বরকল বিদ্যালয়ের মাঠে ভবন নির্মাণের উপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

0

নিজস্ব সংবাদদাতা,চন্দনাইশ::উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বরকল এস জেড উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একাংশে মার্কেট নির্মাণ কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত (১৭ জানুয়ারি) বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চে রিট আবেদনে এ আদেশ দেয়া হয়।সেই সাথে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার স্কুলের খেলার মাঠ সংরক্ষণে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে কেশুয়ার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম চৌধুরী বাদী হয়ে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরকল এস জেড উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ সীমানায় শহীদ মুরিদুল আলম সড়কের পাশে বাণিজ্য ভবন নির্মাণ বন্ধ করার লক্ষ্যে রিট আবেদন করেন।

আদেশে মার্কেট নির্মাণের জন্য ভেঙ্গে ফেলা স্কুলের সীমানা প্রাচীর অবিলম্বে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। সে সাথে বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলের ভেতরে থাকা খেলার মাঠের আকৃতি-প্রকৃতি, পরিবর্তন না করতেও নির্দেশ দেয়া হয়। বিদ্যালয়ের ভেতরে খেলার মাঠে বেআইনীভাবে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ রোধে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনী হবে না, এ ব্যর্থতা সংবিধানের লঙ্ঘন বলে ঘোষনা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

সেই সাথে স্থানীয় সরকার সচিব, পরিকল্পনা সচিব, শিক্ষা সচিব, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সভাপতি সহ বিবাদীদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিট শুনানী করেন এড. আশরাফুল হাদী, এড. কাজী আতাউল-আল-ওসমান। এড. আশরাফুল হাদী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ মাঠটি মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং গ্রাউন্ড ছিল।স্কুলের খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণ হলে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হবে, সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে এর আকৃতি-প্রকৃতি সংরক্ষণ করতে হবে। কোনভাবেই তা বদলানো যাবে না। স্কুল ও মাঠের ভূমির মালিক শিক্ষা বিভাগ। তাদের অনুমতি ছাড়াই স্কুল পরিচালনা কমিটি গত ডিসেম্বর মাসে মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেন। অথচ এ কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে। এসব যুক্তিতে রিটটি করায় আদালত এ আদেশ দেন।

জানা যায়, ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী বরকল এস জেড উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১০ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও ১৫ জন ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়মিতভাবে পাঠদান করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশে শহীদ মুরিদুল আলম সড়কের পাশ ঘেঁষে একটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে এলাকায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। গত ১৭ ডিসেম্বর’১৬ স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২৮ ডিসেম্বর’১৬ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বেইজ ঢালাইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সদস্য, শহীদ মুরিদুল আলমের জ্যৈষ্ঠ সন্তান মাহবুর রহমান শিবলীকে সভাপতি, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান খালেদা আক্তার চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে মাঠ রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির উদ্যোগে গত ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।

এ ব্যাপারে মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব খালেদা আক্তার চৌধুরী বলেছেন, ১৯৭১ সালে বরকল এস জেড উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এ মাঠে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অস্ত্র জমা নেয়া হয়েছিল। এ স্মৃতি বিজড়িত মাঠে কোনভাবেই বাণিজ্যিক ভবন করতে দেয়া হবে না।বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী জসিম বলেছেন, আমরা শুনেছি হাইকোর্টে রিট হয়েছে।

এ ব্যাপারে আমরা হাইকোর্টের আদেশকে মেনে নিয়ে যেভাবে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন করা যায়, সেভাবে কাজ করে যাবো। সে সাথে সকল প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রিটের কপি পাওয়ার পর আইনগতভাবে যেভাবে করা উচিত বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে তা করে যাবো।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর আহমদ বলেছেন, হাইকোর্টে রিট হয়েছে শুনেছি।হাইকোর্ট যেভাবে নির্দেশনা দেয়, আমরা সেভাবে করব।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.