উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে ৩ রাষ্ট্রদূত

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার):  কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন বিশ্বের তিন প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূত।বৃহ:স্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ৯.১০ মিনিটে রাষ্ট্রদূতগণ প্রথমে এমএসএফ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিনিময় করেন। এরপর সকালে ১০.১৫ মিনিটে রোহিঙ্গা শিবিরের অনিবন্ধিত নতুন টালের রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন এবং ডি-৪ ব্লকের মাথায় সম্প্রতি নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে নির্যাতনের কাহিনী শুনেন রাষ্ট্রদূতগণ।

এছাড়া ডি-৫ ব্লকে আশ্রিত নতুন রোহিঙ্গা ১০জন নারী ও ১০জন পুরুষের সাথে একান্তে আলাপ করেন। এরপরই রাষ্ট্রদূতগণ কুতুপালং শরণার্থী শিবির ও অনিবন্ধিত নতুন রোহিঙ্গা টালের বস্তিতে কর্মরত এনজিও সংস্থা আইএমও,ইউনিসেফ,কোডেক,আরটিএম,এসিএফসহ বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক নির্মিত স্কুল, ড্রেইন, পয়নিষ্কাশন, শেড, টয়লেট, সোলার, বার্থরুমসহ যাবতীয় কর্মকান্ড সু-চারু রূপে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা প্রত্যক্ষ করেন।

এ সময় তিন দেশের রাষ্ট্রদূত ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই-কমিশনার এইচইএমএস আলিসন ব্ল্যাকি, কানাডিয়ান হাই-কমিশনার এইচই বেনিয়ট পিয়েরে লারামি, অষ্ট্রেলিয়ান হাই-কমিশনার এইচইএমএস জুলিয়া নিবলেট ১০.১৫ মিনিটে মিয়ানমার থেকে ধেয়ে আসা রোহিঙ্গা ১০জন নারী এবং ১০জন পুরুষের সাথে আলাপকালে রোহিঙ্গারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূতদের বলেন, নোয়াখালী হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে নয়, নিজ দেশেই ফিরতে চান শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ দিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপের কথা জানিয়েছেন তারা।

উখিয়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রদূতগণ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ শামসুদ্দোহার কার্যালয়ে প্রায় ৩০ মিনিট মতবিনিয়মের পর সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং দেন রাষ্ট্রদূতগণ।কুতুপালং নতুন টালের বস্তির রোহিঙ্গা মোহাম্মদ নূর বলেন, ‘শুনেছি নোয়াখালীর হাতিয়ার ঠেঙ্গারচর খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সেখানে যেতে চাই না। ওখানকার চেয়ে আমাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

কুতুপালং অনিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশ সরকারের শরনার্থী নীতিমালা অনুযায়ী ঝুঁকি কিংবা অপরাধ প্রবণতা এড়াতে যেখানে খুশি নিতে পারে। আমরা এই অনিবন্ধিত শিবিরে দীর্ঘদিন অবস্থান করছি শুধুমাত্র মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য।

এদিকে রাষ্ট্রদূতগন রোহিঙ্গা শিবির এলাকা ত্যাগের পরপরই উখিয়া হাসপাতালে আইএমও, রেডক্রিসেন্ট ও ইউনিসেফ কর্তৃক পরিচালিত রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার পর কক্সবাজার রওনা হন। এর আগের দিন বুধবার রাষ্ট্রদূতগণ কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী মোঃ আবদুর রহমানের সাথে মতবিনিময় করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর মিয়ানমার সরকার তার দায় চাপানোর চেষ্টা চালান রোহিঙ্গাদের ওপর। জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে মুসলিম নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ, হত্যাসহ নানা নির্যাতনের কারণে ৬৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে এখানকার রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.