অনিয়ম চসিকের সিএনজি স্টেশন: ৩৪ কর্মচারী বদলি

0

বিশেষ প্রতিবেধক :  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দামপাড়া সিএনজি স্টেশন অনিয়ম ও কর্মকর্তাদের রেশারেশির কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে । চসিকই নগরীতে প্রথম সিএনজি স্টেশন চালু করে।নগরীর সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও স্টেশনটি এখন চলছে থেমে থেমে । দামপাড়া সিএনজি স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৩ সালের ২১ জুন।দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলেন  নির্বাহী প্রকৌশলীর কারণে এ বেহাল অবস্থা ।  ক্রমম্বয়ে ৮টি ডিসপেনশার কমে দুটিতে হয়েছে।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী বলেন, ইচ্ছেমতো সময়ে আসছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ।সিএনজি স্টেশনের প্রত্যেকটা জায়গায় সমস্যা। এখানে ১৭/১৮ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসতো। আমি দেখলাম, স্টাফ কোর্য়াটার, স্টোর, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, রেস্ট হাউস এখানের লাইন ব্যবহার করছে।   তারপরও আমরা এখন গ্যাসের বিল নিয়মিত পরিশোধ করছি। কর্পোরেশনের গাড়িতে গ্যাস দিচ্ছি। এখনো স্টেশনটি লাভজনক আছে। অন্যদিকে কর্মকর্তাদের রেশারেশির খেসারত হিসাবে ৩৪ জন কর্মচারীকে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চসিক সূত্রে জানা যায় , দামপাড়া সিএনজি স্টেশন শুরুতে ইতালি থেকে আমদানিকৃত দু’টি কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে ছয়টি ডিসপেনসার চালু করা হয়। একই সাথে ১২টি গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ দেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেশনটি নির্মাণে চসিক’র খরচ হয় ছয় কোটি টাকা। পরবর্তিতে এখানে আরো তিনটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। ৭টি ডিসপেনশার এবং ১৪টি নজল চালু করা হয়। এতে একই সাথে ১৪টি গাড়িতে গ্যাস দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে স্টেশনটি। ১৪টি গাড়িতে একসাথে গ্যাস দেয়ার মতো এমন অবকাঠামোগত সুবিধা চট্টগ্রামে আর কোন সিএনজি স্টেশনের নেই। অত্যাধুনিক মেশিন, খোলা মেলা জায়গা, লাইনের সুবিধা এবং সহজ যোগাযোগের সুবাদে এই স্টেশনটি গ্রাহকদের নিকট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। চসিকের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম লাভজনক প্রকল্প হিসাবে স্থান করে নেয় এ স্টেশনটি।

সে সময় দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আবু হাসনাত দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে স্টেশনটিতে অলক্ষণের চাপ পড়তে থাকে। লাভ তো দুরে থাক, স্টেশনটি পরিচালনা করে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমের বিল পরিশোধ করাও দায় হড়ে পড়ে মাঝখানে। এজন্য গ্যাসের লাইনও বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া দিনে দিনে সিএনজি স্টেশনটি ক্রমান্বয়ে সংকোচিত হয়ে এসেছে। ১৪টি গাড়িতে গ্যাস দেওয়ার সক্ষমতার স্টেশনটিতে এখন মাত্র তিনটি গাড়িতে গ্যাস দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। বাকিগুলো অযত্ন, অবহেলা ও অনিয়মের কারনে বন্ধ হয়ে গেছে।
স্টেশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অপারাগতা জানান, সিএনজি স্টেশন অত্যন্ত লাভজনক একটি প্রকল্প। আগে এ স্টেশন থেকে মাসে কোটি টাকার কাছাকাছি লাভ হতো। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর কারণে স্টেশনটি দিন দিন অকেজো প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।

চসিক সূত্রে, সিএনজি স্টেশনে নিয়োজিত নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী‘র সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে স্টেশনটিতে। ২০১৪ সালের জুলাইতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এক অফিস আদেশে শামসুল হুদা সিদ্দিকীকে কোন অফিস আদেশ জারি না করার নির্দেশ দেন। এরপরও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত একাধিক অফিস আদেশ জারি করেন তিনি। এসব অফিস আদেশ নিয়েই মূলত কর্মকর্তাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয় শামসুল হুদা সিদ্দিকীর। গেল মাসের জানুয়ারির ৩০ তারিখে শামসুল হুদা সিদ্দিকীর জারি করা দুটি অফিস আদেশ নিয়ে সিএনজি স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠে। এজন্য শামসুল হুদা সিদ্দিকীকে নাজেহালও হতে হয়। বিষয়টি তদন্ত করেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদ। বুধবার চসিকের অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায়ও সিএনজি স্টেশনের অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। এতে স্টেশনের ৩৪ জন কর্মচারীকে দ্রুত অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে শামসুল হুদা সিদ্দিকী বলেন, আমাকে অফিস আদেশ জারি না করার নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে আমি কোন অফিস আদেশ জারি করিনি। আমি কেন অফিস আদেশ জারি করবো। আপনাদের কাছে থাকলে আপনারা সেটা দেখান। আমার পেছনে যে অনেকে লেগে আছে সেটা আপনারাও জানেন।

যোগাযোগ করা হলে অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও ফিরিঙ্গিবাাজর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, মেয়র মহোদয় দুর্নীতি অনিয়মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে দুর্নীতির অভিযোগ শোনার সাথে সাথে তিনি সবাইকে স্ট্যান্ড রিলিজের অর্ডার করেন। কিন্তু অফিসিয়াল চিঠি না পাওয়াতে তারা এখনো কাজ করছে। তাদের সবাইকে সেখান থেকে বদলি করা হবে।

কর্মকর্তাদের অনিয়মের বলি কেন শ্রমিকরা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কান টানলে মাথা আসে। আপাতত শ্রমিকদের বদলি করা হবে। এরপরও ঠিক না হলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.