আনোয়ারায় দুই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি

0

জাহেদুল হক, আনোয়ারা : মাটি ও পানিতে তীব্র লবণাক্ততার কারণে আনোয়ারায় অন্তত দুই হাজার হেক্টর ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। রোয়ানু বিধ্বস্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুর ও জুঁইদন্ডীর বেশিরভাগ এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় গত তিন বছর ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে রায়পুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।

গহিরা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ছালেহ আহমদ জানান, তীব্র লবণাক্ততার কারণে এই ইউনিয়নের সরেঙ্গা,রাজার পাড়া,পূর্ব গহিরা,দক্ষিণ গহিরা,খোর্দ্দ গহিরা ও পশ্চিম রায়পুর এলাকার সিংহভাগ জমি ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগেও এসব এলাকায় ব্যাপক চাষাবাদ হতো,উৎপাদিত হতো কাঙ্খিত ফসল। জলবায়ুর পরিবর্তনে এ অঞ্চলের কৃষিতে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় গত তিন বছর ধরে এ পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের থোক বরাদ্দের আওতায় সরেঙ্গা ও জুঁইদন্ডী এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। তাছাড়া উপকূল সুরক্ষায় মেগা প্রকল্পের ৪২টি প্যাকেজের মধ্যে ১৫টি প্যাকেজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ চলতি মাস শেষের দিকে শুরু হবে বলে জানান পাউবোর উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো.কায়ছার উদ্দিন।

সরেজমিন বুধবার গিয়ে রায়পুর,সরেঙ্গা ও গহিরা এলাকার ফসলি মাঠ,বিল শুকনো দেখা গেছে। এলাকার কোথাও বীজতলা বা বোরো চাষের প্রস্তুতি দেখা মিলেনি। এ সময়ে যেখানে পানি থৈ থৈ করার কথা সেখানে মাঠ ফেটে চৌচির। কোথাও নেই স্কীম সেচের ব্যবস্থা। মাঠজুড়ে বিচরণ করছে গবাদি পশুর দল। এ বিষয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,বর্ষায় জোয়ারের পানি উঠানামা করায় ফসলি মাঠ তলিয়ে যায়। তাছাড়া রোয়ানুর জলোচ্ছ্বাসে এ অঞ্চলের প্রায় জমিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ে। কোন কোন এলাকায় ১৮/২০ পিপিটি লবণাক্ততা পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ না হওয়ায় এলাকায় কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে এলাকার দরিদ্র ও প্রান্তিক আয়ের মানুষ জীবিকার সন্ধানে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

জানা যায়,লবণাক্ততার কারণে স¤প্রতি ওই এলাকায় সেচ বন্ধ করে দিয়েছে চাষিরা। শুধু রায়পুরে নয়,জুঁইদন্ডী এলাকাতেও লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও কৃষি জমি হ্রাসের বিষয়টি ক্রমেই মারাত্মক সমস্যা হয়ে উঠেছে বলে জানান জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী খোকা। তিনি আরো বলেন,প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধগুলো দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বিস্তৃত চাষাবাদের জমিতে লবণ পানি প্রবেশ করে জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট করছে।

গত বছর রোয়ানুর আঘাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো প্রায় ভেসে যায়। এ যাবৎ বাঁধ মেরামত ও সংস্কারের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে উপকূলের বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হয় এবং উপকূল হতে অনেক ভেতরের ফসলি জমিতেও ব্যাপক মাত্রায় লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে। লবণাক্ততার কারণে এই এলাকার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততার পরিমাণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষি খাত।

উপজেলার সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো.সরওয়ার আলম জানান,এ উপজেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৮শ হেক্টর। এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার নয়শ ১০ হেক্টর। আর চাষাবাদ হয়েছে ৬ হাজার তিনশ হেক্টরের বেশি জমিতে। গত বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ছয়শ ৪০ হেক্টর। এ বছর তা বাড়ানোর পরও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।

আনোয়ারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.একরাম উদ্দিন বলেন,অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বোরো চাষের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে লবণাক্ততার কারণে রায়পুরের কিছু এলাকায় চাষাবাদ হচ্ছে না। চাষাবাদ ব্যাহত হওয়া ছাড়াও খাদ্যের অভাবে গবাদি পশুর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। নারকেল সুপারিসহ প্রায় সব ধরনের গাছপালার স্বাভাবিক আয়ু কমছে। পুকুর নালায় লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় মাছও মরে যাচ্ছে। নিরাপদ পানি ও খাবারের ব্যাপারেও বড় সংকট দেখা দেয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এসব এলাকায় কৃষি ও জীববৈচিত্র ধ্বংসের মাধ্যমে জনজীবনে মরা-বাঁচার সংকট সৃষ্টি হতে পারে। উপকূলীয় এ জনপদকে লবণাক্ততার করাল গ্রাস থেকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.