাধারন সম্পাদক প্রার্থী ফরহাদ হোসেন জানান, বিগত দিনে রাজপথের সকল আন্দোলন সংগ্রামে নিবেদিত ছিলাম। দলের নেতাকর্মীরা আমার আন্দোলন সংগ্রামের মূল্যায়ন করবে, জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। মাঠপর্যায়ে আমি ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি।
সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী সাইদুজ্জামান রিফাত জানান, কাউন্সিলকে ঘিরে উপজেলার ছাত্রসমাজের মাঝে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী ফাহিম উল হুদা জানান, দীর্ঘদিন পর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকল কাউন্সিলদের কাছে গিয়ে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নেতাকর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
ছাত্রলীগের কাউন্সিলে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী প্রার্থীদের সম্পর্কে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব জানান, ‘সভাপতি পদের তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বয়স পার হয়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ সম্পাদক পদে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।’
সম্মেলন আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন। এ সংগঠনটির সম্মেলন মানে উৎসব। এ উৎসবে শুধুমাত্র ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বা সমর্থকগোষ্ঠী নয় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও মুখিয়ে থাকেন। কারা ঐতিহাসিক এ সংগঠনটির দায়িত্বে আসছেন।’
এ সম্মেলনে কেমন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে জানতে চাইলে তৈয়ব বলেন, ‘আমার বিশ্বাস বার্ষিক এ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সুযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। মিরসরাই-সীতাকুন্ড এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়াতে পারে।’